সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় খুলনা প্রশাসনের তথ্য ভান্ডার গড়ার উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে

0
570

সুমন আশিক:
সরকারি সম্পত্তির ছবিসহ তথ্য ভান্ডার তৈরির উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিয়ে খুলনাকে মডেল হিসেবে দেশবাসীর সামনে আনে জেলা প্রশাসন। গোটা দেশের প্রশাসন এখন খুলনার এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। অথচ খুলনায়ই এ কার্যক্রমকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে কতিপয় দখলদাররা। এসব জমিখেঁকো’র দৌরাত্মে সরকারের সম্পত্তি রক্ষায় মহতী উদ্যোগ যেন ভেস্তে যেতে বসেছে।
ডুমুরিয়া ভূমি অফিস কর্তৃক সম্প্রতি দুটি খাস জমি চিহিৃতকরণ, লাল পতাকা দিয়ে সীমানা নির্ধারণ এবং সাইনবোর্ড গেথেঁ দেয়ার ঘটনার পর দখলদারদের তা উপড়েঁ ফেলার পুন:ঘটনার মধ্য দিয়ে এই চিত্র ফুঁটে ওঠে। সরকারি সাইনবোর্ড উপড়ে ফেলা দখলদাররা হচ্ছে তানিশা প্রপার্টিজ’র শফিকুল ইসলাম ও নজরুল নগর’র মালিক নজরুল ঢালী।

রবিবার (২৮ ফেব্রæয়ারি) ডুমুরিয়া উপজেলা ভূমি অফিস চক আহসানখালি ও বিল পাবলা মৌজায় দুটি খাস জমি চিহিৃত করে সাইনবোর্ড বসিয়ে দেয়।

বুধবার (৩ মার্চ) বিকালে কৈয়া বাজার হতে রায়েরমহল অভিমুখ সড়কে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আব্দুল ওয়াদুদ আলোচিত খাস দুটি জমির একটিতে (তানিশা প্রপার্টিজ) ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা ভেঙে ফেলার সাথে খাস জমি চিহিৃত করে পুনরায় লাল পতাকাযুক্ত খুঁটি জমিতে গেথেঁ দেয়া হয়।
বুধবারের ভ্রাম্যমান আদালতের এই অভিযানে কেসিসি’র এক কাউন্সিলরের আবাসন প্রকল্পেও অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কৃষি জমি বালু ভরাট করার অপরাধে একজনকে আটক, ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদন্ড দেন ভ্রাম্যমান আদালত।
উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল ওয়াদুদ খুলনাটাইমসকে বলেন, সরকারি সাইনবোর্ড উপড়ে ফেলার ঘটনায় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ’র সাথে আলোচনা সাপেক্ষে তানিশা প্রপার্টিজ ও কর্ণফুলী ট্রেডিং কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, তানিশা এই প্রকল্পের মধ্যে ১ দশমিক ৭৭ একর সরকারের খাস বিলান সম্পত্তি উদ্ধার করে শীঘ্রই চারপাশের খালটি খনন করা হবে। অনুরূপ পদক্ষেপ নেয়া হবে নজরুল নগরের ক্ষেত্রে। এক জবাবে তিনি বলেন, সরকারের জমি-খাল দখলকারী যেই হোক, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
এদিকে তানিশা প্রপার্টিজের মালিক শফিকুল ইসলাম খুলনাটাইসকে বলেন, তারা নন, জমির মালিকরাই সরকারি সাইনবোর্ড উপড়ে ফেলেছেন। এছাড়া তার ওই প্রকল্পের মধ্যে ভুলবশত: খাস জমি রেকর্ড হয়েছে। তিনি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে অবগত করে বলেছেন শীঘ্রই প্রমাণাদি নিয়ে হাজির হবেন।
তবে শফিকুলের এই বক্তব্য সঠিক নয় বলে ইউএনও খুলনাটাইমসকে আরও জানান, সরকারি সম্পত্তি ভুলবশত: রেকর্ড হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তানিশা কর্তৃপক্ষ নিজের অপরাধ ঢাকতে অযাচিত মন্তব্য করছে।
এদিকে তানিশা প্রপার্টিজ’র দলিল লেখক খন্দকার বাহাউদ্দিন খুলনাটাইমসকে জানান, তিনি অন্যান্য গ্রাহকের ন্যায় তানিশা’র বিক্রি করা কিছু জমির দলিল লিখেছেন। তবে কোন খাস জমির দলিল তিনি লেখেননি। জমির ব্যবসায় তানিশার সাথে তার কোন অংশীদারিত্ব নেই। সুতরাং জমি বিক্রির করে খাস সম্পত্তির মধ্যে গ্রাহককে ঠেঁলে দিলে তার দায়ভার প্রপার্টিজ মালিক শফিকুলের, তার নয়।
এবিষয়ে বক্তব্য নিতে নজরুল নগর বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ট্রেডিং’র নজরুল ঢালীর মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সূত্রমতে, রবিবার (২৮ ফেব্রæয়ারি) দুপুরে মোস্তর মোড় সংলগ্ন সংযোগ সড়কে অবস্থিত তানিশা প্রপার্টিজের অভ্যন্তরে ১ দশমিক ৭৭ একর (দাগ নং-৪০১৬১, মৌজা-বিল পাবলা) এবং কর্ণফুলি ট্রেডিং’র নজরুল নগরের মধ্যে ৪ দশমিক ৬৬ একর (দাগ নং-১২৫৩, মৌজা-চক আসানখালি) খাস জমি চিহিৃত করে সাইনবোর্ড দেয় উপজেলা ভূমি অফিস। তবে পরদিনই তা ফেলে দেয়া হয়। অনুরূপ এর আগে লাল পতাকার খুটি পুতেঁ রাখা হলে তাও উপড়ে ফেলে দখলদাররা।

রবিবার (২৮ ফেব্রæয়ারি) ডুমুরিয়া উপজেলা ভূমি অফিস চক আহসানখালি ও বিল পাবলা মৌজায় দুটি খাস জমি চিহিৃত করে সাইনবোর্ড বসিয়ে দেয়।

প্রসঙ্গত, সরকারি সম্পত্তির অবৈধ ব্যবহার বন্ধ ও দখলদারিত্ব হ্রাসের লক্ষ্য নিয়ে খুলনা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গত ২৬ জানুয়ারি ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী দেশের প্রথম টেকসই ডিজিটাল ভূমি ডাটা ব্যাংক উদ্বোধন করেন। শতভাগ খাসজমি চিহিৃতকরণ, ছবিসহ খাসজমি, অর্পিত ও পরিত্যক্ত সম্পত্তি, সায়রাত মহল-এর শক্তিশালী ডাটাবেজ তৈরি করে জনগণের জন্য তথ্য উন্মুক্তকরণসহ নথি আর্কাইভ করে ভূমি তথ্য ব্যাংক তৈরি করা হয়। অনলাইন সফটওয়ার ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে খাসজমি বন্দোবস্ত, জলমহাল, বালুমহাল ও হাটবাজার ইজারা প্রদান করে ই-ভূমি সেবা নিশ্চিত করতে খুলনা জেলা প্রশাসন এই উদ্যোগ গ্রহণ করে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও সরাসরি তত্ত¡াবধানে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।