খানজাহান আলী কলেজে শিক্ষার্থীদের ভীড়, উদ্বেগ-ক্ষোভ, কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি

0
584

নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনার খানজাহানী আলী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বকেয়া বেতন আদায়ে শিক্ষার্থীদের জরুরীভাবে তলব করার অভিযোগ উঠেছে। ফেসবুক গ্রুপ এবং ই-মেইলের মাধ্যমে জরুরী তলবের এমন নোটিশ দেয়া হয়েছে। ফলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েও অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক হাজির হয়েছেন। এদিকে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিক্ষার্থীদের এনে জড়ো করা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয়রা। আইনশৃংখলা বাহিনীর সহায়তায় তাৎক্ষণিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি করেন তারা।

সূত্রমতে, নগরীর বয়রা মোড়স্থ খানজাহানী আলী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপে এক জরুরী নোটিশ প্রদান করা হয়। সেখানে বলা হয়, বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের আগামী ২৭ জুন ২০২০ইং তারিখে সকাল ১০টায় কলেজে আসতে হবে। কলেজে এসে অবশ্যই বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে হবে। কলেজ স্টেটমেন্ট ফরম পূরণ করতে হবে। যেসব শিক্ষার্থীর ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয়নি, তাদের ২৮ জুন অগ্রণী ব্যাংক বয়রা শাখায় ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হবে। এজন্য ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, জন্ম নিবন্ধন ফটোকপি, নমিনির ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র ফটোকপি আনতে হবে।

১৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মোর্শেদ আহমেদ মণি বলেন, খুলনায় দিনদিন করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব বেড়েছে। সেই সাথে বাড়ছে করোনায় মৃত্যু এবং আক্রান্ত’র সংখ্যাও। সেই সময় সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চূয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, যশোরসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিক্ষার্থীদের এনে জড়ো করা হচ্ছে। কারণ বকেয়া বেতন আদায় এবং উপ-বৃত্তির টাকা প্রদান করা হবে। খানজাহান আলী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয়ের এমন কর্মকান্ড নিতান্তই উদ্বেগজনক। ওই প্রতিষ্টানে আগত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরাই এমন উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার শংকা বাড়িয়েছেন। এমতাবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তোলেন তিনি।

১৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান জমাদ্দার বলেন, যেখানে গোটা পৃথিবীজুড়ে মহামারী চলছে, সেখানে আজ এই শিক্ষা প্রতিষ্টানটিতে মানুষের ভীড় দেখে বিস্মিত হই। কৌতূহল নিয়ে এগিয়ে যাই এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানতে পারি, এখানে বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা এসেছেন। তবে প্রতিষ্ঠানটির কর্মরতরা বলছে, আমরা শিক্ষার্থীদের আসতে বলিনি। সরকারি সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এমন কর্মকান্ডের জন্য প্রতিষ্টানটির বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি তোলেন তিনি।

সাতক্ষীরা থেকে আগত এক অভিভাবক পাপ্পু জানান, তিনি তার ছোট ভাইয়ের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার জন্য এসেছেন। তার ভাই এখন সাতক্ষীরায় অবস্থান করছে। জরুরীভাবে বেতন পরিশোধের নির্দেশনা রয়েছে। তাই এখানে আসা।

নড়াইল থেকে আগত আরেক অভিভাবক জানান, তার ছেলে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত। বৃত্তির অর্থ পেতে তার একটি একাউন্ট খোলার প্রয়োজন। সেই নির্দেশনা ই-মেইল কর্তৃক পাঠানো হয়েছে। জরুরী এমন নোটিশ পেয়ে সন্তানকে নিয়ে এসেছেন।

যশোর থেকে আগত এক ২য় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী জানান, স্টেপ এর বৃত্তির অর্থ পাওয়ার জন্য ফরম পূরণ এবং বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য এসেছেন। একই তথ্য দিলেন তার সাথে আগত আরও দুজন।

কুষ্টিয়া থেকে আগত এক মেয়ে শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাদেরকে জরুরীভাবে তলব করা হয়েছে। কারণ স্টেপ এর অর্থ প্রদান করতে ফরম পূরণ করা লাগবে। বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে হবে। সে আরও জানান, তার আরও কয়েক সহপাঠী বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ বেতন পরিশোধ না হলে পরীক্ষায় অংশ নেয়া এবং বৃত্তির টাকা পাওয়া অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।

খানজাহান আলী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ বলেন, তার প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের কোন নোটিশ দেয়া হয়নি। কে বা কারা ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে এমন কাজ করেছে, তা তার জানা নেই।