সরকারি সহায়তায় আর্থসামাজিক সুরক্ষা পাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা

0
454

সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফ:
বাঙালি জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রাপ্ত স্বাধীনতা। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এ অসামান্য অবদানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে বিভিন্ন কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে আসছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি জাতীয় দিবস যথা: গণহত্যা দিবস, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস, শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং বিজয় দিবস উদযাপনে সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্ব সাফল্যের সাথে পালন করে আসছে। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার মোট ১১৮৭০টি পরিবারকে রাস্ট্রীয় সম্মানি ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। পঙ্গুত্বের হার অনুযায়ী ‘এ’ শ্রেণি (৯৬ শতাংশ-১০০ শতাংশ) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ৪৫,০০০/- (পঁয়তাল্লিশ হাজার) টাকা, ‘বি’ শ্রেণি (৬১ শতাংশ-৯৫ শতাংশ) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ৩৫,০০০/- (পঁয়ত্রিশ হাজার) টাকা, ‘সি’ শ্রেণি (২০ শতাংশ-৬০ শতাংশ) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকা, ‘ডি’ শ্রেণি (০১ শতাংশ-১৯ শতাংশ) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ২৫,০০০/- (পচিশ হাজার) টাকা, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উত্তরাধিকারীদের মাসিক ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকা, বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উত্তরাধিকারীদের ৩৫,০০০/- (পঁয়ত্রিশ হাজার) টাকা, বীর উত্তম বীরত্বভূষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারে মাসিক ২৫,০০০/- (পচিশ হাজার) টাকা, বীর বিক্রম বীরত্বভূষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ২০,০০০/- (বিশ হাজার) টাকা এবং বীর প্রতীক বীরত্বভূষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ১৫,০০০/- (পনেরো হাজার) টাকা হারে রাস্ট্রীয় সম্মানি ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া রেশন, বিদ্যুৎ, গ্যাস সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বিতরণ আদেশ, ২০২০ প্রণীত হয়েছে। উক্ত নীতিমালার আওতায় সামাজিক নিরাপত্তা বলয় কর্মসূচির আওতায় সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ১২,০০০ টাকা হিসেবে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে এবং ভাতা প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা/পরিবারকে ১০,০০০ টাকা হারে বছরে দু’টি উৎসব ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। প্রত্যেক জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে ৫ হাজার টাকা বিজয় দিবস ভাতা এবং ২ হাজার টাকা বাংলা নববর্ষ ভাতাও প্রদান করা হচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ১ লক্ষ ৯১ হাজার ৮৯৮ জনকে ২ হাজার ৭৬৩ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা সম্মানী প্রদান করা হয়েছে। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচিতিমূলক ৩৩ ধরনের প্রমাণক রয়েছে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার একাধিক প্রমাণকে নাম-পরিচয় থাকার কারণে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যাগত বিভ্রাট তৈরি হয় এবং তাদের সঠিক পরিচিতি সম্পর্কে অস্পষ্টতা থাকে। এই বিভ্রান্তি দূর করার লক্ষ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র (ঘওউ) এর সাথে সংযোগ স্থাপন করত: সকল জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওয়ারিশদের ঘওউ এর তথ্যাদি স্বয়ংক্রিভাবে সংগ্রহ পূর্বক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সম্বলিত একটি গধহধমবসবহঃ ওহভড়ৎসধঃরড়হ ঝুংঃবস (গওঝ) প্রস্তুত করা হয়েছে। ঘওউ এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করে প্রত্যেক বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম-পরিচিতি এবং জন্ম তারিখ নির্ধারণ করা হবে এবং প্রত্যেকের পৃথক পরিচিতি নম্বর প্রদান করা হবে। এছাড়া, উক্ত গওঝ এর ভিত্তিতে অক্টোবর, ২০২০ থেকে এড়াবৎহসবহঃ ঞড় চবৎংড়হ (এ২চ) প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরাসরি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা প্রদান করা হবে এবং মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে প্রত্যেক ভাতাভোগীকে অবহিত করা হবে। এর ফলে সম্পূর্ণ হয়রানিমুক্তভাবে অর্থ বিতরণ হবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
-২-
বঙ্গবন্ধু ছাত্রবৃত্তি নীতিমালা ২০১২ এর আওতায় প্রতিবছর ৬০০ জন করে ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। গত ০৬ বছরে মোট ৩ হাজার ৪৬০ জনকে এ বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। সাধারণ ছাত্র/ছাত্রীদের বৃত্তির পরিমাণ মাসিক ১০০০/- (এক হাজার) টাকা এবং মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং এ অধ্যায়নরত ছাত্র/ছাত্রীদের বৃত্তির পরিমাণ মাসিক ১ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া ভারত সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ১০০০ হাজার ছাত্র/ছাত্রী ও স্নাতক পর্যায়ের ১০০০ ছাত্র/ছাত্রীকে প্রতিবছর মোট ৭ কোটি টাকার বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব ঐতিহাসিক ঘটনাবলি, মুক্তিযুদ্ধকালীন উল্লেখযোগ্য ঘটনা, স্থানসমূহকে আগামী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-(০১) ‘সকল জেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ’ প্রকল্প, (০২) ‘উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ’ প্রকল্প, (০৩) ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনাসমূহ সংরক্ষণ ও পুননির্মাণ’ প্রকল্প, (০৪) ‘মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ’ প্রকল্প, (০৫) ‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়)’ প্রকল্প; (০৬) ‘নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণ’ প্রকল্প; (০৭) ‘ঢাকাস্থ গজনবী সড়কে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণার্থে বহুতল বিশিষ্ট আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ’ প্রকল্প; (০৮) ‘মুক্তিযুদ্ধকালীন উল্লেখযোগ্য সম্মুখ সমরের স্থানগুলো সংরক্ষণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্প; (০৯) ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ’ প্রকল্প; (১০) মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ; (১১) ‘ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ’ প্রকল্প; (১২) ‘মিত্রবাহিনীর শহিদ সদস্যদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ প্রকল্প’। মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের আবেগ চেতনার স্থান, সে বিবেচনায় মুক্তিযোদ্ধারা বীরের মর্যাদা পাওয়াটাই স্বাভাবিক। ১৯৭১ হলো বাংলাদেশের জন্ম পরিচয়ের সূতিকাগার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতাকামী মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দালালদের প্রতিরোধ-প্রতিহত করে সফল হওয়ার পরিণতি আজকের বাংলাদেশ। সেই সব সূর্যসন্তানদের যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে সরকারের সাথে দলমত নির্বিশেষে আমাদের সবাইকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে।