শেখ রাসেল ইকোপার্ক ঘিরে সম্ভাবনার হাতছানি

0
3041

এম জে ফরাজী : খুলনার রূপসা নদীর তীরে প্রায় ৪৩ একর খাস জমিতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে শেখ রাসেল ইকোপার্ক। নদীর পাড় ঘেঁষে এই পার্ক নির্মাণের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে খুলনাবাসী। তাই তো পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর আগেই বিনোদনপ্রেমীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে গোটা পার্ক এলাকা। বর্তমানে পার্কটির অনেকাংশের শেষ হলেও কবে নাগাদ সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে তার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না জেলা প্রশাসন।


সূত্র জানায়, রূপসা সেতুর ১.৯ কি.মি. দক্ষিণে বটিয়াঘাটা রাস্তার পার্শ্বে রূপসার শাখা নদী কাজীবাছার পার্শ্বে প্রায় ৪৩ একর সরকারি খাস জায়গায় ‘শেখ রাসেল ইকোপার্ক’ স্থাপনের পরিকল্পনা করে খুলনা জেলা প্রশাসন। জমি অনুমোদন ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করে ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে পার্কের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে কাজ শেষ না হলেও প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ইকোপার্ক এলাকায় ভিড় জমাচ্ছে। এজন্য রূপসা নদী সংলগ্ন পুল, দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য দুই পাশে বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হয়েছে। সুন্দরবনের বিভিন্ন বৃক্ষরাজি দিয়ে বনের আবহ তৈরি করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গভাবে পার্কটি চালু না হলেও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এখানে আসা বিনোদনপ্রেমীরা।
পার্কে আসা ইউনুস আলী নামের এক দর্শনার্থী জানান, তিনি পেশায় চাকুরীজীবী। সাতক্ষীরা থেকে খুলনায় বেড়াতে এসে বিনোদনের তেমন কোন জায়গা না পাওয়ায় তিনি বন্ধুদের মাধ্যমে ইকো পার্কের নাম শুনে এখানে ঘুড়তে এসেছেন। তিনি মনে করেন, পার্কটির সম্পূর্ণকাজ শেষ হলে খুলনা বিভাগের মধ্যে এটি হবে সর্ববৃহৎ বিনোদনকেন্দ্র।
খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম ও কাজী সাদিকুল ইসলাম জানান, মানুষ পরিবর্তন চায়। মুক্ত আকাশের নিচে আসতে চায়। খুলনায় বিনোদনের তেমন কোন জায়গা না থাকায় আমরা এখানে ঘুড়তে এসেছি। এ পার্কটির পরিবেশ আমাদের মুগ্ধ করেছে। খোলা আকাশের নিচে, নদীর ধারে এক সম্ভাবনাময় পার্ক হচ্ছে এটি।


এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন জানান, পার্কটির কাজ এখনো সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়নি। খুলনা শহরে তেমন কোন বিনোদনের জায়গা না থাকায় এখনই এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কাজ শেষ হলে শেখ রাসেল ইকোপার্কটি হবে দেশের অন্যতম আধুনিক পার্ক। আধুনিক পিকনিক স্পট, মিনি সুন্দরবন, সুইমিংপুল স্থাপন করা হবে। শিশুদের জন্য থাকবে ব্যতিক্রমী কিছু রাইড। বয়স্ক লোকরাও বিনোদনে অংশ নিতে পারবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি তেমন কোন অর্থ না পাওয়ায় বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অর্থ সংগ্রহ করে পার্কটি তৈরি করা হচ্ছে। কবে নাগাদ পার্কটির সম্পূর্ণকাজ শেষ হবে বলতে পারছি না। তবে জেলা প্রশাসন দ্রুতই পার্কটির কাজ শেষ করতে চায় বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, সাধারণ মানুষের বিনোদনের জন্য এ পার্কটি তৈরি করা হচ্ছে। ইকোপার্ক নামকরণের কারণে এখানে কৃত্রিম কোনো কিছু নির্মাণের পরিকল্পনা নেই জেলা প্রশাসনের। পার্কটিতে জলাশয়ের উন্নয়ন করে লেক সৃষ্টি করা এবং সুরম্য করা হবে। লেকের দুপাশে পায়ে চলার পথ সুসজ্জিত করা হবে। লেকের মধ্য দিয়ে কাঠের রাস্তা (নীচে কংক্রিটের পিলার) তৈরী করা হবে। পানির উপর ভাসমান রেস্টুরেন্ট স্থাপন করা হবে। পানির বিভিন্ন রঙিন ঝর্ণা সৃষ্টি করা হবে। ফিস মিউজিয়াম স্থাপন, সম্ভব হলে এ্যাকুরিয়াম। উক্ত ফিস মিউজিয়ামে বিভিন্ন মাছ ও প্রাণীর ফসিল সংরক্ষণ করা হবে। হেরিটেজ মিউজিয়াম স্থাপন করে সুন্দরবন এলাকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধরে রাখা হবে। একদিকে বনায়ন সৃষ্টি করে পাখি ও বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য সৃষ্টি করা হবে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্রের ম্যাপ প্রদর্শন করা হবে। স্থানীয় জনগণকে পর্যটকদের সেবাধর্মী কাজে ব্যবহার করে তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। ইকোপার্কটি নির্মিত হলে পার্কে বসে দর্শনার্থীরা রূপসা সেতুর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। শহরের কোলাহল ছেড়ে, নিরিবিলি অবসর সময় কাটাতে প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এ পার্কটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত হবে।