সক্রিয় মানব পাচারকারী চক্র সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি

0
178

উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে নারী ও শিশু পাচার। এ পাচার কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে মানবপাচারকারী চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১০। এ সময় ছয় ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ২২টি মোবাইল ফোন ও নগদ ২ হাজার ৩৬০ টাকা উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা পেশাদার নারী ও শিশু পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা বেশ কিছুদিন ধরেই সংঘবদ্ধভাবে ও প্রতারণা করে বিভিন্ন বয়সের নারী ও শিশুদের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করে আসছিল। এর আগে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকা দিয়ে নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। বাংলাদেশ ও ভারতের দুই চক্রের যোগসাজশে পাচারের কাজটি চলত। পাচারের শিকার নারীদের তারা বিভিন্ন অনৈতিক কাজে বাধ্য করত। গত বছরের জুন মাসে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে মানব পাচার রোধে বাংলাদেশের এক ধাপ উন্নতির খবরটি ছিল আশাব্যঞ্জক। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ মানব পাচার নির্মূলের ন্যূনতম মান পুরোপুরি পূরণ করতে না পারলেও সার্বিক প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। কিন্তু সেই প্রতিবেদন প্রকাশের এক মাসের মাথায় দুবাইয়ে নারী পাচারের যে শক্তিশালী চক্রের অপকর্ম ফাঁস হলো তাতে পাচার রোধে অগ্রগতিই কেবল প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হলো দেশের ভেতরে এই পাচারকারী চক্রের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের খবর আগেভাগে জানা যায় না। জানা যায় যখন পাচার ও প্রতারণার শিকার নারী ও বিদেশে গিয়ে দুর্বিষহ পরিস্থিতির শিকার হন। গত বছর ভিয়েতনামে ২৭ বাংলাদেশির আটকে পড়ার ঘটনায় বেরিয়ে আসে, ২০১৮ সাল থেকে একটি চক্র সেখানকার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নামে বহু বাংলাদেশি নাগরিককে পাচার করে আসছে। তারা গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে লোকজনকে মিথ্যা আশ্বাসের ফাঁদে ফেলে চাকরিপ্রার্থীদের ভিয়েতনামে নিয়ে যায়। কাজের লোভ দেখিয়ে বা বিয়ের টোপ দিয়ে ভারতে নাবালিকা এবং কিশোরী পাচারের প্রবণতা বাড়ছে। দেশের মধ্যে কতসংখ্যক নারী পাচার হচ্ছে তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব পাওয়া যায় না। তবে জাতিসংঘের এক পরিসংখ্যানে বিশ্বের ৩৪ শতাংশ নারী নিজ দেশেই পাচার হয়। আর ৩৭ শতাংশ আন্ত-সীমান্ত পাচারের শিকার। পাচার হওয়া নারীদের অনেক সময় তালা মেরে বন্দি করে রাখা হয়। তথ্য মতে, ৫ বছরে বাংলাদেশের ৫ লাখ নারী বিদেশে পাচার হয়েছে। যাদের গন্তব্য ভারত, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। সবচেয়ে নেতিবাচক দিক হচ্ছে, দেশে ফিরে এলেও পাচার হওয়া নারীকে সমাজে কখনোই সহজভাবে গ্রহণ করে না। আত্মীয়-স্বজনরাও তাদের দেখে খারাপ দৃষ্টিতে। আমরা মনে করি এ ক্ষেত্রে নজর দেওয়া উচিত স্থানীয় প্রশাসনের। প্রশাসনের সাহায্য না পাওয়ায় পাচাররোধ সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি ফিরে আসা মেয়েদের স্বাবলম্বী করার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে।