২০২১ সালে দেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত : প্রধানমন্ত্রী

0
345

খুলনা টাইমস ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকারের লক্ষ্যই হচ্ছে এমন একটি দেশ গড়ে তোলা যেখানে কোন গৃহহীন থাকবে না, কেউ না খেয়ে-বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না এবং সকলেই সুন্দরভাবে জীবন যাপনের সুযোগ পাবে।
তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবো, সে সময়ে বাংলাদেশ হবে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ। আর ২০৪১ সালে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে, সেভাবেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশব্যাপী ৪র্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনকালে একথা বলেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই যে বাংলাদেশ খাদ্য, শিক্ষা এবং মেধা সহ সকল ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীল হবে। সেই লক্ষ্যে দেশকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নেওয়ার জন্যই আমরা ‘ডেল্টা প্লান-২১০০’ প্রণয়ন করেছি। যাতে করে উন্নয়নটা টেকসই হতে পারে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এই অগ্রযাত্রা যেন ব্যাহত না হয়, এটা যেন অব্যাহত থাকে।
নতুন প্রজন্মেরই এখন দায়িত্ব বাংলাদেশ এগিয়ে নেয়ার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত এবং তারাই দেশকে আগামীতে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আজকের তরুণ আগামী দিনে হবে এদেশের কর্তধার। কাজেই আমাদের সকল আয়োজন হচ্ছে এই তারুণ্যের জন্য। তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন সেই উন্নয়ন সম্পর্কে মানুষকে ওয়াকিবহাল করা এবং এর সুফলটা যেন তারা ভোগ করতে পারে। এরমাধ্যমে নিজের ভাগ্য গড়তে পারে সে বিষয়টা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
‘তরুণ প্রজন্ম লেখাপড়া শিখে স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজেদের মেধা দিয়ে নিজেদের ভাগ্য যেমন গড়বে তেমনি দেশের ভাগ্যও গড়বে। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের এই দেশব্যাপী উন্নয়ন মেলার আয়োজন’, -বলেন প্রধানমন্ত্রী।
উন্নয়ন মেলা তরুণ প্রজন্মের জন্য উৎসর্গ করে তিনি বলেন, তারা যেন নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়তে পারে। সন্ত্রাস, মাদক বা জঙ্গিবাদ- এসব থেকে মুক্ত থেকে তাঁরা নিজেদের সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। তাহলে তারা নিজের ভাগ্য যেমন গড়তে পারবে, দেশকেও তেমনি কিছু দিতে পারবে। তাদের পরিবারগুলোও সুন্দরভাবে বাঁচবে।
তাঁর সরকার উন্নয়নকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদম গ্রামীণ জনগণও যেন নিজের ভাগ্যটা নিজে গড়তে পারে সেজন্য তাঁর সরকার একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। এর মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীরও সেখানে ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, উন্নয়ন মেলার মাধ্যমে দেশের জনগণের জন্য কি উন্নয়ন আমরা করলাম তা জানতে পারবে। এই উন্নয়নের মধ্যদিয়ে নিজের ভাগ্যকে কিভাবে তাঁরা গড়তে পারেন সেই সুযোগটাও তারা পাবেন এবং সেই সুযোগটা তারা গ্রহণ করবেন।
ভিডিও কনফারেন্সের সঙ্গে ৪টি উপজেলা এবং দেশব্যাপী ৫ শতাধিক বিভিন্ন বিভাগীয় শহর, জেলা-উপজেলার উন্নয়ন মেলা এবং ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার সংযুক্ত ছিল।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং গত ১০ বছরে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ভিডিও চিত্র উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।
উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনের পর বরগুণা জেলার আমতলী উপজেলা, বাঘেরহাটের ফকিরহাট, নড়াইল জেলার লোহাগড়া এবং রংপুরের পীরগঞ্জের স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী ।
শিক্ষা সমাপ্ত করার পর তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থান এবং আয় রোজগারের পথ ও পাথেয়’র দিক নির্দেশনা প্রদানে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে এবার নিয়ে ৪র্থ বারের মত সারাদেশে উন্নয়ন মেলার আয়োজন করেছে সরকার। ঢাকার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণ এবং প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় তিনদিন ব্যাপী এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের জাতীয় উন্নয়ন মেলায় এসএসসি (মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষার্থীদের জন্য থাকছে ‘অনলাইন ডিজিটাল পাঠ সহায়িকা’। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য এই ‘অনলাইন ডিজিটাল পাঠ সহায়িকা’ উপহার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখলাম-পাসের হার বৃদ্ধি পেলেও সেখানে কয়েকটি বিষয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা একটু পিছিয়ে আছে। এই আধুনিক যুগে, ডিজিটাল যুগে কেউ পিছিয়ে থাকুক সেটা আমরা চাই না। সেজন্য এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য আমার পক্ষ থেকে একটা উপহার- সেটা হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের জন্য বাংলা, ইংরেজি ও গণিতে অনলাইন ডিজিটাল পাঠ সহায়িকা। অর্থাৎ অনলাইনে তারা এ বিষয়গুলোতে শিক্ষা নিতে পারবে সে ব্যবস্থা আমরা করেছি।’
পর্যায়ক্রমে বিজ্ঞান বিষয়সহ বিভিন্ন শ্রেণির জন্য বিভিন্ন বিষয়ে অনলাইন ডিজিটাল পাঠ সহায়িকা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যায়ক্রমে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে ডিজিটাল পাঠ সহায়িকা করে দিবো, যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা যেকোন বিষয় অনলাইনে পেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে ইন্টারনেট, ডিজিটাল সেন্টার চালুসহ কম দামে সকলের হাতে ল্যাপটপ-স্মার্ট ফোন তুলে দিতে সরকারের উদ্যোগের তথ্য তুলে ধরেন।
বিভিন্ন ভাষা শিখতে ‘অ্যাপস’ তৈরির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শুধু ইংরেজি না ১০টি ভাষায় আমরা একটা অ্যাপস তৈরি করে দিয়েছি। যা অনলাইনে পাওয়া যাবে। এখান থেকে বিভিন্ন ভাষা শেখা যাবে। বিদেশে চাকুরি করতে চায় তারা এখান থেকে ভাষা শিখে নিতে পারবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ছেলেমেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। উন্নত শিক্ষা গ্রহণ করে তারা যেন দেশে ও বিদেশে সুনাম অর্জন করতে পারে, আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। মেধাবী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় যেন কোনও সমস্যা না হয়, সেজন্য আমরা বৃত্তি-ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। দেশের প্রতিটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, তাদের জীবনমান উন্নত ও তাদের সুন্দর জীবন উপহার দেয়াই তাঁর সরকারের লক্ষ্য।
প্রথম মেয়াদে আওয়ামী লীগের শাসনকে স্বর্ণযুগ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমরা পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলাম। বাংলাদেশ তখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন ছিল। সাক্ষরতার হার ও বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং রাস্তাঘাট ব্যাপকভাবে তৈরি করেছিলাম।
আওয়ামী লীগ সভাপতি অভিযোগ করেন, ২০০১ সালে বেশি ভোট পেয়েও কোনো একটি চক্রান্তের কারণে তারা ক্ষমতায় আসতে পারেন নি। ফলে আরো সাতটি বছর মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে ফের জনগণের ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। আমরা ক্ষমতায় এসে মানুষের জন্য স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছি।
সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয় তিনি দিয়ে গেছেন। জাতির পিতার যে আকাক্সক্ষা ছিল, সেই আকাক্সক্ষা পূরণেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা সবসময় নিজের শ্রম দিয়ে, মেধা দিয়ে এ দেশকে গড়ে তুলতে চাইতেন। তিনি চাইতেন আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। তিনি বলতেন, ‘ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না। বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে না, ভিক্ষা করে চলবে না।’