সম্পত্তির ভাগ চাওয়ায় খুলনার রোয়েনা বাড়ৈইকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর অভিযোগ

0
553

নিজস্ব প্রতিবেদক :
‘‘আমরা পাঁচ ভাই এক বোন। দীর্ঘদিন যাবত বোনটা বাবার বাড়িতে। ওর নাম রোয়েনা বাড়ৈ মনু (৬২)। সে ১৯৮৬ সালে স্বামীর বাড়ী থেকে বাবার বাড়ী এসেছে। বাবা আজ দুনিয়াতে নেই। বাবার রেখে যাওয়া জমি আমাদের পাঁচ ভাইয়ের নামে দলিল করা হয়েছে। কাগজে কলমে কোথাও মনুর নাম নেই। শুধু আমরা পাঁচ ভাই কেন? বোনও সমান ভাগ পাবে। এই দাবী তোলার কিছুদিন পরই কাউকে কিছু না জানিয়ে, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে সুদুর মুজিবনগর খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতাল কাম বৃদ্ধাশ্রমে স্বার্থপরতার উদ্দেশ্যে আটকে রাখা হয়।’’

এসব কথা বলেন, প্রফেসর জেমস্ দিলীপ বাড়ৈ। ভাই বোনের মধ্যে মেঝ সে। তিনি বলেন, কোন প্রকার চিকিৎসা নয় বরং সুপরিকল্পিত ভাবে তাকে সবার অগোচরে দূরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গত ৮ জুন ২০১৮ তারিখে দুই ভাই ও মৃত ভাইয়ের স্ত্রী যথাক্রমে, চার্লস দীপক বাড়ৈ, এডেল বার্ড এবং মল্লিকা রায় বোনকে পিতৃ-ত্যক্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করবার অশুভ অভিপ্রায়ে-বোনের প্রাপ্য অংশ বিবেচনায় না রেখে ডেভেলপার দিয়ে নিজেদের জন্য প্রাপ্যতার চেয়ে বড় সাইজের ফ্লাট বানানোর কু-মতলবে উন্নত চিকিৎসার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে হঠাৎ মুজিবনগর খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতাল কাম বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিয়েছে। এ ষড়যন্ত্রের পিছনে প্রবাসী বড় ভাই ডা. টমাস বাড়ৈ এর প্ররোচনা প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছে।

প্রশাসনের সহযোগিতায় মনুকে ২৫ অক্টোবর খুলনায় আনা হয়। সে এখন খুলনার ময়লাপোতা মোড়ে ডক্টরস পয়েন্টে চিকিৎসা নিচ্ছে। ওর শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে। সমস্ত শরীরে ক্ষতের দাঁগ। হাসপাতাল কাম বৃদ্ধাশ্রমে তার শারীরিক অবস্থার অনেক অবনতি হয়। সেখানে চিকিৎসা দেওয়া জন্য কোন ডাক্তার নেই। চলাচলের ক্ষমতা ছিলনা তার। সে সরকারের কাছ থেকে পঙ্গু ভাতা পায়। এরই মধ্যে আমি জানতে পারি, ও অনেকবার বিছানা থেকে পড়ে গেছে। ওখানে সে কোন সেবা পাচ্ছে না। সে ফোনে আমাকে বলে, দাদা আমাকে নিয়ে যাও, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।
রোয়েনা বাড়ৈ মনু থাকতো খুলনার বানরগাতী এলাকার গল্লামারী লিংক রোডের হাজী ইসমাঈল ৮৬ নম্বর বাড়ীতে। সেখানে সে মল্লিকা রায়ের কাছে থাকতো। আমার বড় ভাই টমাস্ বাড়ৈ বিদেশে থেকে বোনের জন্য প্রতিমাসে কিছু টাকা পাঠাতেন আর চিকিৎসার দ্বায়িত্ব আমার উপর ছিল।

দিলীপ বাড়ৈর বর্ননা মতে, ১৯৭৬ সালে আব্দুল আজিজ খালাসীর কাছ থেকে আমার বাবা সহ ১৪ জন (প্রগতি হাউজিং সোসাইটি) গঠন করে ১.৪৯৭৫ একর জমি ক্রয় করে। কিছু টাকা কম থাকার কারণে জমিটি খুলনা ধর্মপ্রদেশ ক্যাথলিক বিশপ মাইকেল ডি রোজারিও’র বে-নামীতে দলিল করা হয়। ১৯৮৪ সালে বাবা মারা যান। ৩০ জুন ১৯৯০ সালে বিশপ (প্রগতি হাউজিং সোসাইটি) সেই ১৪ জনকে জমির দানপত্র দলিল স্বাক্ষর করেন। তখন বাবা বেঁচে নেই। ওয়ারেশ হিসেবে আমরা পাঁচ ভাই, মা ও বোন এর স্বাক্ষর এর ভিত্তিতে আমরা ০.১০৮১ একর জমি পাই। জমিটি আমাদের পাঁচ ভাইয়ের নামে দলিল করা হয়। বোন যেহেতু আমাদের কাছে থাকে তাই মৌখিক ভাবে ওর অংশ আমাদের মধ্যে আছে এটা বোনকে বলা হয়। এখন জমিটি ডেভলপারদের কাছে দেওয়া হবে। সেখানে বোনের কোন অংশ বা নাম উল্লেখ থাকছে না। তাই আমি ভাইদের বলি, আমাদের সবার ভাগ থেকে বোনকে ভাগ দেওয়া প্রয়োজন। এরপর থেকেই বোনের সুস্থতা নিয়ে তাদের কোন মাথা-ব্যাথা নেই। সঠিক চিকিৎসার অভাবে বোনের যদি জীবন-সংশয়ের উপক্রমও হয় তাতেও তাদের কোন আপত্তি থাকবে না। এ বিষয় গত ২৯ সেপ্টেম্বর সোনাডাঙ্গা থানায় একটি অভিযোগ করেন দিলীপ বাড়ৈ। এছাড়া ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ হাফিজুর রহমান কয়েকবার দু’পক্ষের সাথে কথা বলেছেন।

রোয়েনা বাড়ৈ’র মেয়ে চন্দনা চক্রবর্তী জানান, মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর বিষয় মেঝ মামা ও আমাকে জানানো হয়নি। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জমির ভাগ চাওয়ার কারনে। আর তারা আমাকেও মায়ের সাথে দেখা করতে দেয়নি। মায়ের শরীরের অবস্থা এখন অনেক খারাপ। ডাক্তার বলেছে বৃদ্ধাশ্রম থেকে দু’একদিন পর আনলে হয়তো তাকে বাঁচানো যেতো না।

মল্লিকা রায় জানান, আমরা তাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাইনি। সে নিজের ইচ্ছায় বড় দাদাকে (টমাস বাড়ৈ) ফোন দিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে চায় বলে জানিয়েছে। আমি ও জানতাম না যে, সে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে চায়। আমি এখবর আমার মেয়ের কাছ থেকে শুনেছি। সে বৃদ্ধাশ্রমে যাবে বিধায় যাওয়ার আগের দিন বাসায় ধর্মীয় প্রর্থনার আয়োজন করা হয়।

চার্লস দীপক বাড়ৈ জানান, বোনের জমির ভাগ দিতে আমরা প্রস্তুত। সে আমাদের কাছে কখনো জমির ভাগ চায়নি। বৃদ্ধাশ্রমে সে নিজের ইচ্ছায় গেছে। তাকে জোর করে পাঠানো হয়নি।

সোনাডাঙ্গা থানার এস আই উত্তম রায় বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে দু’পক্ষকে থানায় ডাকা হয়। সেখানে দু’পক্ষের কথা কাটা-কাটি ও থানার পরিবেশ নষ্ট হবার কারণে তাদেরকে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।