শেষ আটে বায়ার্ন ও চেলসি ;অ্যাটলেটিক ও লাজিও এর বিদায়

0
192

টাইমস খেলাধুলা :ল্যাজিওকে শেষ ১৬’র দ্বিতীয় লেগের ম্যাচের ২-১ গোলে পরাজিত করে দুই লেগ মিলিয়ে ৬-২ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আট নিশ্চিত করেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখ।
মিউনিখের আলিয়াঁজ এরিনাতে প্রথমার্ধে রবার্ট লিওয়ানদোস্কির পেনাল্টিতে এগিয়ে যায় স্বাগতিক বায়ার্ন। দ্বিতীয়ার্ধে পোলিশ এই তারকার বদলী হিসেবে মাঠে নামা এরিক ম্যাক্সিম চুপো মোটিং ব্যবধান দ্বিগুন করেন। ৮২ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে অনেকটা ফাঁকায় দাঁড়ানো মার্কো পারোলো ল্যাজিওর হয়ে সান্তনাসূচক একটি গোল করেছেন।
ম্যাচ শেষে বায়ার্ন মিউনিখ মিডফিল্ডার জসুয়া কিমিচ স্কাই স্পোর্টসকে বলেছেন, ‘প্রতিটি ম্যাচে জয়ী হবার ইচ্ছা আমাদের রক্তে মিশে আছে। এই জয়টা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা আত্মবিশ^াসের সাথে খেলেছি। যদিও এই পারফরমেন্সটা দুর্দান্ত ছিল না, তার উপর ম্যাচের শেষের দিকে গোল হজম করাটাও মেনে নেয়া যায়না।’
ইউরোপীয়ান কাপ থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রূপান্তরিত হবার পর এই জয়ের মাধ্যমে শেষ আটে জায়গা করে নেবার ক্ষেত্রে বার্সেলোনা ১৮বারের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেল বায়ার্ন। এনিয়ে গত দুই বছরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১৯ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়লো বায়ার্ন।
অন্যদিকে বুধবার ঘরের মাঠ স্ট্যামফোর্ড ব্রীজে শেষ ১৬’র দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদকে ২-০ গোলে পরাজিত করে দুই লেগ মিলিয়ে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ইংলিশ জায়ান্ট চেলসি। ম্যাচ শেষে চেলসি বস থমাস টাচেল বলেছেন, ‘অতি ক্ষুধার্ত চেলসির চোখ এখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে।’।
এই ম্যাচের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত গোল খরা কাটিয়েছেন মরোক্কান ফরোয়ার্ড হাকিম জিয়েচ। অক্টোবরের পর এটাই তার প্রথম গোল। প্রথামার্ধে জিয়েচের গোলেই এগিয়ে গিয়েছিল বুুজরা। বদলী বেঞ্চ থেকে উঠে এসে ম্যাচের শেষ মুহূর্তে আরো একটি গোল করেছেন ইতালিয়ান ডিফেন্ডার এমারসন। এই দুই গোলেই লা লিগার শীর্ষে থাকা এ্যাথলেটিকোর বিদায় নিশ্চিত হয়। এর আগে ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোতে প্রথম লেগের ম্যাচে তারা ১-০ গোলে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেয়েছিল।
পরাজয়ের পাশাপশি ৮১ মিনিটে দলের মন্টেনেগ্রোর ডিফেন্ডার স্টেফান সাভিচ কনুই দিয়ে চেলসির জার্মান ডিফেন্ডার এন্টোনিও রুডিগারকে আঘাত করায় লাল কার্ড দেখে মাঠ ত্যাগ করেন। ফলে বাকি সময়টা ১০জন নিয়ে খেলতে হয়েছে সফরকারীদের।
যদি দীর্ঘ সময় ধরেই চেলসি আধিপত্য দেখিয়েছে। এ্যাথলেটিকো অবশ্য স্কোরলাইন যখন গোল শুণ্য ড্র ছিল তখন ইয়ানিক কারাসকোকে ফাউলের অপরাধে সিজার আজপিলিকুয়েটার বিপক্ষে পেনাল্টির আবেদন করেও সফল হতে পারেনি। টাচেল স্বীকার করেছেন ঐ ঘটনায় চেলসি বড় বাঁচা বেঁচে গেছে। এ্যাথলেটিকো বস দিয়েগো সিমিওনে বলেছেন, ‘আমরা কোন কারন খুঁজবো না। একটি ভাল দলের বিপক্ষে আমরা পরাজিত হয়েছি। আমরা তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা যেভাবে আক্রমন করেছে তার বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারিনি।’
জানুয়ারিতে ফ্রাংক লাম্পার্ডের স্থলাভিষিক্ত হবার পর টাচেলের অধীনে এনিয়ে টানা ১৩ ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে চেলসি। টাচেলের অধীনে বদলে যাওয়া চেলসি এ পর্যন্ত মাত্র দুটি গোল হজম করেছে। তাছাড়া সব ধরনের প্রতিযোগিতায় টানা ছয় ম্যাচে চেলসি কোন গোল হজম করেনি। টাচেল বলেন, ‘ছেলেরা সত্যিকার অর্থেই দুর্দান্ত খেলছে। এটা দলের অবিশ^াস্য রেকর্ড। আমি মনে করি পুরো দলই এদিনটির জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষায় ছিল। এই ধরনের লড়াই আমরা বেশ উপভোগ করি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এগিয়ে যাবার জন্য আমরা অত্যন্ত ক্ষুধার্ত ছিলাম।’
২০১৪ সালের পর এই প্রথমবারের মত চেলসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ আট নিশ্চিত করেছে। গত মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ফাইনালে খেলা পিএসজির কোচ ছিলেন টাচেল। এবারও চেলসির হয়ে সেই সাফল্য ধরে রাখতে চান এই জার্মান কোচ। আত্মবিশ^াসী এই কোচ তাই বলেছেন, ‘আমি বিশ^াস করি কোন দলই এই মুহূর্তে আমাদের বিপক্ষে খেলতে চাইবে না। কোয়ার্টার ফাইনালের অর্থ হচ্ছে ফাইনাল থেকে আর মাত্র চার ম্যাচ দুরে রয়েছি আমরা। এটা অনেক বড় একটি ধাপ। এর অনুভূতিও বিশেষ আনন্দের।’
২০১২ সালে চেলসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের একমাত্র শিরোপাটি দখল করেছিল। গত চার মৌসুমে নক আউট পর্বের প্রথম ধাপেই বিদায় নিয়েছে। কিন্তু বুখারেস্টে অনুষ্ঠিত প্রথম লেগে অলিভার গিরুদের দুর্দান্ত ওভারহেড কিকে এ্যাথলেটিকোকে ১-০ গোলে পরাজিত করার পর কখনই পিছনে ফিরে তাকায়নি বুুজরা। কালকের ম্যাচে শুরুর দিকে পেনাল্টি এরিয়ান মধ্যে কারাসকোকে পিছন থেকে ফাউলের অপরালে আজপিলিকুয়েটা কোনমতে রেফারির চোখ এড়াতে সক্ষম হয়েছে। সিদ্ধান্তটি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ভিএআরও কোন সুখবর দিতে পারেনি এ্যাথলেটিকোকে। ৩৪ মিনিটে চেলসি এগিয়ে যাবার পর সিমিওনের রাগ আরো বেড়ে যায়। গত ২৭ ম্যাচে মাত্র দুই গোল করা টিমো ওয়ার্নারের ওপর কালও আস্থা রেখেছিলেন টাচেল। আর জিয়েচের গোলটিতে বল যোগান দিয়ে ওয়ার্নারও কোচের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। কিয়েরান ট্রিপিয়ারের ক্রস বুক করে দিয়ে ওয়ার্নার বাম দিক থেকে কেই হাভার্টজের দিকে বল বাড়িয়ে দেন। সেই বল থেকে আবারো ওয়ার্নার বল নিয়ে এ্যাথলেটিকো রক্ষনভাগকে ফাঁকি দিয়ে জিয়েচকে দিয়ে গোল করে চেলসিকে লিড এনে দেন। ইনজুরি আক্রান্ত ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভার স্থানে মাঠে নামা এমারসন স্টপেজ টাইমে ক্রিস্টিয়ান পুলিসিচের পাস থেকে বুুজদের ব্যবধান দ্বিগুন করার পাশাপাশি দলের জয় নিশ্চিত করেন।