সাত দেশে জনপ্রিয় সুন্দরবন অঞ্চলের কাঁকড়া

0
260

নিজস্ব প্রতিবেদক

হিমায়িত চিংড়ির চেয়ে বিদেশে সুন্দরবন অঞ্চলের কাঁকড়া জনপ্রিয় হয়েছে। চিংড়ির চেয়ে কাঁকড়ায় বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। গত পাঁচ মাসে ২৬ লাখ ৮১ হাজার ডলার মূল্যের কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। চীন, তাইওয়ান, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ড, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ায় সুন্দরবন অঞ্চলের কাঁকড়ার চাহিদা বেড়েছে। রোগ-বালাই কম ও দাম বেশি পাওয়ার কারণে সুন্দরবন সংলগ্ন ১৩ উপজেলায় কাঁকড়ার চাষও বেড়েছে। গত ছয় মাসে ১৮ দেশে ১৫ কোটি ৭ লাখ ৯১ হাজার ১৩৫ ডলা মূল্যর হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে।কাঁকড়া চাষিরা জানান, তিনমাস সময়ের মধ্যে পুরুষ ও মহিলা জাতের কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি যোগ্য হয়। শৈত্য প্রবাহ ও দাবদাহে কাঁকড়া মারা যায় না। প্রতি কেজি চিংড়ি প্রকারভেদে ৭-৮শ’ টাকা দরে বিক্রি হলেও কাঁকড়া ১ হাজার টাকা থেকে ১২শ টাকা দরে কেজি বিক্রি হয়। স্বল্প সময়ে বেশি মুনাফা হওয়ায় সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, কয়রা, রামপাল, মোংলা, বাগেরহাট সদর, শরণখোলা, শ্যামনগর, আশাশুনি কালীগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলায় কাঁকড়া চাষ সম্প্রসারণ হয়েছে।

জেলার কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় গত অর্থ বছরে ২৮ হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমিতে ৬ হাজার ৯৮৯ মেট্রিকটন কাঁকড়া উৎপাদন হয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো খুলনা সূত্র জানায়, গত পাঁচ মাসে ২৬ লাখ ৮১ হাজার ডলার মূল্যের কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। এরমধ্যে জুন মাসে ২ লাখ ৬৯১, ডলার জুলাই মাসে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ডলার, আগস্ট মাসে ৫ লাখ ৬৩ হাজার, সেপ্টেম্বর মাসে ৯ লাখ ২৫ হাজার, অক্টোবর মাসে ৫ লাখ ৯৪ হাজার ডলার   মূল্যের কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি হয়েছে।
স্থানীয় রপ্তানিকারক শেখ ওয়াহিদুজ্জামান লাবু জানান, মোংলা বন্দর সংলগ্ন দিগরাজ মোকাম থেকে প্রতিদিন বিদেশে রপ্তানির উদ্দেশ্যে ১০ মেট্রিকটন কাঁকড়া ঢাকার নলভোগ আড়তে যায়। প্রতিকেজি কাঁকড়া প্রকারভেদে সাড়ে ৫শ’ টাকা থেকে শুরু করে ১২শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চীন ও তাইওয়ানে সুন্দরবন অঞ্চলের কাঁকড়ার চাহিদা বেশি।
মোংলার দিগরাজ মোকামের মেসার্স মাহফুজা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. আরিফ বিল্লাহ এ প্রতিবেদককে জানান, দিগরাজ মোকামের ৩০টি আড়তে অর্ধশত ব্যবসায়ী কাঁকড়া ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি বলেন, কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম ছিল জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস। কিন্তু জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণে এখন কাঁকড়া প্রজনন মৌসুম পরিবর্তন হয়ে মার্চ ও এপ্রিলে হচ্ছে। ফলে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ থাকায় বিদেশের বাজার মার খাচ্ছে। এতে ব্যসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার আধুনিক প্রযুক্তির ঘাটতি থাকায় চাষীরাও কাঁকড়ার অধিক উৎপাদন পাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড.খালেদ কনক জানান, বাগেরহাট সদর উপজেলা, রামপাল ও  মোংলা উপজেলায় গত অর্থ বছরে ৬০০ হেক্টর জমিতে কাঁকড়া চাষ হয়েছে। খামার ও স্থানীয় নদ-নদী থেকে এ সময় ২হাজার ৬২৯ মেট্রিকটন কাঁকড়া উৎপাদন হয়।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান জানান, জেলার কালীগঞ্জ, দেবহাটা, শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় গেল অর্থ বছরে ৩০৭ হেক্টর জমিতে ৩২০০ মেট্রিকটন কাঁকড়া উৎপাদন হয়। চিংড়ির চেয়ে কাঁকড়া চাষ লাভজনক হওয়ায় এখানকার চাষিরা কাঁকড়তে বেশি অর্থ বিনিয়োগ করছে। স্থানীয় কাকশিয়ালী, কালিঞ্চি, খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদ থেকে চাষিরা কাঁকড়ার পোনা সংগ্রহ করেন। শ্যামনগরে কাঁকড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য ফরিদ নাইন এম্পিয়ার গ্রুপ ও ক্রিকেটার শাকিব আল হাসানের মালিকানায় শাকিব এগ্রোফার্ম নামে দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।