কপিলমুনি পুলিশের হাতে মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার দু’সহোদরের মায়ের সংবাদ সম্মেলনের ময়না তদন্ত

0
595

নিজস্ব প্রতিবেদক :


খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি থেকে ২৩ মে’ স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশের হাতে মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার দু’সহোদর অপু রায়হান ও দিপু রায়হান গ্রেফতারের ১০ দিন পর তাদের মা হোসনেয়ারা বেগম নেপথ্যের ঘটনা তুলে ধরে স্থানীয় কপিলমুনি প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ির এসআই অভিজিৎ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাদেরকে গ্রেফতারপূর্বক তড়িঘড়ি করে থানায় নিয়ে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। তার দাবি, ২৩ মে প্রকাশ্য দিবালোকে শ’ শ’ মানুষের সামনে কপিলমুনি সদরের মাছকাটা সংলগ্ন রাস্তা থেকে ফাঁড়ির অভিজিৎ দারোগা তাদের আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়।

ওই সময় জনসম্মুখে পুলিশ তাদের কাছে কোন মাদক দ্রব্য খুঁজে পায়নি বলেও দাবি তার। প্রসঙ্গত, গ্রেফতারকৃত অপু-দিপু সহোদরের বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কানাইদিয়া গ্রামে।

হোসনেয়ারা বেগমের দাবি, তার বড় ছেলে অপু সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা ইজিবাইক সমিতির অধীনে পাটকেলঘাটা রুটের অধিনে ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়া ছোট ছেলে একজন কলেজ ছাত্র। ঈদ উপলক্ষে অপু বাড়িতে এসে ছোট ভাইকে নিয়ে ২৩ মে সকাল ১০ টার দিকে ঈদের বাজার করতে কপিলমুনিতে যায়। এরপর বাজার করে ফেরার পথে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। খবর পেয়ে হোসনেয়ারা দ্রæত কপিলমুনি ফাঁড়িতে গিয়ে তাদের আটকের কারণ জানতে চাইলে এসআই অভিজিৎ থানায় গিয়ে কথা বলার জন্য পরামর্শ দিয়ে দ্রæত দু’টি মোটর সাইকেলযোগে তাদের নিয়ে থানায় চলে যান। এরপর দু’ভাইকে মিথ্যা মাদক মামলায় জেল হাজতে পাঠানো হয়।

বক্তব্যে হোসনেয়ারা বেগম তার স্বামী শেখ শাহাজুল ইসলাম একজন প্যারালাইসিস রোগী বলে জানান।

তবে মাদকদ্রব্যসহ আটক সহোদর অপু-দিপুকে নিয়ে তাদের মায়ের সংবাদ সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে গোটা এলাকায়। তাদের দাবি, আটকের পর থেকে কানাইদিয়া এলাকায় মাদকসেবীদের পদচারণা কমেছে। আগের মত গাঁজার উৎকট গন্ধ পথচারীদের আর দম বন্ধ হচ্ছেনা। গ্রামের মহিলারা মাদকাসক্ত বখাটেদের ভয়ে সবসময় তটস্থ থাকত। তবে তাদের আটকের পর নাকি বদলে গেছে কানাইদিয়ার সামগ্রিক চিত্র। এজন্য তাদের অনেকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে তাদের মায়ের বক্তব্য অনুযায়ী পুলিশ সহোদরকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আটক করে পরে মাদক মামলায় চালান করে। প্রকৃতপক্ষে আটককৃতরা সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বাসিন্দা। আর মাদকদ্রব্যসহ তাদের আটক করা হয়েছে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি থেকে। তাদের সাথে পুলিশের আবার কিসের শত্রæতা? তাছাড়া পুলিশ প্রভাবিত হয়ে তাদের আটক করলেও প্রভাবশালীরাই বা কারা? তাছাড়া ষড়যন্ত্রকারী হিসেবেইে কাউকে চিহ্নিত করা হয়নি বক্তব্যে। মাদকদ্রব্য বহনের খবরে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে আটকের ঘটনা ষড়যন্ত্রমূলক,এমন অস্বাভাবিক দাবির অন্তরালের রহস্যটাই বা কি? এমন নানা প্রশ্ন এলাকাবাসীর মধ্যে বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে।

স্থানীয় নানা সূত্র জানায়,আটক সহোদররা দীর্ঘ দিন যাবৎ চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে বিভিন্ন পর্যায় ও বয়সের মানুষের সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল। প্রশাসনের চোখ এড়াতে তারা কোমলমতি শিশুদেরও ব্যবহার করতো। বিভিন্ন সময় তাদের গ্রেফতারে প্রশাসন অভিযান চালিয়েও ব্যর্থ হয়।

প্রসঙ্গত,গত ২৩ মে পাইকগাছার কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ির এসআই অভিজিত রায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে দুপুর আনুমানিক ১২ টার দিকে কপিলমুনি জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করে। এসময় পুলিশ তাদের কাছ থেকে ৪ বোতল ফেন্সিডিল, ১ শ’গ্রাম গাঁজা ও ৫০ পিচ ইয়াবা উদ্ধার করে। এব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে পাইকগাছা থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে একটি মামলা হয়েছে। যার নং-২৩। তাং-২৩/০৫/২০।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ইতোপূর্বে তাদের মাদকদ্রব্য সরবরাহের খবরে কপিলমুনি ফাঁড়ির চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা এসআই অভিজিত রায় তাদের পিছু নেন। একপর্যায়ে তারা কপোতাক্ষের কপিলমুনি-কানাইদিয়া বাঁশের সাঁকো পার হয়ে কানাইদিয়ায় পার হয়ে যায়। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের পিছু নিলে তাদের কতিপয় সহযোগীরা সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

এব্যাপারে এসআই অভিজিত রায় জানান, আটককৃতরা এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। কপিলমুনি এলাকায় মাদকের বিকিকিনি জিরো টলারেন্সে আসার সুযোগে তারা দীর্ঘ দিন যাবৎ কপোতাক্ষের সাঁকো পার হয়ে কপিলমুনি এলাকায় মাদকদ্রব্য সরবরাহ করে আসছিল। ঘটনার দিন গোপন তথ্যে জানতে পারেন যে, অপু ও দিপু মাদকদ্রব্যসহ কপিলমুনি জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। তাৎক্ষণিক সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তাদের সেখান থেকে আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ৪ বোতল ফেন্সিডিল, ১ শ’গ্রাম গাঁজা ও ৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

সর্বশেষ ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে নিতে আটককৃতদের পক্ষে একটি মহল রীতিমত মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে।