সন্তানের নিরাপত্তা তাহলে কোথায়!

0
429

খুলনাটাইমস ডেস্ক:
সন্তান বিশেষত একটি শিশু পৃথিবীর সব নিরাশার মধ্যেও আশ্রয় খোঁজে পিতা-মাতার বুকে। তাদের বুকে মাথাগুজেই নির্ভার হয় সন্তান। পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন মা-বাবার কাছেও আজ সন্তানরা হয়ে উঠছে অনিরাপদ। মায়ের আঁচলে আশ্রয় নেয়া সন্তানের নির্মম মৃত্যু হচ্ছে মায়ের হাতেই। বাবার ঘাড়ে বসে জীবন চলার শুরুতেই সন্তানের মৃত্যু হচ্ছে বাবার হাতে। সম্প্রতি গোটা দেশের মানুষের বিবেক নাড়া দেয়ার মতো সন্তান হত্যার ঘটনা ঘটে গেছে সুনামগঞ্জে। বাবা আব্দুল বাছির তার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে প্রতিপক্ষের দুই স্বজনের নাম সম্বলিত ছুরি ব্যবহার করে নিজ সন্তানের লিঙ্গ, কান, পেট ও গলা কেটে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখে কদম গাছের ডালে। জানা যায়, স্থানীয় এক ইউপি মেম্বারকে ফাঁসাতেই এ হত্যাকা-।
ক্রমবর্ধমান এ অপরাধপ্রবণতা সমাজের বিবেকবান শ্রেণিকে ভাবিয়ে তুলছে। পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় পিতা-মাতার কাছেই যদি সন্তানের জীবন অনিরাপদ হয়ে যায়, তবে শিশুরা যাবে কোথায়? আর কেনোই বা এই নৈতিক ও মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে বর্তমান সমাজেÑ এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে একের পর এক নির্দয়ভাবে পিতা-মাতার হাতে সন্তান হত্যার ঘটনায়। ইতোপূর্বে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মা শেফালী বেগমের পরকীয়ার বলি হয়েছিল পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র হৃদয়। যাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে ওই মা। আগে একই জেলায় ভবনের চারতলার ছাদ থেকে ফেলে দেড় বছরের শিশু আশফাক জামান জাহিনকে হত্যা করেছে তার মা রোকসানা। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোরসালিন নামের ১০ বছরের সন্তানকে গলাকেটে হত্যা করে বাবা মোসাঈদ। রাজধানীর বাংলা মোটর এলাকায় তিন বছরের শিশু সাফায়েতকে খুন করে তার মাদকাসক্ত বাবা নুরুজ্জামান কাজল।
বস্তুবাদী জীবনব্যবস্থার ভোগবাদী মানসিকতা, তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের ফলে সৃষ্ট নৈতিক স্খলন, বিষণœতা, সুশাসনের অভাব ও ভবিষ্যৎ জীবনের অনিশ্চয়তা, পারিবারিক ও সামাজিক অনুশাসনের অনুপস্থিতি, শরীরবৃত্তীয় মায়ের পরকীয়া সর্বোপরি ধর্মীয় জীবন থেকে বিমুখতাই এ বিপর্যয়ের প্রধান কারণ বলে আমরা মনে করি। বর্তমান পরিস্থিতিতে সমাজের এমন অনাচার রুখতে পারিবারিক ও সামাজিক অনুশাসনকে পুনর্জ্জীবিত করতে হবে বলেও তাগাদা দিচ্ছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। ভালো-মন্দের এ বিবেচনাবোধ তখনই তৈরি হবে, যখন সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থা ধর্মীয় নৈতিকতার আলোকে সাজানো হবে।
সামাজিক অস্থিরতার, স্বার্থান্ধতা, অর্থোপার্জনের অসম প্রতিযোগিতা, প্রতিহিংসা ছাড়াও এসব ঘটাগুলো ঘটার আরও একটি কারণ মনোবিকৃতি বলে আমাদের বিশ্বাস। মনোবিকৃতি না হলে নিজের সন্তান কিংবা পরিবার ও আত্মীয় স্বজনকে এভাবে হত্যা করা যায় না। আমাদের সমাজে এখনো মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত নয়। এ প্রকৃতির মানুষদের সঠিক কাউন্সেলিং করতে পারলে এমন অপরাধকা- থেকে বিরত রাখতে সহায়ক হবে বলে আমরা মনে করি।