সৌম্যর সেঞ্চুরির আগে এবাদতের ৫ উইকেট

0
360

অনলাইন ডেস্কঃ ‘আহত পশু’ তত্ত্বটা বাতাসে ভাসছিল খুব। দক্ষিণ আফ্রিকায় যাচ্ছেতাই ক্রিকেট খেলার পর বাংলাদেশে আহত পশুর মতো প্রতিক্রিয়া দেখাবে—এমন প্রত্যাশা জিম্বাবুয়ে ক্যাম্পের। সে আশঙ্কায় সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের কোচ স্টিভ রোডসও। কিন্তু কাল বিকেএসপির প্রস্তুতি ম্যাচে সে ‘আহত পশু’র জখম তো আরো বাড়ল বৈকি। ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগের প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের কাছে ৮ উইকেটে হেরে গেছে সফরকারীরা।

 

জিম্বাবুইয়ান্স নাম নিয়ে এটি জিম্বাবুয়ে জাতীয় দলই। প্রতিপক্ষ বিসিবি একাদশে সেখানে আসন্ন ওয়ানডে সিরিজের বাংলাদেশ দলের মোটে তিনজন—মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, আরিফুল হক ও ফজলে মাহমুদ। তাতেই এ দলের সামনে পাত্তা পেল না জিম্বাবুয়ে। বিশাল ব্যবধানের হার বলছে সে কথাই।

 

জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন সৌম্য সরকার। তবে এ ম্যাচের জন্য অধিনায়ক করা হয়েছিল তাঁকে। ভালো ফর্মেই ছিলেন। জাতীয় লিগের সর্বশেষ রাউন্ডে দুই ইনিংসেই ছিল সত্তরোর্ধ্ব ইনিংস। সে ফর্ম টেনে নিলেন কাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও। তিন নম্বরে নেমে ১১৪ বলে অপরাজিত ১০২ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেছেন এই বাঁহাতি। ১৩টি চার ও এক ছক্কায় সাজানো সে ইনিংস। সৌম্যর এই রুদ্ররূপেই জিম্বাবুয়ের ১৭৮ রান হয়ে যায় মামুলি। ৩৯ ওভারেই মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বিসিবি একাদশ।

জাতীয় দলের বাইরে থাকা সৌম্য সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন, সেখানে ব্যর্থ ফজলে মাহমুদ। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ দলে ডাক পেয়েছেন। তবে এর প্রস্তুতিটা কাল মোটেই ভালো হয়নি। ওপেনিংয়ে নেমে ৩৪ বলে ১৩ রান করে আউট হয়ে যান। আরেক ওপেনার মিজানুর রহমান (৮) আউট আগেই। ৫২ রানে দুই উইকেট পড়ার পর সৌম্য ১১২ রানের জুটি গড়ের মোসাদ্দেক হোসেনের (৩৩) সঙ্গে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে স্কোয়াডে থাকা আরিফুল হক শেষদিকে নেমে অপরাজিত ৯ রানে।

আরিফুলকে পরীক্ষা দিতে হয়নি, ফজলে তাতে ফেল কিন্তু পাস করে যান ওয়ানডে স্কোয়াডের তৃতীয়জন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। বোলিংয়ে তিন উইকেট নিয়েছেন তিনি। তবে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়ে মূল ধ্বংসযজ্ঞ পেসার এবাদত হোসেনের। পাঁচ উইকেট নিয়ে তিনিই সফলতম বোলার। সফরকারীদের অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা করেছেন সেঞ্চুরি। ৪৭ রানে পাঁচ উইকেট পড়ার পর এলটন চিগুম্বুরার (৪৭) সঙ্গে তাঁর ১২৪ রানের জুটিতেই কিছুটা মুখরক্ষা জিম্বাবুয়ের।

এমন জয়ে বেশ উত্ফুল্ল মিনহাজুল আবেদীন। সৌম্যর প্রশংসা আলাদা করেই করেছেন তিনি, ‘সৌম্য যথেষ্ট ভালো ব্যাটিং করেছে। আমি মনে করি ওর যেই ব্যাড প্যাচ ছিল, সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। জাতীয় লিগের সর্বশেষ ম্যাচে ভালো খেলেছে। আমার বিশ্বাস ফর্মে ফিরে এলে আবার অতিসত্বর টিমে ফিরে আসবে ও।’ জাতীয় দলে ফেরার সুযোগটা এই বাঁহাতির জন্য উন্মুক্ত বলেই জানান তিনি, ‘সৌম্য আমাদের চোখের আড়াল হয়নি। ও তো ৩০ জনের পুলের মধ্যেই আছে। আমরা একটা প্রসেসের মধ্যে আছি। এই জিম্বাবুয়ে সিরিজের স্কোয়াডে আমাদের কিছু খেলোয়াড়কে দেখতে হচ্ছে। সৌম্যকে যদি দরকার হয়, সব সময় বলি—দেশের জন্য কাউকে দরকার হলে তাকে সব সময় নেওয়া হবে।’ নিজের ফর্ম নিয়ে খুশি সৌম্যও, ‘আমি খেলছিলাম জাতীয় লিগে। সেখান থেকে এসে এখানে খেলা, এটা অন্য ফরম্যাটে ছিল। চেষ্টা ছিল উইকেটে থাকার। দেখতে চেয়েছিলাম কতক্ষণ উইকেটে থাকতে পারি। আজকে সুযোগই তেমন ছিল। লক্ষ্য খুব একটা বড় ছিল না। সেই চেষ্টাই করেছি, উইকেটে কতক্ষণ থাকতে পারি।’ সেঞ্চুরির আনন্দও তাঁর কথায়, ‘এক শ তো এক শই। এক শ করলে আনন্দ হবেই। সেঞ্চুরিটা অবশ্যই স্পেশাল।’

পেসার সাইফুদ্দিনের পারফরম্যান্স তেমন স্পেশাল না হলেও তাঁর তিন উইকেট শিকারে খুশি মিনহাজুল। আবার ফজলে যে রান পেলেন না, তাতেও খুব চিন্তিত নন, ‘সাইফুদ্দিন যথেষ্ট ভালো বল করেছে। আর রাব্বীও প্রথমবারের মতো জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করছে। প্রথম ইনিংস খেলছে সে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। একটা টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে। এটা শুধুই এক অভিজ্ঞতা। সামনে ওর জন্য একটা ক্যারিয়ার পড়ে আছে। আমার বিশ্বাস ও অবশ্যই ভালো করবে।’

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

জিম্বাবুইয়ান্স : ৪৫.২ ওভারে ১৭৮ (মাসাকাদজা ১০২, চিগুম্বুরা ৪৭; এবাদত ৫/১৯, সাইফুদ্দিন ৩/৩২)।

বিসিবি একাদশ : ৩৯ ওভারে ১৮১/২ (সৌম্য ১০২*, মোসাদ্দেক ৩৩; সিকান্দার ১/২১)।

ফল : বিসিবি একাদশ ৮ উইকেটে জয়ী।