সাধারণ হয়েও অসাধারণ তরুন মন্ত্রী তথ্য প্রযুক্তির ফেরিওয়ালা পলক

0
778

জুনাইদ আহমেদ পলক। বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষিত ও সচেতন তরুণদের আইকন।

ভাই-বোনদের মধ্যে সবার ছোট। পাঁচ ভাই-বোনের প্রত্যেকেরই নাম চোখের প্রতিশব্দ দিয়ে, যেমন- নয়ন, মণি, আঁখি, দৃষ্টি ও পলক।

বাবা মরহুম ফয়েজ উদ্দীন ছিলেন একজন কৃষক। পাশাপাশি ছিলেন মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন নাটোরের সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চলনবিল এলাকার মুক্তিযুদধ এর সংগঠক। মা জামিলা ফয়েজ একজন গৃহিনী। ১৯৮০ সালের ১৭ই মে নাটোর জেলার চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলায় জন্মগ্রহন করেন তিনি।

প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ভর্তি হন সিংড়া দমদমা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়েই গড়ে তুললেন দূর্দম ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান। এখান থেকেই মূলত শুরু হয় তার সংগঠন কেন্দ্রিক পথচলা। এলাকার সকল কিশোরদের সংগঠিত করে খেলার মাঠে ফুটবল, ক্রিকেট আর ভলিবল আয়োজন করা ছিল তার প্রায়শই কর্মকাণ্ড।

শৈশব-কৈশোরে তিনি বেড়ে উঠেছেন ঘুড়ি উড়িয়ে, কখনো মাছ ধরে আবার কখনো বা চলনবিলে সাঁতার কেটে। মাটি ও মানুষের সাথে তার নাড়ির সম্পর্কটা খুব ছোটবেলা থেকেই।

বাবা মরহুম ফয়েজ উদ্দিনকে দেখেছেন; কিভাবে তিনি মিশে যেতেন সাধারণ মানুষের মাঝে, কিভাবে মানুষের সমস্যা সমাধানে উজাড় করে দিতেন নিজেকে। বাবার কাছে গল্প শুনে খুব অল্প বয়সেই বঙ্গবন্ধুকে নিজের মধ্যে ধারণ করে ফেলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু তার কাছে এক স্বপ্নজয়ী মহামানব।

ছাত্রজীবন থেকেই তুখোড় মেধাবী পলক বিতর্ক, আবৃত্তি ও উপস্থিত বক্তৃতা করতেন। সম্পৃক্ত ছিলেন রোভার স্কাউটের সাথে। ১৯৯৪ সালে বয়েজ স্কাউট নাটোর জেলা দলের নেতৃত্ব দেন পলক। ১৯৯৫ সালে সিংড়া দমদমা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় পাঁচ বিষয়ে লেটার নম্বরসহ স্টার মার্ক নিয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৯৭ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন পলক।

এরই মধ্যে তার বাবা ইন্তেকাল করেন কিন্তু থেমে থাকেননি পলক। বাবাকে হারিয়ে কঠিন জীবন সংগ্রামে বাস্তবতাকে সঙ্গী করে শুধুমাত্র স্থানীয় রাজনীতির প্রতি প্রবল ঝোক থাকার কারণে ও মা এবং এলাকার মানুষের পাশে থাকার কথা চিন্তা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে এলাকায় ফিরে এসে ভর্তি হন গোল-ই-আফরোজ সরকারি অনার্স কলেজে।

মূলত সেখান থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে জোড়ালো উত্থান শুরু হয় পলকের। ১৯৯৯ সালে কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ভোটে ভিপি নির্বাচিত হন। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন একদিন মহান জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবেন। ছাত্র জীবনে যখন ঢাকায় যেতেন তখন শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় সংসদ ভবনের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে থাকতেন।

নানা চড়াই-উৎড়াই পার করে একে একে উপজেলা ও জেলা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নিজের শক্ত অবস্থান করে নেন পলক। যার পেছনে বিরাট অবদান ছিল তার এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের।

তিনি ২০০১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এমএসএস এবং ২০০৩ সালে ঢাকা ন্যাশনাল ল কলেজ থেকে এলএলবি পাশ করে প্রথমে নাটোর জর্জ কোর্টে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে আইনজীবি হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। ছাত্ররাজনীতি থেকে ধীরে ধীরে গণরাজনীতিতে পদার্পন করেন তিনি।

এরই মধ্যে, ২০০২ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের মতো প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী একটি রাজনৈতিক দলে সারাদেশের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ হিসাবে সিংড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।

২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র ২৮ বছর বয়সে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন লাভ করে দীর্ঘ ৩৭ বছর পর সিংড়া আসনে নৌকা প্রতীককে অর্ধলক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে চমক সৃষ্টি করেন পলক।

মেধা, সততা, নিষ্ঠা, কর্মশক্তি ও সুন্দর বাচন ভঙ্গির মাধ্যমে দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ তরুণ প্রজন্মকে সাথে নিয়ে প্রকৃত অর্থে জনকল্যাণমুখী রাজনীতির প্রয়াস উপস্থাপিত করে দেশবাসীর নজর কাড়েন পলক। সুন্দর, মার্জিত, ভদ্র ও সাবলীল ভাষায় অতি অল্প সময়ের মধ্যে তথ্যবহুল এবং যৌক্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করে টকশো’তে আলোড়ন সৃষ্টি করেন।

পাশাপাশি আস্থা অর্জন করেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নীতি-নির্ধারকদের। যার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৩ সালে আওয়ামীলীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসাবে স্থান পান পলক। নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রচুর পরিমাণ বৃক্ষ রোপনের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১০ সালে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জাতীয় সম্মাননা হিসাবে ১ম পুরস্কার গ্রহণ করেন।

তার এই পথচলায় অন্যতম অনুপ্রেরণার উত্‍স হচ্ছেন তার মা জামিলা ফয়েজ ও স্ত্রী কলেজ শিক্ষিকা আরিফা জেসমিন কনিকা। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি অনুভব করতেন প্রকৃত অর্থে দেশপ্রেমিক ও মেধাবীরা যদি ছাত্ররাজনীতিতে না আসে; তাহলে আমাদের ৫২ বা ৭১ এর যে চেতনা সেটার বাস্তবায়ন কোনো ক্রমেই সম্ভব হবে না।

ছোটবেলা থেকে মানুষের জন্য কিছু একটা করার তীব্র তাগিদ অনুভব করতেন তিনি। রাজনীতি ও তার পরিবার কখনোই বিচ্ছিন্ন কোনো অংশ নয়। পরিবারের প্রতিটি সদস্যই কোনো না কোনোভাবে তার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। দেখা যায়, কখনো আওয়ামী লীগের কোন সম্মেলনে অতিথিদের ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে তার শিশু সন্তান অপূর্ব, অর্জন আর অনির্বাণ।

রাজনীতিকে কখনোই তিনি নেশা বা পেশা হিসাবে নেননি। রাজনীতি হচ্ছে তার সাধণা যার মাধ্যমে তিনি জাতি ও রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। রাজনীতির কারণে কখনোই তাকে তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হয়নি। সারাদিনের প্রচন্ড কর্মব্যস্ততার মাঝেও তিনি পরিবারের সদস্যদের সময় দেওয়ার চেষ্টা করেন। এমন কি, মানুষের সাথে সার্বক্ষণিক সংযুক্ত থাকার মাধ্যম হিসাবে প্রযুক্তিকেই বেছে নিয়েছেন তিনি।

তার প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে যে কেউই অবগত হতে পারেন; সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে। শত ব্যাস্ততার মাঝেও ফেসবুকে আপডেট ও নিয়মিত মেইল চেক করা তার প্রতি মূহুর্তের অভ্যাস। যখন বর্ষায় চলনবিল পানিতে ভাসে কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে, ঘূর্ণিঝড়ে কৃষকের পাকা ধান আর ঘর-বাড়ী বিনষ্ট হয়ে যায়, তখনও দলীয় নেতা-কর্মী আর প্রশাসনকে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিয়ে ফেসবুকে তিনি লিখেন, ‘আমি এলাকায় আছি, সার্বক্ষণিক যে কোনো সমস্যায় সরাসরি যোগাযোগ করুন। আমি সমস্যা সমাধানে সর্বাত্বক চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ।’

২০১৩ সালের শেষের দিকে গুটিকয়েক সংসদ সদস্যের অশালীন, অসত্য ও অসংসদীয় ভাষা ব্যবহারে মহান জাতীয় সংসদ যখন তার পবিত্রতা হারাচ্ছিল, ঠিক সেই মুহুর্তে সংসদে সাহসী ও সময়োপযোগী বক্তব্য প্রদান করে সারাদেশের মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হন।

বিএনপি-জামাতের আগুন সন্ত্রাসকে মোকাবেলা করে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে ৭০হাজারেরও বেশী ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১২ জানুয়ারি বর্তমান মন্ত্রীসভার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

এরপরই শুরু হয় তার নতুন পথচলা। একদিন বলেই বসলেন, ‘আমাকে যে কোনো মূল্যে সফল হতেই হবে। বয়স কম হলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে অনেক বড় দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে আর কেউ তরুণদের সামনে আনবে না, বড় কোন দায়িত্ব দিবে না।’

মেধা ও প্রযুক্তি নির্ভর জাতি ও রাষ্ট্র গঠনে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে চলেছেন পলক। প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি দেশের সর্ববৃহত কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কের উপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে হাইকোর্ট।

তার হাত ধরেই বিআরটিসি বাস কখনো বা টিএসসি কখনো বা মধুর ক্যান্টিনে ফ্রী হয়েছে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক। চলনবিলের প্রত্যন্ত এলাকায় জন্ম নেওয়া প্রতিভাবান এই ছেলেটি আজ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কর্তৃক ‘ইয়াং গ্লোবাল লিডার ২০১৬’ নির্বাচিত হয়ে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও অগ্রযাত্রাকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। পথচলা এখনো অনেক বাঁকি। আমাদের প্রত্যাশা বঙ্গবন্ধুর আর্দশকে সামনে রেখে তিনি এগিয়ে যাবেন বহুদূর। প্রতিদিন ১৮/১৯ ঘন্টা পরিশ্রমের মাধ্যমে সজীব ওয়াজেদ জয় ভাইয়ের নির্দেশনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিসন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

ভবিষ্যতে দেশ ও রাজনীতিতে অসামান্য ভূমিকা পালন করবেন বলে তরুণ সমাজ আশাবাদী।

তথ্যসূত্র : মন্ত্রী পলকের জীবনসঙ্গিনী আরিফা জেসমিন কনিকা’র ফেসবুক পেজ হতে সংগৃহিত।