সুজার স্মৃতিচারণে কাঁদলেন খালেক

0
654

এম জে ফরাজী : আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক ও এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা, যাদেরকে বলা হয় দক্ষিণবঙ্গের আওয়ামী লীগের কর্ণধার। দু’জনেই রাজনৈতিক যোগ্যতায় স্ব-মহিমায় নিজেদেরকে তুলেছেন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। শহর কিংবা গ্রাম সবখানেই তাদের জনপ্রিয়তা আকাশ ছোঁয়া। দু’জনে জেলা ও নগরে পৃথক নেতৃত্ব দিলেও তাদের মধ্যকার বন্ধুত্বের সম্পর্কটাও কিন্তু দীর্ঘদিনের।
১৯৭৭ সালে খুলনা পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন তালুকদার আব্দুল খালেক ও মোস্তফা রশিদী সুজা। প্রথম দিকে সুজা নগরের রাজনীতি করলেও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে হাল ধরেন জেলা আওয়ামী লীগের। আর খালেক থেকে যান নগরের রাজনীতিতে। দু’জনে দু:সময়ে নেতৃত্ব দিয়ে চাঙ্গা রেখেছিলেন সংগঠনকে।
২০০২ সালে যৌথ বাহিনীর অপারেশন ক্লিনহার্টে গ্রেফতার হন তারা দুজনেই। একসাথে কারাবরণ করেন অনেকদিন। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময় বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের ইশারায় সুজা’র উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। ফলে দীর্ঘদিন ছিলেন চিকিৎসাধীন।
এরপর একেক সময় খালেক-সুজার রাজনৈতিক কোন্দলের কথা উঠলেও তারা দুজনেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেননি। সর্বশেষ খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে একটি পক্ষ গুঞ্জন ছড়িয়েছিলো খালেক ও সুজা কেউ কাউকে পছন্দ করেন না। এসময় সদ্য চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরা মোস্তফা রশিদী আবাহনী ক্লাবে সাংবাদিকদের ডেকে মতবিনিময় করেন।
এসময় তিনি বলেন, খালেক-সুজার সম্পর্কটা দীর্ঘদিনের। একটি পক্ষ আমাদের নামে অপপ্রচার করে ফায়দা লুটতে চাইছে। তিনি আরও বলেন, ‘তালুকদার আব্দুল খালেক ছাড়া খুলনার উন্নয়ন সম্ভব না। তাকে বিজয়ী করলে খুলনাবাসী কাঙ্খিত উন্নয়ন বুঝে পাবে।’ পরে একই স্থানে তালুকদার খালেক ও এমপি সুজা মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।
এরপর হঠাৎ ২৬ জুলাই (বৃহস্পতিবার) মধ্যরাতে সিঙ্গাপুর থেকে খবর এলো খুলনার ‘ভাইজান’ এমপি মোস্তফা রশিদী সুজা আর নেই। শোকে বিহ্বল তার প্রিয়বন্ধু তালুকদার আব্দুল খালেক। ছিলেন রাজশাহীতে খায়রুজ্জামান লিটনের নির্বাচনী প্রচারণায়। শনিবার তার খুলনায় ফেরার কথা থাকলেও তিনি একদিন আগেই শুক্রবার বিকেলে খুলনায় আসলেন। এসেই জরুরী সভা ডেকে ৭ দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করলেন।
সভায় সভাপতির বক্তৃতাকালে সদ্যপ্রয়াত প্রিয়বন্ধু মোস্তফা রশিদী সুজা এমপি’র স্মৃতিচারণ করে কেসিসির নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ‘গত ১৫ মে খুলনা সিটি নির্বাচনের দিন দুপুরের পর সুজার সাথে দেখা করতে তাঁর বাসায় গিয়েছিলাম। এক সাথে ভাত খেতে অনুরোধ করে বললো, কতদিন একসাথে আমরা ভাত খাইনি। জীবনে শেষ বারের মত একসাথে খেলাম। ১৯৯১ সালে যখন আমরা এমপি ছিলাম, তখন এমপি হোস্টেলের পাশাপাশি রুমে থাকতাম, একইসাথে খেতাম।’ এমন স্মৃতিচারণ করতে করতে তালুকদার খালেক আবেগতাড়িত হয়ে কেঁদে ফেলেন, এসময় অন্যরাও অশ্র“সিক্ত হয়ে পড়েন!