কপোত-কপোতীদের অশ্লীলতা চলে রুপসা রিভার পার্ক অ্যান্ড ভূতের আড্ডায়

0
3905

ফকির শহিদুল ইসলামঃ

কপোত-কপোতীদের অশ্লীল আড্ডার নাম রুপসা রিভার পার্ক অ্যান্ড ভূতের আড্ডা । রুপসা নদীর তীর ঘেষে প্রকৃতির মনোরম পরিবেশকে কেন্দ্র করে ভূতের আড্ডা নামক রিভার পার্কটি গড়ে উঠলেও পার্কটির ভিতরের পরিবেশ কপোত কপোতীর জুটি ছাড়া জমে না সে আড্ডা। রুপসা রিভার পার্ক অ্যান্ড ভূতের আড্ডায় খুলনা জেলা জেলা ও মহানগরীর উঠতি বয়সের তরুন তরুনীরা স্কুল-কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে নিজেদের ভব্যিস্বতকে অন্ধকারে নিয়ে যাচ্ছে। ভূতের আড্ডায় রাত হলেই চলে যাত্রার নামে অশ্লীল পুতুল নাচ সাথে বিভিন্ন আইটেমে রম রমা জুয়ার আসর । আর এই জুয়ার আসরের মুল হোতা হচ্ছে এক সময়ের পাসপোটের দালাল স্বপন,আবুল কালাম । এরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রশাসন যন্ত্রকে ম্যানেজ করে ভুতের আড্ডার স্বাভাবিক পরিবেশকে করেছে বিনষ্ট । তাদের নিজের পকেট ভারি করতে মাদক ব্যাবসা,নারী ব্যাবসা,ও জুয়ার আসরের কারনে ওই এলাকায় চুরি,ছিনতাইর মত ঘটনা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । তাদের এ অপকর্মে স্থানীয় অধিবাসীদের ক্ষোভ থাকলেও তারা ক্ষমতাসীন লোকদের ছত্র ছায়ায় এ কাজ করায় তারা দেখেও না দেখার ভান করতে হচ্ছে । কেননা তাদের বিরুদ্ধে কোন টু শব্দ করলে তাকে মিথ্যা মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, বটিয়াঘাটার মাথাভাঙ্গা এলাকায় রূপসা রিভার পার্ক অ্যান্ড ভূতের আড্ডা যেখানে প্রতিনিয়ত আড্ডা দিচ্ছে উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী নারী-পুরুষ। এ পার্কের গেট এর সামনে রয়েছে দক্ষিণ মাথাভাঙ্গা আকুঞ্জি জামে মসজিদ। তারপরও থেমে নেই দিনের বেলায় বেহায়াপনা, রাতের জুয়া, অশ্লীল নৃত্য আর যাত্রা। পার্কে শেষ রাত পর্যন্ত চলে লাউড স্পিকারে মিউজিক। পার্কের মধ্যে রয়েছে মাত্র ৫-৬টি গেমস্ (রাইডার)। রাস্তার গা ঘেঁষে সুউচ্চ পাচিলের গেট থেকে মাথা নুয়ে ঢুকতেই দেখা মিলবে ডান পাশে ছোট একটি দোকান। যেখানে আপনার প্রত্যাশার অনেক কিছু মিলবে। রয়েছে ভূতের আকৃতির সাথে আওয়াজ। পাশে কবুতর, তুত পাখি, চিনা হাঁস এবং বানর। রয়েছে উচ্চ স্টেজ তারপর থেকে শুরু। কপোত-কপোতীদের বসার ২৮টি স্পেশাল টং ঘর। পার্কে প্রবেশের মূল্য ২০ টাকা কিন্তু এ এলাকায় ঢুকতে প্রতিজনকে দিতে হবে ১শ টাকা। যেখানে সকল ভূত/প্রেত আর পরীরা জোড়ায় জোড়ায় মিলিত হয় বাক্যহীন আড্ডায়। মশারীর নেট দিয়ে বিশেষ সুবিধাযুক্ত (দৃষ্টির আড়াল করার) এক অভিনব পদ্ধতি রয়েছে এ টং ঘরের পাশ দিয়ে। সেখানেই আপত্তিকর অবস্থায় হচ্ছে ভূতের আড্ডা। কেউ কেউ রয়েছে স্কুল-কলেজের ড্রেস পরিহিত অবস্থায়। কেউ কেউ টং ঘরে এসে পাল্টে নিচ্ছে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক ড্রেস। পার্কের সকল স্থানে কিছুক্ষণ পর পর দেখা মিলবে ৪ ফিট লম্বা বাঘের ড্রেসে মুখোশধারী ভূতের সাথে।
এ এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পার্কের সামনে মসজিদ, পাশে রয়েছে প্রশাসনের তিন বাহিনীর তিন অফিস। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। থানা-ফাঁড়িকে ম্যানেজ করে এসব বেহায়াপনা চালাচ্ছে তারা।
মসজিদ কমিটির সদস্যরা বলছেন, আমরা কথা বলতে পারছি না। কারণ পার্কের মালিকপক্ষের ক্ষমতা রয়েছে। কখন আবার আমাদেরকে জামাত-শিবির বানিয়ে না ফেলে। লবণচরা ফাঁড়ির ইউসুফ দারোগা রাতে এসে নিজেই ঘোরাফেরা করে চলে যায়।
বয়রা বৈকালী এলাকার জিহাদ হোসেন জানান, আমাদের ভাল লাগে তাই আসি। কারোতো কোনো অসুবিধা করি না। আমরা একটু ঘুরে-ফিরে চলে যাব। জায়গাটা নিরিবিলি।
রূপসা ব্রিজ এলাকার দোকানদার মোঃ খোকন জানান, প্রায় ১২-১৫ দিন ধরে রাতে জুয়া, যাত্রা, অশ্লীল নৃত্য হচ্ছে। আমি একবার গিয়েছি। সেদিন যাত্রার সময় ফাঁড়ির ইউসুফ দারোগা পার্কের ভেতরে ছিল। শুনেছি ঈদের পর আবারও নতুন যাত্রা নিয়ে আসবে পার্কে।
এ পার্কের সামনে দিয়ে যাতায়াত করে স্কুলগামী কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা। এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন এলাকার অভিভাবকরা। দশগেট এলাকার এক অভিভাবক মোঃ রাশেদ জানান, ছেলে-মেয়েরা এ পার্কের সামনে দিয়ে যাতায়াত করে। পার্কের দুই পাশে কোনো ওয়াল নেই। সেখান থেকে অনেক কিছু দেখা যায়। ছেলে-মেয়েদের কাছে আমাদের ইজ্জত থাকছে না।
রূপসা ব্রিজ রোডের ইজিবাইক চালক মোঃ হান্নান জানান, প্রায় জোড়া নিয়ে ভূতের আড্ডার দিকে যাই। পরিবার নিয়ে যে একবার আসে সে আর কখনও আসে না। যা আসে অল্প বয়সী ছেলে-মেয়েরা। ভেতরে কি আর হবে তাতো বুঝতে পারছেন। প্রশাসনকে ম্যানেজ না করলে কিভাবে চলে। আমার বয়স থাকলে হয়তো আমিও যাইতাম।
খুলনার এক কলেজ ছাত্র মোঃ শাহরিয়ার হোসেন জানান, গিয়েছিলাম ভূতের আড্ডায়। টোং ঘরগুলোর এরিয়াতে পার্কের লোক পাহারায় থাকে। এ এলাকায় কাপোল নিয়ে ঢুকতে হয়। স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা দুপুরের দিকে বেশি আসে। কারণ সেই সময় এলাকা কিছুটা নীরব থাকে। তবে পার্কের সকল সুবিধা নিতে হলে অবশ্যই কাপোল (জোড়া) হতে হয়। এখানে বয়স্করাও আসে। তবে তারাও জোড়া জোড়া।
রূপসা রিভার পার্ক অ্যান্ড ভূতের আড্ডা’র ম্যানেজার রিপন রায় বলেন, এখানে খারাপ কিছু হয় না। মানুষ ঘুরতে আসে ঘুরে আবার চলে যায়। আর মশারীর নেট দেওয়া হয়েছে ভালোর জন্য। এখানে কয়েকদিনের জন্য স্থানীয় কিছু মানুষের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। তারা রাতে গান-বাজনা করেছে।
রূপসা রিভার পার্ক অ্যান্ড ভূতের আড্ডা’র মালিক গোলাম কিবরিয়া (খোকন) জানান, এখানে মানুষ এসে অনেক কিছু দেখতে পারে। খারাপ কিছু হওয়ার প্রশ্নই আসে না। এখানে যাত্রা, অশ্লীল নৃত্য হয়না। রিপোর্টারের কাছে সকল ভিডিও রয়েছে শুনে তিনি জানান, পার্কে এতো কিছু হচ্ছে তা আমার নলেজে নেই।
লবণচরা পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই ইউসুফ জানান, আমার এলাকায় গানের অনুষ্ঠান সেখানে আমাকে দেখতে পারে। আমি ম্যানেজ করার চাকরি না। তিন চারদিন অনুষ্ঠান হয়েছিল এখন শেষ হয়ে গেছে।