সরকারি স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত ‘ফুডপান্ডা’ খুলনা কার্যালয়ে, ঝুঁকিতে খাবার গ্রহীতারাও

0
725

সুমন আশিক:
খুলনায় করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে কেসিসি’র ১৭নং ওয়ার্ডের করিমনগর এলাকায়। এর সন্নিকটে রয়েছে অনলাইনে খাবার হোম ডেলিভারি ব্যাবস্থাপনা কোম্পানি ফুড পান্ডার কার্যালয়। ১৪ এপ্রিল রাতের ঘটনা। খুমেক থেকে বাসষ্টান্ড পথিমধ্যে অফিসটির সামনে দেখা যায় এক ঝাঁক মানুষের জটলা, সারিবদ্ধ মোটরসাইকেল। মনে কৌতুহল জাগে, থমকে দাড়াই। অবস্থানকারী সকলেই ফুড পান্ডার রাইডার ও কর্মী। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কর্মীদের নিরাপত্তায় কি কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নে সদুত্তর মেলেনি। তবে ভবনটির দোতলায় অফিস কর্তাদের কাছে কথা বলার পরামর্শ দেন সকলে।
এরপর অফিসের অভ্যন্তরে প্রবেশ ও পরিদর্শন। সেখানে দেখা গেছে, তারা নিজেরা পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করেনি। বরং একত্রে জটলা হয়ে সম্পন্ন করছেন অফিসিয়াল কর্মকান্ড। একে একে কালেকশন গুনছেন, দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করছেন। দুয়েকজনের মুখে শুধু মাস্ক পরিহিত ছিল, বাকিদের তাও নেই। এর আগে অফিসটির ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, তাদের রান্নাঘরটি আগোছালো। সেখানো খুবই নোংরা পরিবেশ। দূর্গন্ধ যেন উপচে পড়ছে। অন্যান্য কক্ষগুলোর চিত্রও নাজুক, খুবই অপরিস্কার। এখানে কর্মীদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় ছিল না এবং কখনও এটা থাকে না, তা ছোট্ট কক্ষটিতে কর্মীদের জটলাই জানান দেয়।
এছাড়া আরও দেখা গেছে, ফাড পান্ডার এই কার্যালয়টিতে ডিজিটাল হাজিরা চালু রাখা হয়েছে। প্রতিদিন আগত কর্মীরা উপস্থিতি নিশ্চিত করে এখানে ম্পর্শ করে। অথচ তারা নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে খাদ্য সরবরাহে নিয়োজিত। তবে তারা কি ঝুঁকিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের? আবার একই সাথে ঝুঁকিতে ফেলছেন নাতো কমিউনিটি সংক্রমণের? তাদের এমন চিত্র হতাশার বাণীই দেয়। কেননা খুলনা নগরী জুড়ে তারা হোম ডেলিভারী কাজে নিয়োজিত। এরমধ্যে ফুড পান্ডার কর্মীরা নিজেরা সুরক্ষিত না হলে, অন্যকে অর্থাৎ খাবার সামগ্রী গ্রহণকারী কিম্বা প্রদানকারীকেও সুরক্ষিত রাখতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ফলশ্রæতিতে এক ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে ওই এলাকাসহ গোটা নগরীকে।
এমন ভিডিও ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনার দাবি তোলেন খুলনার মহানগরীর বাসিন্দারা। এবিষয়ে স্থানীয় সোনাডাঙ্গা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মমতাজুল হক খুলনাটাইমসকে বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এনিয়ে ফুডপান্ডার স্থানীয় সমন্বয়কারী তানিম শেখ মুঠোফোনে, গণমাধ্যমের কাছে বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এবং তাদের পিআর এজেন্সীর সাথে কথা বলতে বলেন। খাবার সামগ্রী যারা পৌছে দেয়, তাদের সুরক্ষায় কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নে সে জানায়, তাদের কার্যালয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া সকলের জন্য মাস্কসহ অন্যান্য সামগ্রী দেয়া হয়েছে। তবে বাস্তবে এমন চিত্র মেলেনি, এমন কথায় তিনি ক্ষীপ্ত হন এবং কার অনুমতিতে তার কার্যালয়ে প্রবেশ করেছেন তার জবাবদিহিতা চান। এর আগে প্রতিষ্টানটির খুলনা অফিসের একজন দাবি করেন, মেট্রো থেকে তারা অনুমতি নিয়েছেন। এবিষয়ে তানিম বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ফুডপান্ডাকে অনুমতি দিয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনার আলোকে খাদ্য, কৃষিপন্য ও ঔষধের মত অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ওয়েব হাউস অপারেশন ও পরিবহন এবং ই-কামার্স ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ডেলিভারী প্রদানে সহযোগিতা প্রসঙ্গে বানিজ্য মন্ত্রণালয়’র উপসচিব (অবা-১ শাখা) মোহাম্মদ মনির হোসেন হাওলাদার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের শেষাংশে বলা হয়, চলমান অবস্থায় ই-কমার্সের মাধ্যমে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়কে উৎসাহিত করা এবং এ সংশ্লিষ্ট ডেলিভারিম্যান এবং যানবাহনকে স্বাভাবিক চলাচলে সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা একান্ত প্রয়োজন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এসোসিয়েশন বা প্রতিষ্ঠান মালিকগণ তাদের কর্মীদের প্রয়োজনীয় পরিচয়পত্র এবং স্বাস্থ্য বিধি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও ব্রিফিং প্রদান করবে।
তবে, ২৬ মার্চ সরকারের সাধারণ ছুটির ঘোষণার পর হতে এপ্রতিবেদক সরেজমিন প্রত্যক্ষ করেছেন, ফুডপান্ডার এসকল কর্মীরা বেশিরভাগই সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন না। বরং নগরীর মজিদ স্বরণী রোডস্থ মোড়ে কিম্বা সোনাডাঙ্গা অফিস কার্যালয়ে সামনে দল বেধে আড্ডা দেন। অর্ডার অনুযায়ী খাদ্য সরবরাহ শেষে পুনরায় জড়ো হন তারা। এচিত্র সকাল হতে গভীর রাত অবধি মিলেছে।
এনিয়ে বুধবার বিকেলে স্থানীয় বাসিন্দারা ফুডপান্ডার কর্মীদের ওইখানে জড়ো হতে নিষেধ করেন। এতেই স্থানীয়দের উপর চড়াও হয়ে মারতে উদ্যত হন তারা। এরমধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বাসিন্দা খুলনাটাইমসকে বলেন, ফুডপান্ডায় কর্মরত এসব কর্মীদের আচরণ হিংসাত্বক। এবং ওই মহল্লার একটি খাবার হোটেল থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে সরবরাহ দেয়া হয়, যার মান অত্যন্ত নি¤œ।