সিরীয় শরণার্থীদের দেশে ফিরতে বাধ্য করছে তুরস্ক: অ্যামনেস্টি

0
242

খুলনাটাইমস বিদেশ : গৃহযুদ্ধ কবলিত সিরিয়া থেকে তুরস্কে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের দেশে ফিরতে বাধ্য করা হচ্ছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। ওই ব্রিটিশ মানবাধিকার সংস্থার অনুসন্ধানে জানা গেছে, কখনও বলপ্রয়োগের মধ্য দিয়ে, কখনও আবার হুমকি কিংবা কৌশলে ‘স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার’ চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে তাদেরকে সিরিয়ায় ফেরত পাঠানো হচ্ছে। ঘটনার শিকার অন্তত ২০ জন সিরীয় শরণার্থীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এসব কথা জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। তুরস্কের দাবি কয়েক লাখ শরণার্থী স্বেচ্ছায় সিরিয়ায় ফিরে গেছে। তবে অ্যামনেস্টি এই দাবিকে ‘অসৎ ও বিপদজনক’ আখ্যা দিয়েছে। সিরিয়ায় আট বছর ধরে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটির প্রায় ৩৬ লাখ শরণার্থী তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে। শরণার্থী সহায়তায় ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ৫২০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি করে আঙ্কারা। তবে সিরীয় শরণার্থীরা ক্রমেই তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোয়ানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠছে। তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছেন, ৩ লাখ ১৫ হাজার সিরীয় শরণার্থী স্বেচ্ছায় সিরিয়ায় চলে গেছে। তবে অ্যামনেস্টির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভিন্ন বাস্তবতা। এ বছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সিরিয়ায় ফেরত যাওয়া শরণার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে অ্যামনেস্টি। এসব সাক্ষাৎকারে শরণার্থীরা জানিয়েছে ‘সেফ জোন’ প্রতিষ্ঠার আগেই তুর্কি কর্তৃপক্ষ শরণার্থীদের একাংশকে হাতকড়া পরিয়ে বাসে তুলে সিরিয়ায় ফেরত পাঠিয়েছে। শরণার্থীদের কেউ কেউ বলেছেন, ‘স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়া’র নথিতে স্বাক্ষর করতে তাদের হুমকিধামকি দেওয়ার পাশাপাশি মারধরও করা হয়েছে। অ্যামনেস্টির অনুসন্ধান অনুযায়ী ওই নথিতে স্বাক্ষর করাতে কৌশলেরও আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। শরণার্থীদের একাংশ বলেছেন, তাদের একটি রেজিস্ট্রেশনের কাগজে স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছে। এর বিনিময়ে তাদের একটি কম্বল দেওয়া হয়েছে। কতজন শরণার্থীকে এভাবে জোর করে ফেরত পাঠানো হয়েছে তার কোনও আনুষ্ঠানিক তথ্য অ্যামনেস্টির কাছে নেই। তবে বিপুল সংখ্যক মানুষকে এভাবে ফেরত পাঠানো হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে সিরিয়ার আলেপ্পোর কাশিম (ছদ্মনাম) নামে এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ৩৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তি জানান, তাকে তুরস্কের কনিয়া শহরের একটি থানায় ছয় দিন আটক রাখা হয়। সেখানে কর্মকর্তারা তাকে বারবার বলেছে, পছন্দ তোমার। হয় এক, দুই মাস বা এক বছর কারাগারে থাকো অথবা সিরিয়ায় চলে যাও। আরেকটি ঘটনায় সিরীয় খ্রিষ্ট ধর্মালম্বী জন বলেন, তাকে অভিবাসন কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘যদি তুমি আইনজীবী চাও তাহলে আমরা তোমাকে ছয়-সাত মাস জেলে রাখবো আর মারবো’। গ্রিস পৌছানোর চেষ্টার সময় তাকে তাকে আটক করে তুরস্কের কোস্টগার্ড। পরে তাকে সিরিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়। সিরিয়ায় যাওয়ার পর তাকে ইদলিবে আটক রাখা হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের শরণার্থী ও অভিবাসী অধিকার বিষয়ক গবেষক আন্না সিয়া বলেন, ‘শরণার্থীরা সরাসরি সংঘাতপূর্ণ সিরিয়ায় ফিরে যাচ্ছে বলে তুরস্ক যে দাবি করছে তা বিপদজনক ও অসৎ। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে মানুষের সঙ্গে কৌশল খাটিয়ে বা জোর করে ফেরত পাঠানো হয়েছে।