‘বিডিআর বিদ্রোহের উদ্দেশ্য ছিল সরকার উৎখাত’

0
3285

টাইমস ডেস্ক :
পিলখানা হত্যা মামলার রায় ঘোষণার দ্বিতীয় দিনে পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের উদ্দেশ্য ছিল নতুন একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করার জন্য।’
সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার রায়ের পর্যবেক্ষণে এ কথা বলেন।
পর্যবেক্ষণে তিনি আরও বলেন, ‘সুশৃঙ্খল একটি বাহিনীর হাতে ডাল-ভাত কর্মসূচি দেওয়া ঠিক হয়নি।’
তিনি বলেন, অফিসার ও জোয়ানদের মধ্যে দূরত্ব কমাতে হবে।
পর্যবেক্ষণে সাত দফা সুপারিশও করা হয়।
সোমবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে রায় ঘোষণার দ্বিতীয় দিনে পর্যবেক্ষণ পড়া শুরু করেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। রায় পড়া শেষে দুপুর আড়াইটার পর মূল রায় ঘোষণা করা হবে।
সকালে বহুল আলোচিত বিডিআর বিদ্রোহের সময় হত্যাকান্ডের ঘটনায় করা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা কার্যকরের অনুমোদন চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন এবং খালাস চেয়ে আসামিদের করা আপিলের রায় পর্যবেক্ষণসহ দ্বিতীয় দিনের মতো পড়া শুরু হয়।
আলোচিত এই মামলার রায় পড়া শুরু করলেও এদিন দুই বিচারপতি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন।
বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে এই বেঞ্চের অপর বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী রোববার তার পর্যবেক্ষণ পড়ে শোনান।
১০ হাজার পৃষ্ঠার রায়ে পর্যবেক্ষণ এক হাজার পৃষ্ঠারও বেশি থাকছে বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট। এখন পর্যন্ত পড়া রায়ের পর্যবেক্ষণে নারকীয় এই হত্যাকান্ডকে নৃশংস ও বর্বরোচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আদালত বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন ইপিআর পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সীমান্তরক্ষায় নিয়োজিত এই বাহিনী দেশে-বিদেশে সম্মানের সঙ্গে কাজ করেছে। কিন্তু ২০০৯ সালে পিলখানায় তৎকালীন বিডিআরের কিছু সদস্য আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। এই কলঙ্কচিহ্ন তাদের অনেক দিন বয়ে বেড়াতে হবে।
নানা ঘটনা পর্যালোচনা করে আদালত বলেন, একসঙ্গে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার নজির ইতিহাসে নেই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় মনোবল নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলায় যৌক্তিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। নৃশংস হত্যাকান্ডের পর বিডিআর নাম পরিবর্তন করে বিজিবি নাম ধারণ থেকে শুরু করে সীমান্তরক্ষায় নিয়েজিত এই বাহিনীর পুনর্গঠনের ইতিহাসও উঠে আসে আদালতের পর্যবেক্ষণে।
পিলখানা হত্যা মামলার রায়ে ২০১৩ সালে ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দিয়েছিলেন। এ মামলায ৮৪৬ জন আসামির মধ্যে সাজা হয় ৫৬৮ জনের। তাদের মধ্যে বিচারিক আদালতের রায়ে ১৫২ আসামিকে মৃত্যুদন্ড, ১৬০ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড হয়েছিল। খালাস পেয়েছিলেন ২৭৮ জন।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, এই ঘটনা নজিরবিহীন, এটি নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাকান্ড; যা ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট ও চক্রান্ত হিসেবে ওই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভেঙে দেওয়া, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের হত্যা করে বিডিআরে তাদের আসা নিরুৎসাহিত করা, সেনা ও বিডিআরের মধ্যে সাংঘর্ষিক অবস্থা সৃষ্টি করা, গণতান্ত্রিক সরকারকে বিব্রত করা এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করাই চক্রান্ত ও হত্যাযজ্ঞের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বলেও রায়ের আংশিক পর্যবেক্ষণে উঠে আসে