সৈকতের ঝাউগাছ রক্ষায় উদ্যোগ নিন

0
220

জোয়ারের উত্তাল ঢেউয়ের ফলে বিলীন হচ্ছে উপক‚লবাসীর রক্ষাকবচ কক্সবাজার সৈকতের বালুচরের ঝাউগাছ। গত সাত দিনে অন্তত এক হাজারের বেশি ঝাউগাছ উপড়ে পড়েছে। এই ঝাউগাছ বন বিভাগের লোকজন কিছুটা সংগ্রহ করলেও অধিকাংশ কেটে নিয়ে গেছে স্থানীয় গাছচোর সিন্ডিকেট। পাশাপাশি সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে গেছে অনেক গাছ। জানা গেছে, সাগরের করালগ্রাসে বিশ্বের দীর্ঘতম ১২০ কিলোমিটার সৈকতের বালুচরের ঝাউগাছের পাশাপাশি বিলীন হচ্ছে উপক‚লসহ সমুদ্রতীরের স্থাপনা। ইতোমধ্যে সমুদ্রসৈকতের ডায়াবেটিক হাসপাতাল থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার হাঁটার রাস্তা সাগরে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া সারি সারিভাবে দীর্ঘ সৈকতে পড়ে আছে হাজারও ঝাউগাছ।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের তথ্যমতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২-৭৩ সালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের নাজিরারটেক, সমিতিপাড়া, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, লাবণী, কলাতলী, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, উখিয়ার ইনানী, সোনাপাড়া, টেকনাফের বাহারছড়া, মহেশখালীয়াপাড়া, সাবরাং উপক‚লের প্রায় ৪৮৫ হেক্টর বালিয়াড়িতে ১২ লাখ ঝাউগাছ সৃজন করা হয়েছিল। এছাড়া ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিন বছরে আরো ১৮৫ হেক্টর বালুচরে সৃজন করা হয় ২ লাখের বেশি ঝাউগাছ। কিন্তু গত ১০ বছরে ঝড়-জলোচ্ছ¡াসের ভাঙনে সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়েছে ৮ লাখের বেশি ঝাউগাছ। ভাঙন রোধে স¤প্রতি সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রতিরক্ষা বাঁধ (জিও টিউব) দিয়েও ঝাউগাছ রক্ষা করতে পারছে না। ঢেউয়ের ধাক্কায় জিও টিউব বাঁধও ভেঙে পড়েছে। জোয়ারের উত্তাল ঢেউয়ের ধাক্কায় ঝাউগাছ তলিয়ে যাচ্ছে। উপড়ে যাচ্ছে গাছের শিকড়।
মূলত প্রাকৃতিক কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জোয়ারের সময় ঢেউয়ের ধাক্কায় ঝাউ গাছের গোড়া থেকে বালি সরে যাওয়ায় বিলীন হতে থাকে ঝাউবাগান। ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬৫০ হেক্টর জমিতে ঝাউগাছ লাগানো হয়েছে। কিন্তু জোয়ারের পানি বেড়ে ঢেউয়ের ধাক্কায় তার অর্ধেকের চেয়ে বেশি বিলীন হয়ে গেছে। আর ঝাউগাছ বিলীনের বিষয়টি দীর্ঘদিনের। এই বিষয়ে অনেক আন্দোলন হয়েছে। জরুরি প্রকল্পের আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দ্বারা আধুনিক পদ্ধতিতে বাঁধ নির্মানের জন্য জেলা প্রশাসককে একাধিকবার অবগত করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কেউ ঝাউবন রক্ষার্থে এগিয়ে আসেনি। বন কর্মকর্তারা বলছেন, জনবল স্বল্পতার কারণে সাগরের ঢেউয়ের ধাক্কায় পড়ে যাওয়া ঝাউগাছ যথাসময়ে সংগ্রহ করা যাচ্ছে। এ কাজে যারা রয়েছে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যে চোরচক্র কিছু গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় ঝাউগাছ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেয়া ছাড়া বিকল্প নেই। উপক‚ল ও সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষার্থে দ্রæত সময়ে বাঁধ নির্মাণ করে সমাধান জরুরি। অন্যথায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ঝাউগাছ বিলীনের পাশাপাশি উপক‚লবাসীও সাগরের করালগ্রাস থেকে রক্ষা পাবে না।