সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে

0
178

বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্প একটি সম্ভাবনাময় খাত। সেই আদিকাল থেকেই এই বদ্বীপ অঞ্চলের পালতোলা সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণের ইতিহাস ঐতিহ্য রয়েছে এবং এর প্রতœ নিদর্শন অর্থাৎ ধ্বংসাবশেষও আবিষ্কৃত হয়েছে সমুদ্রে। মাঝখানে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এর উন্নয়ন ও বিকাশ ব্যাহত হলেও বর্তমান সরকারের আনুক‚ল্যে ব্যাপক স¤প্রসারণ ঘটেছে বেসরকারী উদ্যোগে। সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈকে দুটি বিলের খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়। এর একটি হলো ‘জাহাজ নির্মাণ শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা-২০২১’। বর্তমানে নেদারল্যান্ডসসহ বিভিন্ন দেশে জাহাজ রফতানি করে বছরে আয় হয় ১ বিলিয়ন ডলার। ২০২৫ সালে জাহাজ রফতানি খাতের অবদান উন্নীত করা হবে ৪ বিলিয়ন ডলারে। এর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রুটেও যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের জন্য জোর দেয়া হবে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে। ফলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নানাবিধ ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের বিকাশ ঘটবে, সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান, হ্রাস পাবে আমদানি নির্ভরতা। চার বছরের মধ্যে এই খাতের কর্মী সংখ্যা বর্তমানে ৩০ হাজার থেকে বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ। উল্লেখ্য, রাজধানীর কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের ফুতল্লা ও মেঘনা, মংলায় পশুর নদী এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর তীরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি জাহাজ নির্মাণ শিল্প কারখানা। চট্টগ্রামের সীতাকুÐে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পুরনো পরিত্যক্ত জাহাজ ভাঙ্গার কারখানা। এর উপজাত বিপুল পরিমাণের লোহা দিয়ে দেশেই তৈরি হচ্ছে উন্নত মানের স্টিল রড, বিলেট, শিট ইত্যাদি, যা রফতানিও হচ্ছে বিদেশে। বাংলাদেশ ২০৪১ রূপকল্পকে সামনে রেখে মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মাণ হচ্ছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর।
ইতোমধ্যে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে দেশের প্রথম সমুদ্রবন্দরের অভিযাত্রা শুরু হয়েছে মালবাহী মাদার ভেসেল পানামার পতাকাবাহী জাহাজ ভেনাস ট্রায়াম্ফ নোঙ্গর করার মাধ্যমে। জাহাজটি ইন্দোনেশিয়া থেকে ৭৩৬ টন ইস্পাত কাঠামো নিয়ে এসেছে, যা ব্যবহার হবে মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য। জাপানি বিশেষজ্ঞদের তত্ত¡াবধানে নির্মিতব্য বন্দরটি পুরোপুরি সচল হতে পারে ২০২৬ সাল নাগাদ। বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির মহাসড়কে অবস্থান করছে, যা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত। জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়ন এতে যোগ করবে বাড়তি মাত্রা। আমরা আশা করি, জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও এগিয়ে যাবে।