৩৪ বছরে বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট

0
204

খুলনাটাইমস স্পোর্টস: ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্ম হয় ১৯৭১ সালে। তারও ১৫ বছর পর ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ ওয়ানডে ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশের নাম। এশিয়া কাপের ওই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। শুরুটা হার দিয়ে হলেও তা ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে বাঁকবদলের লগ্ন। ওই দিনটিই বাংলাদেশের ক্রিকেটের স্বপ্ন দেখার সূচনা। সেই থেকে দেখতে দেখতে কেটে গেছে ৩৪ টি বছর। এক-দুই-তিন করে বাংলাদেশ খেলে ফেলেছে ৩৭৬টি ওয়ানডে। অন্য দুই ফরম্যাটের চেয়ে এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ শক্তিশালী দলে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার মোরাতুয়াতে গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর নেতৃত্বেই প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সাত ম্যাচে তার নেতৃত্বে মাঠে নামে দল। গাজী আশরাফ লিপুর নেতৃত্বে প্রথম ম্যাচটিতে আগে ব্যাট করে ৯৪ রানে অলআউট হওয়ার পর বাংলাদেশ হারে ৭ উইকেটে। ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ শ্রীলঙ্কায় প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার পর জয় পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২২ টি ম্যাচ। ১২ বছর পর ১৯৯৮ সালে ভারতের হায়দরাবাদে কেনিয়ার বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জয় লাভ করে। লিপু যা পারেননি, তাই করে দেখিয়েছেন আকরাম খান। যদিও জয়ের পুরো কৃতিত্ব মোহাম্মদ রফিকের। তার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে বাংলাদেশ তাদের প্রথম জয়টি পায়। এর পরেই আস্তে আস্তে বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশের রঙ বদলাতে শুরু করে। কখনো উজ্জ্বল ঝকঝকে আকাশ আবার কখনো বা ঘন কালো মেঘে ঢেকে যাওয়া। এমন পথ চলায় বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল অধিনায়ক সদ্যই সাবেক হওয়া মাশরাফি বিন মুর্তজা। ৮৮ টি ম্যাচ দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জয়ের হাফসেঞ্চুরি পূরণ করে ছেড়েছেন নেতৃত্ব। সবমিলিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৪জন অধিনায়ক বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রথম অধিনায়ক ছিলেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। এরপর একে একে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মিনহাজুল আবেদীন, আকরাম খান, আমিনুল ইসলাম, নাঈমুর রহমান, খালেদ মাসুদ, খালেদ মাহমুদ, হাবিবুল বাশার, রাজিন সালেহ, মোহাম্মদ আশরাফুল, সাকিব আল হাসান, মাশরাফি মুর্তজা ও মুশফিকুর রহিম। এই মুহূর্তে দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবালের কাঁধে বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের দায়িত্ব। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তিনটি ওয়ানডেও খেলে ফেলেছে। অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির পর ওয়ানডেতে দলকে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন হাবিবুল বাশার। ৬৯ ম্যাচে ২৯ জয়ে বাশার দ্বিতীয় সেরা অধিনায়ক। সাকিব আল হাসান ৫০ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ২৩ জয়ে তৃতীয় সেরা অধিনায়ক। বাংলাদেশ ১৯৮৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরুর ১৩ বছর পর প্রথমাবারের মতো বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায়। ১৯৯৯ সালে নিজেদের প্রথম আসরে স্কটল্যান্ডকে হারানোর পর শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বক্রিকেটে তাক লাগিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ওই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স-ই ভূমিকা রাখে ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তিতে। অবশ্য অন্য দুই ফরম্যাটের তুলনায় একদিনের ক্রিকেটেই বেশি উজ্জ্বল বাংলাদেশের পারফরম্যান্স। সবমিলিয়ে ৩৭৬ ওয়ানডে খেলে জয় ১২৮ ম্যাচে। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি জিতেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তাদের বিপক্ষে ৭৫ ওয়ানডে খেলে ৪৭টিতে জয়ের স্বাদ নিয়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। বড় দলগুলোর মধ্যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় ১০টি ওয়ানডেতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লাল-সবুজদের জয় ১৫ ম্যাচে। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাতটি, ভারতের ও পাকিস্তানের বিপক্ষে পাঁচটি, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছে চারটি করে ম্যাচ। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে খেলার রেকর্ড সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার ও উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমের। মাশরাফির মতো মুশফিকও ম্যাচ খেলেছেন ২১৮টি। তামিম ইকবাল খেলেছেন ২০৭টি ম্যাচ। সাকিব আল হাসান ২০৬টি এবং মাহমুদউল্লাহ ১৮৮ টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলেছেন। এই সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি তামিমের (১৩টি)। সাকিবের ৯টির পাশাপাশি মুশফিকের সেঞ্চুরির সংখ্যা ৭টি। দীর্ঘ ৩৪ বছরে প্রাপ্তির খাতাটা খুব বেশি সমৃদ্ধ না হলেও তামিম-সাকিব-ও মুশফিকদের মতো ক্রিকেটাররা দেশের বড় সম্পদ হয়ে উঠেছেন। আর ২০১৫ বিশ্বকাপের পর দলে সুযোগ পাওয়া লিটন-সৌম্য-মোস্তাফিজ-মিরাজরা নিজেদের তৈরি করছেন। অবশ্য ১৯৯৯ সালে প্রথম বিশ্বকাপে বাজিমাত করার পর থেকে সব বিশ্বকাপেই অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ মঞ্চে বাংলাদেশের সাফল্যও কম নয়! প্রথম আসরে পাকিস্তানকে, ২০০৭ সালে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে, ২০১১ ও ২০১৫ সালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রমাণ রেখেছে বড় দলগুলোর বিপক্ষে কম যায় না তারা। ২০১৯ বিশ্বকাপে তো প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দারুণ জয় পেয়ে তিনটি ম্যাচ জিতলেও বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ভালোভাবে টুর্নামেন্টটা শেষ করতে পারেনি। বিশ্বকাপের বাইরে অবশ্য প্রাপ্তিটা আরও বেশি। ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডের মতো দলগুলোকে হোয়াইটওয়াশ করার কৃতিত্ব দেখিয়েছে। ২০১২ সালে এশিয়া কাপের পর আরও কয়েক বার এয়িশা কাপের ফাইনাল খেলা বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম সাফল্য। যদিও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটের ৩৪ বছর পূর্তি হিসেব করলে এটা হতাশার গল্পই। হয়তো অচিরেই দূর হবে তা!