সুন্দরবনের ছয় কুখ্যাত জলদস্যু-বনদস্যু বাহিনীর ৫৭ জনের আত্মসমর্পণ

0
867

নিজস্ব প্রতিবেদক:
অন্ধকার জীবন ছেড়ে আলোর পথে ফিরেছে সুন্দরবনের ছয় জলদস্যু বাহিনীর ৫৭ জন সদস্য। বুধবার (২৩ মে) দুপুরে খুলনার লবণচরা এলাকার র‌্যাব-৬ কার্যালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে তাঁরা অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন।

র‌্যাব-৬-এর অধীনে দাদা ভাই বাহিনীর ১৫ জন, হান্নান বাহিনীর ৯ জন, আমির আলী বাহিনীর ৭ জন এবং র‌্যাব-৮-এর অধীনে সূর্য বাহিনীর ১০ জন, ছোট সামসু বাহিনীর ৯ জন, মুন্না বাহিনীর ৭ জন দীর্ঘদিনের দস্যুজীবন ছেড়ে স্বাভাবিক ও সুন্দর জীবনের প্রত্যয় নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় তাঁরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ৫৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১ হাজার ২৮৪টি গুলি জমা দেন।

দাদা ভাই বাহিনী: এ বাহিনীর আত্মসমর্পণকারীরা হলেন দলনেতা মো. জয়নাল আবেদীন, মো. জাকির হাওলাদার (৩৫), পলাশ শেখ (৩০), মো. বিল্লাল শেখ (৩০), মো. রিজা শেখ (৪৫), মো. দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার (৪০), শেখ জিয়াউর রহমান (৩০), মো. রিপন (২৫), আবু বক্কর সিদ্দিক, মহসীন শেখ (৩০), মো. ইয়াছিন সরদার (৩০), মো. কামাল শিকারী (৩৭), আ. করিম ম্যাজিক (৩৪), মো. মনিরুল মোল্লা মনি (৩৪), মো. জাহিদুর রহমান গাজী (২৮) ও মো. মোস্তফা মোল্লা (২৬)।

হান্নান বাহিনী: এ বাহিনীর আত্মসমর্পণকারীরা হলেন দলনেতা মো. হান্নান শেখ, মো. আব্দুল হাওলাদার (৩০), মো. আকবর হোসেন পাহাড় (৪০), মো. এবাদুল ইসলাম (২৫), মো. আসাবুর শেখ (২৮), মো. মাসুম বিল্লাহ শেখ (৩৩), মো. নুরুল ইজারদার (৪০), মো. সেলিম মোড়ল (৪৫) ও মো. জলিল মুন্সি (৩৫)।

আমির আলী বাহিনী: এ বাহিনীর আত্মসমর্পণকারীরা হলেন দলনেতা আমিররুল ইসলাম (৩৫), মুকুল হোসেন (৩৫), মো. আলমাস হোসেন (৪০), মো. জাহাঙ্গীর হোসেন (৩২), মো. নাজমুল মল্লিক (২৮), মো. আলামিন সরদার (৩০) ও মো. সাদ্দাম তরফদার (২২)।

সূর্য বাহিনী: এ বাহিনীর আত্মসমর্পণকারীরা হলেন দলনেতা মো. আবুল হোসেন (৩৮), মো. মাজাহারুল গাজী (৩১), মো. আবু হাসান (২২), মো. কামাল হোসেন গাজী (২২), স্বপন অধিকারী (২৯), মাহাবুব তরফদার (৫০), মো. মাসুম মুনসী (৩০), ছাত্তার শেখ (৪৯), মো. তুহিন শিকদার (২৯) ও মো. আকরাম গাজী (৪২)।

ছোট সামসু বাহিনী: এ বাহিনীর আত্মসমর্পণকারীরা হলেন দলনেতা মো. আকরাম সানা (৩২), মো. মওলা ফকির (৪৮), জাকারিয়া শেখ (৪০), হোসেন আলী (২৯), মো. মজনু ফারাজী (৪০), মো. মাসুদ শেখ (৩২), মো. আলামিন (৩১), আব্দুল মাজেদ গাইন (৫২) ও মো. জাকারিয়া হাওলাদার (২১)।

মুন্না বাহিনী: এ বাহিনীর আত্মসমর্পণকারীরা হলেন দলনেতা মো. মোস্তাক মল্লিক (৫০), মো. মাসুম বিল্লাহ গাজী (৩৭), মো. কবির শেখ (৩৯), মো. আসাদুল শেখ (২৭), মো. ইমরান শেখ (২৪), মো. সোহেল শেখ (৩০) ও মো. খবির গাজী (২৭)।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশকে জঙ্গি, মাদক ও জলদস্যু-বনদস্যুমুক্ত করতে হবে। আর এ প্রত্যয়ে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি ইউনিট কঠোর অবস্থান নিয়ে কাজ করছে। শিগগিরই সুন্দরবনকে জলদস্যু ও বনদস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়ন করতে হলে যুবসমাজকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে হবে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি তিন হাজারের অধিক মাদক ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

 

 

অনুষ্ঠানে এর আগে বিভিন্ন সময় র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করা জলদস্যু ও বনদস্যু বাহিনীর ৫৮ জনকে পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত প্রত্যেককে এক লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. মোজাম্মেল হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, নৌ পুলিশের ডিআইজি শেখ মো. মারুফ হাসান, র‌্যাব-৮-এর অধিনায়ক আতিকা ইসলাম, খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমান ও খুলনা জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান।

র‌্যাব-৬-এর অধিনায়ক খোন্দকার রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির অন্যান্য সদস্য, পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।