স্বাধীনতাবিরোধীদের রুখতে আবারও নৌকায় ভোট দিন : শেখ হাসিনা

0
619

খুলনা টাইমস ডেস্ক : বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, অগ্নিসংযোগকারী ও তাদের দোসরদের ভোটের মাধ্যমে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ‘ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য’ নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার বিকেলে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা সদরে শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ মাঠে নিজের প্রথম নির্বাচনী জনসভায় এ আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আজকে যারা ওই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, যুদ্ধাপরাধে যাদের সাজা হয়েছে তাদের দোসরকে নির্বাচনে প্রার্থী করেছে, তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী, স্বাধীনতার শত্র“, গণহত্যা পরিচালনাকারী, অগ্নিসংযোগকারী, খুনি-সন্ত্রাসীদের নিয়ে যারা আজকে নির্বাচনের মাঠে নেমেছে তাদের উপযুক্ত জবাব দিতে হবে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে।
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন না থাকায় দলটির প্রায় দুই ডজন নেতা এবার জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন। জোটের প্রার্থী হিসেবে তাদের মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। আবার বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধেছেন এক সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকা গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ কয়েকজন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধীদের আবারও ক্ষমতায়িত হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, যাদের যুদ্ধ করে আমরা পরাজিত করি, জাতির পিতাকে হত্যার পর তাদের ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল। যেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন, তাদের বিচার বন্ধ করে দিয়ে সমস্ত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে তাদেরকে মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, উপদেষ্টা করে লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা তাদের হাতে তুলে দিয়েছিল।
কে দিয়েছিল প্রশ্ন করে তিনি বলেন, সেও নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু সে সব সময় স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। সেনাবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ও সাধারণ জনগণকে হত্যা করেছে। বাংলাদেশকে একেবারে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে কাজগুলো, যে অপকর্মগুলো যে করেছে সে আর কেউ না, জিয়াউর রহমান।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের শাস্তির বদলে ‘পুরস্কৃত’ করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর গর্ব করে যারা বলেছিল, আমরা হত্যা করেছি, কে আমাদের বিচার করবে? তাদেরকে পুরস্কৃত করেছিল। জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, শিশু ও নারীকে হত্যা করেছে, তাদের বিচার না করে বিভিন্ন দূতাবাসে তাদের চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারি করে বিচারের পথ বন্ধ করেছিল।
সে সময় প্রিয়জন হারানোর বিচার চাওয়ারও সুযোগ না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আপনারা একবার ভেবে দেখেন, কারো আপনজন মারা গেলে সবাই বিচার চায়। মামলা করতে পারেন। বিচার চাইতে পারেন।
আর আমরা যারা আপনজন হারিয়েছিলাম, যখন মামলা করতে যাই মামলা করতে দেওয়া হয়নি। কারণ ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল। বিচার করা যাবে না।
বাংলাদেশ যেন আবার স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে না যায় সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, কোটালীপাড়ার মাধ্যমে আমি সমগ্র দেশবাসীকে আহ্বান জানাব, আমরা ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। সেই সময় যেন ওই যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী, খুনি, রাজাকার এবং যারা অগ্নিসংযোগকারী তারা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে। তাহলে তারা দেশকে ধ্বংস করে দেবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে দেবে।
আবার এই দেশ ক্ষুধার্ত হবে, অশিক্ষিত হবে, মানুষের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটবে। মানুষের ভাগ্য নিয়ে যেন আর তারা ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেইজন্য নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জনগণের সেবা করার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান আমি জানাচ্ছি।
এই জনসভার মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর আগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও তার কবর জিয়ারত করেন শেখ হাসিনা। বুধবার বেলা ২টার দিকে সড়ক পথে টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পৌঁছান শেখ হাসিনা। প্রথমেই তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর পরিবার ও দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে কবর জিয়ারত এবং বঙ্গবন্ধুর আত্মার মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত ও দোয়ায় শামিল হন তিনি। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধুর ভাইয়ের ছেলে শেখ হেলাল ও শেখ জুয়েল, শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং আওয়ামী লীগ ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
নিজের জন্মস্থান টুঙ্গীপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা মিলিয়ে গঠিত গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকেই আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শেখ হাসিনা। এ আসন থেকে তিনি সংসদে গেছেন ছয়বার। এবারের নির্বাচনী প্রচারও শুরু করলেন নিজর আসন থেকেই।