হাঁসপালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছে যুবক ও নারীরা

0
874

খুলনাটাইমস অর্থনীতি : হাঁসের খামার গড়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন মেহেরপুরের যুবক ও নারীরা। যাদের অনেকেই বিদেশ ফেরত। বিদেশ ফেরৎ খামারীরা বলছেন, বিদেশ বিঁভুইয়ে তারা যে আয় করতেন এখন তার পাঁচ গুণ আয় করছেন নিজ দেশে হাঁসের খামার গড়ে। যুবকরা আরও জানাচ্ছে, বেকারত্ব দূর করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে অনেক মানুষ দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। তাদের মধ্যে কিছু মানুষের স্বপ্ন পূরণ হলেও বেশিরভাগ মানুষ কষ্টের মধ্যে থেকে প্রবাস জীবনযাপন করছেন। বিদেশে দেয়া মেধা আর শ্রম দেশের মাটিতে দিয়ে বিদেশের মতো সফলতা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন খামারীরা। বর্তমানে খামারীদের দেখা দেখি পারিবারিকভাবেও অনেক দুস্থ পরিবার হাঁসপালন শুরু করেছেন। হাঁসপালন করে ডিম ও মাংসের চাহিদা মেটাতে গৃহিনীদের মধ্যে পাতিহাঁস ও রাজহাঁস পালনে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। আর হাঁস পালনেই তারা ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ এমনকি পরিবারের টুকিটাকি খরচের যোগান দিচ্ছে। মেহেরপুরের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে হাঁসপালনে অবদান লক্ষ্য করার মতো। গাংনী উপজেলার চেংগাড়া, বানিয়াপুকুর, গোপালনগর, সাহারবাটি, ভাটপাড়া, নওপাড়া, জোড়পুকুরিয়াসহ প্রায় ৫০ টি গ্রামে পাতি হাঁস, রাজহাঁস পালন দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীর পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে এবং যেসব এলাকায় পুকুর খাল ডোবা রয়েছে সেসব এলাকায় মহিলারা ডিম এবং মাংসের চাহিদা মিটিয়ে হাত খরচ মিটান এমনকি স্বামী সংসারে সহযোগিতা করতে রাজহাঁস পালন করে ভূমিকা রাখছে। পাতিহাঁস আকারে ছোট কিন্তু রাজহাঁস বেশ বড়। পাতিহাঁসের সাধারণত ২ থেকে আড়াই কেজি মাংস হয় পক্ষান্তরে রাজহাঁসের ৪ থেকে ৬ কেজি মাংস হয়ে থাকে। বিভিন্ন গ্রাম ও হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, একটি পাতিহাঁসের বাজার মূল্য ৩ শ’ টাকা থেকে ৫শ’ টাকা। অন্যদিকে রাজহাঁসের বাজার মূল্য ৮শ’ টাকা থেকে ১২ শ’ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাশাপাশি পাতিহাঁসের ডিমের দাম ৮ থেকে ১০ টাকা। অন্যদিকে রাজহাঁসের ডিমের দাম ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা। চেংগাড়া গ্রামের সালমা খাতুন জানায়, রাজহাঁসের একজোড়া বাচ্চার দাম ৪শ’ টাকা। একবছর ভালভাবে লালনপালন করলে ১০/১২ টি ডিম দেয়। হাঁস পালন করে আমরা ডিমের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে সংসার খরচের যোগান দিতে পারি এমনকি ছেলে মেয়েদের লেখাড়ার খরচ যোগাতে পারছি। গ্রামের হাঁস পালনকারীদের অনেক মহিলা জানায়, আমরা অর্থের অভাবে ফার্ম হিসেবে হাঁস পালন করতে পারি না। অনেকে সখের বশে রাজহাঁস পালন করে থাকি। কয়েক বছর আগে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পাড়ি দিয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাইয়ে তিনবন্ধু। সেখানে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে না পেরে ফিরে আসেন দেশে। ইউটিউব ঘেঁটে হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগলের মতো সম্ভাবনাময় প্রাণিজ খামার করার ধারণা নিয়ে সদর উপজেলার গহরপুর গ্রামে গড়ে তোলেন হাঁসের বিশাল খামার। বছরখানেক আগে তিনজনের প্রত্যেকে ছয় লাখ টাকা করে ১৮ লাখ টাকা দিয়ে জমি লিজ, হাঁস পালনের ঘর ও হাঁসের বাচ্চা ক্রয়সহ হাঁসের খামার করেন। খামারে তিন হাজার হাঁসের মধ্যে গড়ে ২ হাজার ৩০০ হাঁস প্রতিদিন ডিম দিচ্ছে। ডিম বিক্রিতেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ বাচ্চা উৎপাদনের হ্যাচারি মালিকরা খামার থেকেই ডিম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা করে। সে হিসাবে প্রতিদিন ২৩ হাজার টাকার ডিম বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে। হাঁসের খাবার বাবদ রোজ ব্যয় হয় ১২ হাজার টাকা, এক হাজার টাকা অনান্য খাতে খরচ হিসেবে বাদ দিলেও প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে ঘরে আসছে। খামার পরিচর্যার জন্য দু’জন নারী শ্রমিক রয়েছেন। তাদের মাসে ৬ হাজার করে ১২ হাজার টাকা বেতন দিতে হয়। এ খামার মালিকদের একজন মাহবুবুর রহমান বলেন, বিদেশ মানেই টাকা- এ ধারণা সঠিক নয়। পরিশ্রম করলে দেশেই বিদেশের মতো আয়-রোজগার করা সম্ভব। প্রথম ছয় মাস কষ্ট হলেও এখন সাফল্য ধরা দিয়েছে। সাফল্যের এ ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা নতুন নতুন পরিকল্পনা করছি। জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ আমাদের ফার্ম দেখতে আসে। পরামর্শ চায়। আমরা খুশি মনে তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিই। অপর খামারি সাহারুল ইসলাম বলেন, হাঁসের রোগবালাইয়ে প্রাণিসম্পদ বিষয়ে অভিজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাইয়ে থাকি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হাঁস পালনের খামারিদের সব সময় পরামর্শ দেয়া হয়। সীমিত জনবলেও বিভিন্ন প্রাণির চিকিৎসা ও পালন পদ্ধতি বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। হাঁসের খামার গড়ে অনেকে স্বাবলম্বী হওয়াতে এখন পারিবারিকভাবেও হাঁসপালন বেড়েছে।