সাফল্যের স্বীকৃতি নিয়ে শত শত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারির উপস্থিতিতে ফুলেল শুভেচ্ছায় খুবি উপাচার্যের বিদায়

0
209

খবর বিজ্ঞপ্তি :
বক্তাদের মন্তব্য: দীর্ঘ দশ বছর দুই মাস উন্নয়নের নেতৃত্ব দিয়ে খুবিকে অনন্য উ”চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। দলমত নির্বেশেষে সবাইকে নিয়ে কাজ করার মানসিকতা, সততা ও ধৈর্য্য অনুকরণীয়
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান ১০ বছর ২ মাস একাডেমিক, প্রশাসনিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়ে সময় কাটিয়ে সাফল্যের স্বীকৃতি নিয়ে আজ ২৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেল ৩.১৫ মিনিটে শত শত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারির উপস্থিতিতে এক আবেগঘন পরিবেশে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। এর আগে সকাল থেকেই তিনি শেষ কর্মদিবসে নানা অনুষ্ঠান, সভায় যোগদান ও উদ্বোধন প্রক্রিয়ায় ব্যস্ততম সময় অতিবাহিত করেন। তাঁর বিদায়কালে অভ‚তপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। বিকেল তিনটার আগেই একে একে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারিসহ শুভানুধ্যায়ীরা তাঁর আবাসিক ভবনের দিকে যেতে থাকেন। তিনটার আগেই বাসভবন ও বাইরে সমাবশে ঘটে কয়েকশ মানুষের। অপেক্ষায় থাকেন তারা। বিকেল ২.৫৫ মিনিটে তিনি বাসভবন থেকে বের হতেই তাঁতে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন অনেকে। বসাভবন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটক পর্যন্ত সারিবদ্ধভাবে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারি তাঁকে বিদায়ী সালাম ও শুভেচ্ছা জানান। বেলা ৩.২মিনিটে তিনি প্রধান ফটকে পা রেখেই তাঁর অসীম শ্রদ্ধার শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জনের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেন। এ সময় তিনি আবেগে, শ্রদ্ধায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। একই সময় একের পর এক শিক্ষক, কর্মকতা, কর্মচারি উপাচার্যকে জড়িয়ে ধরে, হাত ধরে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানান। এসময় উপস্থিত সাংবাদিকরা তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন এ দিনটি আমার জীবনের স্মরণীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শত শত শিক্ষার্থী আমাকে বিদায় জানাতে এসেছেন এটা অভ‚তপূর্ব। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেনো এ ধারা অব্যাহত থাকে এবং দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে চলতে পারলে এ বিশ্ববিদ্যালয় সম্ভাবনার পথে, সাফল্যের পথে বহুদূর এগিয়ে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, বিভিন্ন স্কুলের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান, বিভাগীয় প্রধান উপাচার্যের গাড়ির সাথে বিশাল গাড়ীবহরের যাত্রায় অংশ নেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে কোনো উপাচার্যের বিদায়কালে সুখকর অভ‚তদৃশ্যের আবির্ভাব ঘটেনি। তিনি এর আগের মেয়াদেও ফুলেল শুভেচ্ছা নিয়ে বিদায় নেন। তবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড, মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের উপাচার্যের এবারের বিদায়দৃশ্য দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রেকর্ড করলো
এর আগে সকাল ৯টায় তিনি নগরীর বয়রাস্থ খুবি’র চারুকলা ইনস্টিটিউটের জায়গায় ১১ তলা বিশিষ্ট শহিদ বুদ্ধিজীবী ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী আবাসিক ভবনের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। সকাল ১০টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন। এরপর বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান ও বিভাগীয় প্রধানদের সাথে একাডেমিক বিষয় নিয়ে শেষবারের মতো মতবিনিময় করেন। পরে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত ‘শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। পরে তিনি কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে জিনোম ল্যাব উদ্বোধন করেন। দুপুর থেকেই তাকে ফুল দিয়ে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরের ও বাইরের বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন, ডিন, ডিসিপ্লিনসহ বিভিন্ন মহল তাঁর দপ্তরে আসেন।
শেষ কর্মদিবসে এসকল কর্মসূচিতে উপাচার্য বলেন, আমি আপনাদের কাছে আপনজন হয়ে থাকতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে গেলেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যাহত উন্নয়ন, শিক্ষা ও গবেষণার সাফল্য তাঁকে যেনো আনন্দ দেয় তিনি সে প্রত্যাশা করেন। তিনি যেনো দূর থেকেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও উজ্জ্বল ভাবমূর্তি দেখতে পান। তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কর্মকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা, গুণগত মানোন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও অবকাঠামোগত প্রসারেও আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। আমি দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার চেষ্টা করেছি। তাঁর এই দীর্ঘ সময়ের কার্যক্রমের সংশ্লিষ্টতায় কেউ যদি কোন কষ্ট পেয়ে থাকেন, তিনি তার জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান ও বিভাগীয় প্রধানদের সাথে মতবিনিময় সভায় এবং স্মারকগ্রšে’র মোড়ক উন্মোচনকালে তাঁর কর্মমেয়াদের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরে বক্তৃতা করেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ, সমাজ বিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর মোছাঃ তাছলিমা খাতুন, শিক্ষা স্কুলের ডিন প্রফেসর এ কে ফজলুল হক, ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের ডিন প্রফেসর এস এম জাহিদুর রহমান, জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস, পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. উত্তম কুমার মজুমদার, এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মোঃ সারওয়ার জাহান, স্থাপত্য ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. খন্দকার মাহফুজ উদ দারাইন, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মোঃ আনিসুর রহমান, এফএমআরটি ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুর রউফ, গণিত ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. সর্দার ফিরোজ আহমেদ, অর্থনীতি ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. নাসিফ আহসান, রসায়ন ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল হক, প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিন প্রধান ড. নিহার রঞ্জন সিংহ, ইতিহাস ও সত্যতা িিডসিপ্লিন প্রধান ড. মোঃ দুলাল হোসেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন প্রধান মামুনুর রশীদ, খানজাহান আলী হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল জব্বার, আইসিটি সেলের পরিচালক প্রফেসর ড. কামরুল হাসান তালুকদার।
বক্তারা উপাচার্যের নেতৃত্ব, সবাইকে নিয়ে কাজ করার মানসিকতা, তার মানবিকতা, সততা, নিষ্ঠা, সৌজন্যতা তুলে ধরে তার ভবিষ্যৎ জীবনের সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করেন।