সোনালী ব্যাংকের লোকসান আর কত?

0
487

সোনালী ব্যাংকের ক্রমাগত লোকসান মেনে নেয়া যায় না। সোনালী ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অলস টাকা পড়ে থাকাও ভালো লক্ষণ নয়। এই অর্থ সচল করার ব্যাপরেও সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা নেয়া দরাকার। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, লোকসান বৃদ্ধি, অন্যদিকে অলস টাকার আধিক্য- এই বিষয়গুলো নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখতে হবে, একইসঙ্গে সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপও গ্রহণ করতে হবে।
লোকসানের পাল্লা ক্রমেই ভারী হচ্ছে সোনালী ব্যাংকের। বেসরকারি ব্যাংকগুলো যখন তীব্র প্রতিযোগিতা করে আয় ও শাখা বাড়ানোয় ব্যস্ত, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক তখন লোকসান টানছে। এটা অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়।
প্রকাশ্যে ব্যাংকটির সমালোচনা করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। গত শনিবার সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সোনালী ব্যাংকের ১ হাজার ২১১ শাখার মধ্যে লোকসানী শাখার সংখ্যা ১৮১টিরও বেশি। জনগণের আপত্তির কারণে লোকসানী শাখাগুলো বন্ধ করা যাচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া ব্যাংকটিতে ৮০ হাজার কোটি টাকা অলস পড়ে আছে। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। জানা গেছে, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৩ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা, যা তার আগের বছর ছিল ১০ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকারের নানা চেষ্টা সত্ত্বেও তা কমে তো না-ই বরং এক বছরে বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।
গত কয়েক বছর ধরেই দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। সরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বরাবরই বেশি। ইদানীং বেসরকারি খাতেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। এ নিয়ে অর্থনীতিবিদরা উদ্বিগ্ন। অর্থ সংশ্লিষ্ট খাতের অভিজ্ঞজনরা বলছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারি ব্যাংকে চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগ, ওইসব পরিচালকের নিজেদের সুবিধার জন্য যত্রতত্র শাখা খোলা ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেই সোনালী ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পতিত হয়েছে এই বেহাল দশায়। খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে একদিকে আয় কমছে, অন্যদিকে ব্যয় বেশি হওয়ায় বেড়েই চলেছে লোকসান। সোনালী ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতি ও লোকসান বন্ধ করতে হলে এ খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য হলমার্ক কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে সব ক’টি অনিয়মের পেছনে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। প্রয়োজনে ব্যাংক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের সাজা নিশ্চিত করার জন্য পৃথক কমিশন গঠন করা যেতে পারে। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পেছনে সরকারও কিছুটা দায়ী বলে একই বক্তৃতায় স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী। সরকারের অধীনে থাকা ৬টি ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংক সবচেয়ে বড় বলে এর ওপর সরকারের প্রভাব তুলনামূলক বেশি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ওপর সরকারের প্রভাব কমানোর বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে- এটাও ইতিবাচক। আমরা এ ব্যাপারে সরকারের আশু পদক্ষেপ এবং তার সুফল আশা করি। বিপরীত দিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বাড়তি কিছু সুযোগ-সুবিধাও পায়। কিছু লেনদেন বাধ্যমূলকভাবেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে করানো হয়। এরপরও সোনালী ব্যাংকের ক্রমাগত লোকসান মেনে নেয়া যায় না। দেশের বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংক যেখানে তহবিল সংকটে ভুগছে, সেখানে সোনালী ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অলস টাকা পড়ে থাকাও ভালো লক্ষণ নয়। এই অর্থ সচল করার ব্যাপরেও সুচিন্ত—ত কর্মপরিকল্পনা নেয়া দরাকার। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, লোকসান বৃদ্ধি, অন্যদিকে অলস টাকার আধিক্য- এই বিষয়গুলো নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখতে হবে, একইসঙ্গে সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপও গ্রহণ করতে হবে।