সাতক্ষীরায় আমন সংগ্রহে নানা প্রতিকূলতা

0
413

শেখ নাদীর শাহ্ : অভ্যন্তরীণ আমন সংগ্রহ ২০১৯-২০ মৌসুমে সরকারের বেধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে গত দেড় মাসে সাতক্ষীরা ৭ উপজেলার ৯ টি খাদ্যগুদামে ৬শ ৮৪ মে.টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, ফণীর রেশ কাটতে না কাটতেই আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের ভরমৌসুমে অসময়ের বৃষ্টিতে কৃষকরা নাজেহাল হয়ে পড়েছেন। কৃষকের ঘরে ধান উঠার আগেই টানা ৩/৪ দিনের বৃষ্টিতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তারা। এতে করে সরকারের খাদ্যগুদামে ধান বিক্রির উপযোগী করে তোলা তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা জেলায় ৮৯ হাজার ৪শ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৮শ ৮১ মে.টন। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, ফণী আর অসময়ে বৃষ্টিপাতে ২ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত ৭ হাজার ৯শ ২৫ মে.টন ধানের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া অপুষ্ট এবং মরা দানায় কৃষকদের ভাবিয়ে তুলেছে।
জেলা খাদ্য বিভাগের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গত বছরের ১৪ নভেম্বর খাদ্য অধিদপ্তরের অভ্যন্তরে সংগ্রহ বিভাগ একপত্রে সংগ্রহ নীতিমালা ২০১৭ অনুযায়ী পন্যের মান যাচাইপূর্বক প্রতিকেজি ২৬ টাকা দরে সংগ্রহের নির্দেশনা দেয়া হয়।
এরই প্রেক্ষিতে জেলা উপজেলা বিভাজন অনুযায়ী সাতক্ষীরা জেলায় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হাজার ৩শ ৪১ মে.টন নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩ হাজার ১শ ১৩ মে.টন, কলারোয়ায় ১ হাজার ৯শ ২১ মে.টন, দেবহাটায় ৮শ ৫৭ মে.টন, কালীগঞ্জে ২ হাজার ৮শ ১৫ মে.টন, শ্যামনগরে ২ হাজার ৭শ ৩ মে.টন, আশাশুনী ১ হাজার ৫শ ৭০ মে.টন এবং তালা উপজেলায় ১ হাজার ৩শ ৬২ মে.টন বরাদ্দ দেয়া হয়। জেলা ও উপজেলা সংগ্রহ এবং মনিটরিং কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত কৃষক তালিকা অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ নীতিমালা ২০১৭ এর বিনির্দেশ মোতাবেক পন্যের মান যাচাইপূর্বক সংগ্রহ নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়। অধিদপ্তরের প্রেরিত ঐ পত্রে ২০ নভেম্বর ১৯ হতে ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০ পর্যন্ত সময়সীমা বেধে দেয়া হলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষকরা ধান মাড়াই ও শুকাতে নাজেহাল হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে অনেক কৃষকের ধান বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ির আঙিনায় নষ্ট হয়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম, জিন্নাত আমান, কালীগঞ্জের দুধলী গ্রামের কৃষক আতিয়ার রহমান, তালা উপজেলা দাদপুর গ্রামের কৃষক শাহাবান আলী, হাফিজুর রহমান, আজিজুর রহমান, কুমিরা গ্রামের বাসুদেব বসু, পারকুমিরা গ্রামের শেখর ঘোষ, যুগিপুকুরিয়া গ্রামের আবুল কালাম সহ অর্ধ শতাধিক কৃষকের সঙ্গে আলাপ হলে সকলেই ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, ফণী আর অসময়ের বৃষ্টিতে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার কথা বলেন।
এছাড়া অসময়ে টানা ৩/৪ দিন ধরে বৃষ্টিপাতের পর শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে ধান শুকাতে না পেরে খাদ্যগুদামে বিক্রি করা সম্ভবপর হয়ে উঠছে না বলে জানান। এর প্রভাবে জেলার ৯টি খাদ্যগুদামে গত দেড় মাসে যৎসামান্য ধান সংগ্রহ হয়েছে।
গত ৫ জানুয়ারী খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার খাদ্যগুদামে ১শ ৫ মে.টন, কলারোয়ায় ২শ মে.টন, দেবহাটায় ৭৬ মে.টন, কালীগঞ্জে ১শ ৬৭ মে.টন, শ্যামনগরে ০৫ মে.টন, আশাশুনী ৭৬ মে.টন, বড়দালে ১৩ মে.টন এবং তালা খাদ্যগুদামে ২৮ মে.টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। এদিকে তালা উপজেলার সংগ্রহ কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকর্তার একক সিদ্ধান্তে কৃষক প্রতি ৫শ ২০ কেজি বরাদ্দ দেয়ায় কৃষকদের মধ্যে তেমন আগ্রহ নেই বলে জানা গেছে। কারণ জানতে চাইলে কয়েকজন কৃষকের মন্তব্য যাতায়াত খরচ, ব্যাংক একাউন্ট ছাড়াও বোরো আবাদের বীজতলার কাজ নিয়ে তারা চিন্তিত।
ধান সংগ্রহের ধীর গতির বিষয়ে জেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ জাকির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি দুই এক সপ্তাহের মধ্যে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়বে বলে জানান।প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,আশাকরাযায় নির্ধারিত সময় সীমার মধ্যে বরাদ্দের পুরোটাই সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। তিনি আরো জানান, এরই মধ্যে সব উপজেলায় উপজেলার খাদ্য কর্মকর্তাগণ ব্যাপকভাবে কৃষকদের মধ্যে প্রচার প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন।