সাগরে উত্তাল ইলিশ আহরণ বন্ধ, প্রাণ বাচাতে উপকূলে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিশিং ট্রলার

0
445

বাগেরহাট প্রতিনিধি:
৬৫দিনের অবরোধ শেষে সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় মৎস্যপল্লী ও জেলে পরিবারে উৎসবমূখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিলো। কিন্তু বৈরীৎ আবহাওয়া তাদের সেই উৎসব ম্লান হয়ে গেছে আবার ও চোখে- মুখে হতাশা ছায়া।
বর্ষা মৌসুম নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর অশান্ত হয়ে উঠেছে। উত্তাল ঢেউয়ে টিকতে না পেরে ইলিশ আহরণ বন্ধ হয়ে গেছে। সমস্ত ট্রলার সাগর ছেড়ে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। শনিবার সকাল থেকে ট্রলারগুলো কূলে ফিরতে শুরু করে। বর্তমানে সাগরে কোনো ফিশিং ট্রলার নেই বলে বাগেরহাটের শরণখোলার মৎস্যজীবী নেতা ও ট্রলার মালিকরা এই প্রতিনিধিকে বিষয়টি কে জানিয়েছে।
এদিকে, অবরোধ শেষে মাছ ধরা শুরু হতে না হতেই আবহাওয়ার বৈরিতায় উপকূলজুড়ে হতাশা দেখা দিয়েছে। জেলে-মহাজনদের অভিযোগ, অবরোধের সময় ভারতের জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে ইলিশ ধরে নিয়ে যায়। ওই সময়টাতে আবহাওয়াও স্বাভাবিক থাকে। তখন সাগরে নির্বিঘেœ মাছ শিকার করা যায়।
এব্যাপারে, শরণখোলার মৎস্য ব্যবসায়ী মো. কবির আড়ৎদার, জামাল হাওলাদার ও অন্যান্য মহাজন ও জেলেরা জানান, সাগরে ৬৫দিন অবরোধ থাকায় দেশীয় জেলে-মহাজনসহ সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারের কাছে ভারতের সঙ্গে মিল রেখে মার্চ-এপ্রিলে অবরোধ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। তাতে সবাই লাভবান হবে বলে অভিমত তাদের।মৎস্য সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার ঘোষিত গভীর সাগরে ৬৫দিন সব ধরণের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৩ জুলাই ফিশিং ট্রলারগুলো আবার ইলিশ আহরণে ছুঁটে যায় সাগরে। প্রথম ট্রিপে সাগরে জাল ফেলতেই প্রচুর পরিমানে ইলিশ ধরা পড়ে। ট্রলারগুলো ইলিশ বোঝাই করে ফেরে ঘাটে। পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার ১২ হাজার পিচ ইলিশ পেয়েছে কোনো কোনো ট্রলার।
বাগেরহাট জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি ও জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির শরণখোলা উপজেলা শাখার সভাপতি মো. আবুল হোসেন, প্রথম ট্রিপে একেকজন মহাজন পাঁচ লাখ থেকে শুরু ১০-১২ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি করেছেন। দ্বিতীয়বার সাগরে যাবার প্রস্তুতি নিতেই নি¤œচাপ শুরু হয়। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও কিছু ট্রলার সাগরে গিয়ে দুর্যোগের মুখে পড়ে। উত্তাল সাগরে ঢেউয়ের আঘাতে ঠিকতে না পেরে জাল ফেলার আগেই সেসব ট্রলার আবার কূলে ফিরে এসেছে। বর্তমানে উপকূলীয় শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা-রাজৈর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘাট, তাফালবাড়ী, রাজেশ্বর, কোন্তাকাটা, মঠবাড়িয়ার তুষখালী, মাছুয়া খালসহ বিভিন্ন এলাকার খালে কয়েক হাজার ট্রলার নিরাপদে অবস্থান করছে। ওই মৎস্যজীবী নেতা আরো জানান, দীর্ঘদিন মাছধরা বন্ধ থাকায় জেলে-মহাজনরা চরম দুরাবস্থার মধ্যে পড়ে যায়। ধারদেনা করে চলতে হয়েছে সাধারণ জেলেদের। অবরোধ শেষে সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় মৎস্যপল্লী ও জেলে পরিবারে উৎসবমূখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিলো। কিন্তু আবহাওয়ার বৈরীতায় তাদের সেই উৎসব ম্লান হয়ে গেছে। রায়েন্দা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন, ব্যবসায়ী সরোয়ার হোসেন, মহিদুল ইসলাম, লোকমান হোসেনসহ অনেকেই জানান, শরণখোলার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস্য মৎস্য খাত। মাছ ধরা বন্ধ থাকলে এ অঞ্চলের ব্যবসাবাণিজ্যেও তার বিরূপ প্রভার পড়ে। সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার খবরে সর্বত্র একটা খুশির আমেজ বিরাজ করছিলো। হঠাৎ আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় সবকিছুই আবার ঝিমিয়ে পড়েছে।
শরণখোলা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, অবরোধ শেষে সাগরে প্রচুর ইলিশ পড়েছে। এটা অবরোধেরই সুফল। মৎস্যজীবিরা ভারতের সঙ্গে মিল রেখে অবরোধ দেওয়ার যে দাবি জানিয়েছে তা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।