বিএনপি মেয়র প্রার্থী মঞ্জুর আচরণবিধি লঙ্ঘন! তথ্য গোপনের অভিযোগ

0
555

নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নিবাচন নিয়ে ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনীতির মাঠ। একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে মেয়র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ বুধবার (১৮ এপ্রিল) বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ এনে মনোনয়নপত্র বাতিলের দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক।
এদিকে বিএনপি প্রার্থী মঞ্জু বুধবার (১৮ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলনকালে দলীয় প্রতীক ‘ধানের শীষ’ ব্যবহার করায় তার বিরুদ্ধে আচরণ বিধি লংঘনের অভিযোগ ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অবশ্য, স্পষ্টতই এটা আচরণবিধি লংঘন বলেছেন নির্বাচন কর্মকর্তা। এভাবেই বড় দুই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ করছেন।

এনিয়ে সংবাদকর্মীরা তাৎক্ষণিক মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে প্রশ্ন করলেও তার কোন যৌক্তিক প্রতুত্তর মেলেনি। বরং তখন তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের কাজের প্রতি আরও সতর্ক হতে বলেন। অপরদিকে এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলকালাম ঘটনা শুরু হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বিএনপি মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু নিজেই আচরণ বিধি লংঘন করছেন, আবার তিনিই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলছেন। এটি নেহাতই তামাশা ছাড়া অন্য কিছু নয়’।
আবার কেউ লিখেছেন, ‘তিনি খুলনা প্রপার্টিজ নামের একটি কোম্পানীর পরিচালক থাকা স্বত্ত্বেও হলফনামায় উল্লেখ করেননি, উপরুন্তু বলেছেন, তার কোন ব্যবসা নেই। সুতরাং হলফনামায় তথ্য গোপন রেখে মিথ্যাচার করেছেন, তার মনোনয়ণপত্র বাতিল করা হোক।’

এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী বলেন, আগামী ২৪ এপ্রিল প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ হবে। প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রার্থীরা কোন ধরণের সভা, সমাবেশ বা প্রচারণা করতে পারবে না। এছাড়া কোন কর্মসূচিতে প্রতীক ব্যবহার করাও যাবে না। যদি কেউ প্রতীক ব্যবহার করে তা হবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের সামিল। এ বিষয়ে যদি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা অভিযোগ দেন তাহলে আমরা আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ও চেম্বার সভাপতি কাজী আমিনুল হক, বিএনপি মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাঁদা ছোড়াছুড়ির রাজনীতি পরিহারের আহবান জানান। তিনি বলেন, খুলনা শহরে বরাবরই সুষ্ঠ ও পরিছন্ন রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করে আসছে। তবে বিএনপি মেয়র প্রার্থীর, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণ বিধি লংঘনের অভিযোগ এনে এই সুষ্ঠ পরিবেশ বিনষ্ট করেছেনতো বটেই। উপরুন্তু সংবাদ সম্মেলনে তিনি ধানের শীষ প্রতিক ব্যবহার করে নিজেই আচরণ বিধি লংঘন করেছেন। মূলত: তালুকদার আব্দুল খালেকের জনপ্রিয়তার ভয়ে এধরণের কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন’র অভিযোগ এনে নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন বিএনপি প্রার্থী। নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তার আগে তালুকদার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে তিনি হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ আনেন। এদিকে বুধবার বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ এনে মনোনয়নপত্র বাতিলের দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বিরুদ্ধে হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ এনে তালুকদার আব্দুল খালেক বুধবার দুপুরে নির্বাচন আপিল কর্তৃপক্ষ ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আবেদন করেন|

তিনি আবেদনে উল্লেখ করেন, ‘নজরুল ইসলাম মঞ্জু জয়েন্ট স্টক কোম্পানীর নিবন্ধনকৃত খুলনা প্রোপার্টিজ লিমিটেডের একজন শেয়ার হোল্ডার। তিনি ওই কোম্পানিতে ১ হাজার ৪শ’ শেয়ারের মালিক। কিন্তু হলফনামায় তিনি এই তথ্য গোপন করেছেন। ফলে বিধিমালা অনুযায়ী তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হোক।’

এর আগে তালুকদার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে হলফনামায় আয়ের তথ্য গোপন করার অভিযোগ করেন বিএনপির প্রার্থী মঞ্জু। ১৯ এপ্রিল বিকেল ৩টায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আপিল বোর্ডের প্রধান বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া এই অভিযোগের শুনানি করবেন।

উল্লেখ্য, আগামী ১৫ মে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরই বড় দু’দলের মেয়র প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে বাগযুদ্ধে জড়াচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ দলের ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক, বিএনপি মনোনীত নজরুল ইসলাম মঞ্জু, জাতীয় পার্টি মনোনীত এস এম শফিকুর রহমান ওরফে মুশফিকুর রহমান, সিপিবি-বাসদ মনোনীত মিজানুর রহমান বাবু ও ইসলামী আন্দোল মনোনীত মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক।