হঠাৎ করেই বাড়ছে পেঁয়াজের দাম দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে

0
178

পেঁয়াজের বাজার বেশকিছু দিন ধরে সহনীয় পর্যায়ে ছিল। স্বস্তি ফিরে এসেছিল ক্রেতাদের মধ্যে। কিন্তু রাজধানীর বাজারগুলোতে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। একদিনে খুচরা বাজারে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। আর পাইকারি বাজারে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৮ টাকা পর্যন্ত। মানভেদে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৮ টাকা। যা গত শুক্রবারও ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে ছিল। হঠাৎ পেঁয়াজের এই দাম বাড়ার কারণ হিসেবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বাজারে এখন দেশি যে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, তা মুড়ি কাটা। এই পেঁয়াজের সরবরাহ আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তবে ১৫-২০ দিন পর হালি পেঁয়াজ (ভালো মানের) ওঠা শুরু হবে। তখন পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। অপরদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পেঁয়াজের সরবরাহ কমার পাশাপাশি রোজার সময় এগিয়ে আসাও পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ। তাদের অভিমত, মাসখানেক পরেই রোজা শুরু। এই রোজাকে কেন্দ্র করেই আগেভাগে এখন পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে নেয়া হচ্ছে। যাতে রোজার সময় কেউ অভিযোগ করতে না পারে রোজায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এই ধরনের অভিমতের ভেতর কতটা যুক্তি রয়েছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে শীতকালেই অধিকাংশ পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশে তেমন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় না বললেই চলে। যদিও গ্রীষ্মকালে চাষ করার মতো উন্নতজাতের বারি পেঁয়াজ-২ ও বারি পেঁয়াজ-৫ নামের দুটি উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে মসলা গবেষণা কেন্দ্র। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ তেমন জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। আমরা মনে করি, পেঁয়াজের আমদানিনির্ভরতা কমাতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সেদিকেই বিশেষ মনোযোগ দেয়া উচিত। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা গেলে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ দেশেই উৎপাদন করা সম্ভব। তখন আর বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না। প্রকৃত অর্থে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদকারী কৃষকের কোনো লাভ হচ্ছে না। তাদের ঘরে সাধারণ পেঁয়াজ মজুত থাকে না। পেঁয়াজ মজুত থাকে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী ও মজুতদারদের গুদামে। তারা বিশেষ ব্যবস্থায় দেশি পেঁয়াজ কৃষকের কাছ থেকে কিনে মজুত করে রাখে। পেঁয়াজের দাম বাড়ায় তারাই। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে সরকারকে দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে পেঁয়াজের দাম আর বাড়তে না পারে। কারণ দেশে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। আমদানি করা পেঁয়াজও গুদামে পড়ে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো ন্যায়সঙ্গত কারণ নেই। এটা হচ্ছে অসৎ ও অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কারসাজি। প্রতি বছর পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে তারা নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। সবার আগে তাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তাদের মানসিকতার পরিবর্তন যতদিন না ঘটবে ততদিন পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির থাকবেই এবং দেশের জনগণও তাদের কাছে জিম্মি থাকবে। এ ব্যাপারে সরকারের কার্যকর ও কঠোর উদ্যোগই পারে জনগণকে হয়রানি ও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে।