শুধু লোকসান আর লোকসান রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো লাভের মুখ দেখবে কবে?

0
111
মুম্বাইয়ে পরিত্যক্ত হাসপাতাল থেকে ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার

টাইমস সম্পাদকীয় : রাষ্ট্রীয় ৩০ করপোরেশনের মধ্যে ২৪টির কাছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ৪৮ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪টি আবার ঋণখেলাপি। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) ১২টি প্রতিষ্ঠানের লোকসানের পরিমাণ হচ্ছে ৫ হাজার ৪ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা’ থেকে এসব তথ্য জানা যায়। সরকারি করপোরেশনগুলোয় ঋণ ব্যবহারে বড় ধরনের দুর্নীতি থাকার কথা কারও অজানা নয়। বস্তুত মাত্রাতিরিক্ত রাজনৈতিক প্রভাব, ট্রেড ইউনিয়নের অনৈতিক হস্তক্ষেপ, অধিক জনবল, ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা ও অদক্ষতা, মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে ব্যর্থতা ও ব্যয় আধিক্য কাটিয়ে উঠতে না পারায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেও এ ক্ষেত্রে কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না; বরং বছরের পর বছর লোকসান ও ঋণের পাল্লা ভারী হচ্ছে, যা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। দেশের অর্থনীতিতে রাষ্ট্রীয় করপোরেশনগুলোর দায়দেনা ও লোকসানের বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ, তা বলাই বাহুল্য। অথচ এ বিষয়টিকে কখনই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়নি। বিষয়টি নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। এ কারণে সংস্থাগুলোর লোকসান অব্যাহতভাবে বাড়ছে; উপরন্তু তারা ঋণ নিয়ে তা আর পরিশোধ করছে না। এর বাইরে সংস্থাগুলোর রাজস্ব দায়বদ্ধতাও বিশাল। এ অবস্থায় লোকসানি ও ঋণের ভারে জর্জরিত রাষ্ট্রীয় এসব সংস্থাকে কীভাবে লাভজনক করা যায়, এ বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা উচিত। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ খাতে এত বেশি লোকসান না হলে টাকাগুলো উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহার করা যেত এবং তা দেশ ও জনগণের জন্য ইতিবাচক হতো। সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠান লোকসানি হওয়ার পেছনে নানাবিধ কারণ থাকে। এর মধ্যে মাথা ভারী প্রশাসন ও দুর্নীতি অন্যতম, যা থেকে মুক্ত হতে পারছে না রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো। মূলত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় ক্ষমতার অপব্যবহার, ভুয়া বিল-ভাউচারসহ অন্যান্য আর্থিক দুর্নীতির নিত্যনতুন কৌশল আবিষ্কার করে লুটপাট চালানো হয়। এ প্রক্রিয়ায় কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্পদের পাহাড় গড়ে তুললেও রাষ্ট্র প্রভ‚ত ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। মনে রাখতে হবে, কোনো প্রতিষ্ঠান লাভজনক হতে হলে প্রথমেই এর উন্নত ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অথচ সরকারি সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে কখনোই তেমন মনোযোগ দেওয়া হয়নি। কথায় আছে-‘সরকারি মাল, দরিয়ামে ঢাল;’ অর্থাৎ কোনো জিনিস যদি রাষ্ট্রের হয়, তবে সেক্ষেত্রে লাগামহীন অপচয় ঘটলেও কোনো সমস্যা নেই। যুগ-যুগান্তর ধরে লোকসমাজে প্রচলিত এ আপ্তবাক্য যে এখনো আমাদের জন্য শতভাগ প্রাসঙ্গিক, তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর অব্যাহত লোকসান ও ঋণ বৃদ্ধির সংবাদে। বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ দরিদ্র দেশটির জন্য দিনের পর দিন সরকারি অর্থের অপচয় ঘটিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান চালানোর অর্থই হলো ‘গরিবের হাতি পোষা’। তাই এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো লাভজনক হতে পারে। এজন্য সর্বাগ্রে দরকার সরকারের মানসিকতার পরিবর্তন। বস্তুত দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করা জরুরি। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনকে শতভাগ কার্যকর করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। পরবর্তী প্রজন্ম যদি দুর্নীতির কুফল সম্পর্কে অবহিত হয়ে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তবে সমাজ থেকে দুর্নীতি নির্মূল হতে বাধ্য। দেখা যাচ্ছে, উল্লিখিত রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর ঋণ ও লোকসানের পাল্লাই কেবল ভারী হচ্ছে না; তাদের রাজস্ব দায়বদ্ধতাও ক্রমেই বাড়ছে। এ অবস্থায় সংস্থাগুলোকে লাভজনক করতে সরকারের অনমনীয়তা ও দৃঢ়তার কোনো বিকল্প নেই বলে আমরা মনে করি।