১৯ বছর ধরে বাজার বহন করে সংসার চালাচ্ছেন মোরেলগঞ্জের আব্দুর রহমান

0
565

মেজবাহ ফাহাদ, মোরেলগঞ্জ:
উনিশ বছর ধরে মানুষের বাসার বাজার বহন করে সংসার চালাচ্ছেন মোরেলগঞ্জের আব্দুর রহমান (৬১)। মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৪ নং বারইখালী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুর রহমান,সংসারে দুই সন্তান ও স্রীকে নিয়ে অসহায় মানবেতর জীবন কাটছে তার,আব্দুর রহমান প্রতিদিন সকালে চার কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে বাজারে আসেন মধ্যরাত অবদি ঘরে ফিরেন। সারাদিন বাজারে ঘুরে ঘুরে মানুষের বাসার বাজার বহন করেন আর তা থেকে তার দৈনিক উর্পাজন ১০০ থেকে ১২০ টাকা।
কথা হয় অসহায় আব্দুর রহমানের সাথে, তার পরিবারের খবর জানতে চাইলে তিনি আবেগ আপ্লূত হয়ে পরেন, দু’চোখ দিয়ে জল ফেলে দিয়ে বলতে থাকেন (তার ভাষায়) প্রায় ১৯ বছর ধরে মোরেলগঞ্জ বাজারের মানুষের বাসার বাজার টানি, কেউ ১০ টাহা কেউ ৫ টাহা দেয়, দিন শেষে সব টাহা এক করলে ১০০ টাহাও হয় না, ঘরে অসুস্থ স্ত্রী, একটা পোলা হে বেকার, মাইয়াডা বিইয়া দিয়ে দিছি। বয়স ইইয়া গেছে এখন আর পারি না, শরীরে নানা রোগ বাসা বানছে, এক হাত ভাঙ্গা নিয়ে এখনো বাজার টানছি
৬১ বছর বয়সী আব্দুর রহমান এখন বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত, সংগ্রামী জীবনের সাথে তাল মিলিয়ে আজ অবদি চলে আসছে, সময়ের বিবর্তনে কোন পরিবর্তন হয় নি তার, তিনি দাবি করছেন সরকারের কোন সহযোগিতাও নাকি পায় নি সে, এখনো প্রতিনিয়ত জীবনের সাথে যুদ্ধ করে চলছেন আব্দুর রহমান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখলাম আব্দুর রহমানের ঘরের চালের টিন ফুটো, বৃষ্টির দিনে মেঝেতে পানি পড়ে। বাশ বেতের মাটির বেড়া ভেঙ্গে হেলে পড়েছে। বেড়ার ফাক ফোকর দিয়ে এখন প্রতিনিয়তই কনকনে শীতের ঠান্ডা বাতাস আসা যাওয়া করে ঘরের ভেতরে। ঘরটিও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় ধসে পড়ে বড় ধরনের অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এই ভাঙ্গা ঘরটিতে স্ত্রী সন্তানসহ বসবাস করে আসছে আব্দুর রহমান। মাটিতে হাস-মুরগি গবাদিপশুসহ কোনোরকমে গাদাগাদি করে থাকছেন মোরেলগঞ্জ উপজেলার বারইখালী ইউনিয়নের ০৩ নং ওয়ার্ডের কাশমীর গ্রামের বাসিন্দা অসহায় এই পরিবারটি। ১৫ বছর ধরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকছেন এই ভাঙ্গা ঘরে। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে মাথাগোঁজার ঠাঁই একমাত্র এই ঘরটি মেরামত করতে পারছেন না তিনি। নতুন ঘর নির্মাণের সামর্থ্যও নেই তার। নিরুপায় হয়েই ভাঙ্গা ঘরে রোদ বৃষ্টি ঠান্ডায় কষ্টে দিন কাটছে এই পরিবারটির। টাকার অভাবে নাকি স্ত্রীর চিকিৎসাও করাতে পারেননি আব্দুর রহমান।হত-দরিদ্র আব্দুর রহমান জানান, নিজেই খেতে পারিনা, সন্তানদেরকে ঠিকমত খাওয়াতে পারিনা। চিকিৎসা খরচ চালাবো কিভাবে আর ভাঙ্গা ঘর মেরামতইবা করব কিভাবে? আল্লাহ ছাড়া আমার আর কেউ নাই।
তার স্ত্রী জানান, সারাদিন পরের বাড়িতে কাজ করে যা পাই তা দিয়ে কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে আছি। সবসময় সন্তানদের মুখে খাবার দিতে পারিনা। ঘরে থাকার জায়গা নেই। ভাঙ্গা ঘর মেরামত করাও সম্ভব হচ্ছেননা। অন্তত মাথাগোঁজার ঠাঁই টুকু পেলে খেয়ে না খেয়ে অসুস্থ স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে বাকিদিনগুলো কাটিয়ে দিতে পারতাম। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এ প্রতিবেদককে জানান, পরিবারটির একদম গরীব ও অসহায়। আমি তাদেরকে দুইবছর মেয়াদী একটা ভিজিডি কার্ড করে দিয়েছিলাম যার মেয়াদ শেষ,নতুন করে সরকারী যে কোন একটি ভাতা করে দিবেন বলে জানান তিনি। এছাড়াও তাদের খোঁজখবর নিচ্ছি,একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে মোরেলগঞ্জ উপজেলায় নিয়োজিত সরকারের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে এই অসহায় পরিবারটিকে একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার দাবি জানাই।