সুন্দরবন থেকে আতœসমর্পণকৃত জলদস্যুদের পুর্নবাসন প্রকল্প “সুন্দরবনের হাসি”(প্রস্তাবিত) শুভ উদ্বোধন ঃ ঈদ উপহার প্রদান

0
733

মংলা প্রতিনিধি:
সুন্দরবন থেকে আতœসমর্পণকৃত জলদস্যুদের পুর্নবাসন প্রকল্প “সুন্দরবনের হাসি”(প্রস্তাবিত) শুভ উদ্বোধন ও ঈদ সামগ্রী উপহার হিসেবে প্রদান করেছে র‌্যাব এর মহাপরিচালক। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে র‌্যাব-৮ এর কার্যলয়ে মংলা,রামপাল ও দাকোপ,শরনখোলা ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলার জলদস্যুদের পুর্নবাসন প্রকল্পের উব্ধোধন ও দস্যুতা থেকে ভাল পথে ফিড়ে আসা বনদস্যুদের মাঝে ঈদ উপহার প্রদান করেন র‌্যাব সদস্যরা।
র‌্যাব-৮ এর তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, বিশাল সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল হাজার হাজার উপক‚লবর্তী মানুষ প্রতি নিয়তই বনদস্যু/জলদস্যুদের আক্রমনের শিকার হয়ে থাকে।

সুন্দরবন সহ বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকায় বনদস্যু, জলদস্যুদের দমনের লক্ষ্যে র‌্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও বন বিভাগের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স কাজ করছে, যার প্রধান সমন্বয়কারী “মহাপরিচালক র‌্যাব ফোর্সেস”। র‌্যাব সুন্দরবন এলাকায় জলদস্যু ও বনদস্যুদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। র‌্যাবের এই কঠোর তৎপরতার কারনে এখন পর্যন্ত বিগত ২৪ মাসে সর্বমোট ২৩টি বাহিনীর ২৪৩ জন জলদস্যু, ৩৭৯টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১৮,৮০৪ রাউন্ড গোলাবারুদ সহ র‌্যাব-৮ ও ৬ এর নিকট আতœসমর্পণ করে। আতœসমর্পনকারী জলদস্যুগণ অপরাধের পথ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরে আসায় তারা সমাজের অন্যান্য অপরাধী ও বিপদজনক জনগোষ্ঠীর সামনে একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি আতœসমর্পণকৃত জলদস্যু পরিবারবর্গের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে র‌্যাব কর্তৃক “সুন্দরবনের হাসি” (প্রস্তাবিত) প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। আর প্রস্তাবিত প্রকল্পটি চালু করা হলে আতœসমর্পণকৃত জলদস্যুদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জে এবং উপক‚লবর্তী অঞ্চলকে দস্যু মুক্ত করতে র‌্যাব-৮ এর সর্বব্যাপি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যে গুটিকয়েক দস্যু দল সুন্দরবনে এখনো সক্রিয় রয়েছে র‌্যাব আশাবাদী তাদেরকে অচিরেই আইনের হাতে সোপর্দ করে সু-পথে ফেরত আনা হবে। বিগত সময়ে আতœসমর্পনকারী জলদস্যুদের প্রত্যেককে আর্থিক সহায়তা বাবদ ১লক্ষ ৭০ হাজার টাকা, ১টি করে মোবাইল সেট এবং ঈদ উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। এসকল সার্বিক দিক বিবেচনা করে এবং জলদস্যুর সন্তানরা যেন সমাজে সুস্থ ও সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারে সে জন্য আতœসমর্পণকৃত জলদস্যুদের পুর্নবাসন প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। সকল কর্মকান্ড র‌্যাব ফোর্সেস এর মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এ সকল প্রশিক্ষনের অংশ হিসেবে র‌্যাব এর মহাপরিচালক র‌্যাব-৮ এর অধিনায়ক, র‌্যাব ফোর্সেস কর্তৃক আতœসমর্পণকৃত ২০টি পরিবার বর্গের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করেন। পর্যায়ক্রমে সেলাই কাজে আগ্রহী সকল পরিবার বর্গের মাঝে এই মেশিন বিতরণ করা হবেও বলে জানায় তারা।

চিকিৎসার জন্য ৪টি পরিবারকে ও শিক্ষা সহায়তা হিসেবে আর্থিক অনুদান প্রদান এবং আতœসমর্পণকৃত সকল জলদস্যু পরিবার বর্গের জন্য ঈদ উপহার প্রদান করেন। এছাড়াও আতœসমর্পণকৃত ২৩টি জলদস্যু বাহিনীর পরিবার বর্গের মধ্যে উপযুক্ত যোগ্য এবং ইচ্ছুক সদস্যা এবং সন্তানাদির মধ্যে প্রশিক্ষণ এবং অনুদানের ব্যবস্থা করা হবে। প্রাথমিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী আতœসমর্পণকৃত ২০টি দলের সর্বমোট স্ত্রী ১৯৪ জন, কন্যা/মেয়ে সন্তান ১৮৫ জন এবং পুত্র সন্তান ১৮৬ জন। উল্লেখ্য, কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (ঞঞঈ) এর শর্তানুযায়ী শিক্ষা ক্ষেত্রে যোগ্য স্ত্রী ৫০ জন, কন্যা সন্তান ৪২ জন এবং পুত্র সন্তান ৩৮ জন। আতœসমর্পণকৃত জলদস্যু এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে থেকে সর্বমোট ২৩ জন সেলাই, ২৪ জন ড্রাইভিং, ০১ জন বুটিক, ০৩ জন কম্পিউটার প্রশিক্ষন, ১০ জন লেখাপড়া ও নিজ শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি করতে ইচ্ছুক এবং ০৪ জন চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন। গতকাল দুপুরে র‌্যাব-৮ কার্যলয় আতœসমর্পণকৃত মংলা,রামপাল,শরনখোলা,মোড়লগঞ্জ ও দাকোপসহ অন্যান্য উপজেলার মোট ২৪৩ জন দস্যুদের মাঝে এ ঈদ উপহার প্রদান অনুষ্ঠানে র‌্যাব’র মহাপরিচালক বেনজির আহাম্মেদ,জেলা প্রসাশক মোঃ হাবিবুর রহমান, র‌্যাব-৮’র অধিনায়ক আতিকা ইসলামসহ র‌্যাব এর অন্যান্য কর্মকর্তারা এসময় উস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া দ্রæত বাস্তবায়ন এবং ফলপ্রসু করার সকল কার্যক্রমকে গতিশীল করতে সর্বান্তকরণে সচেষ্ট হওয়া দরকার বলে মনে করেন বাংলাদেশ র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটলিয়ার র‌্যাব।