শীতার্তদের পাশে দাঁড়ান

0
576

 

মাঘের শীতে নাকি বাঘও পালায়। মাঘ আসেনি। তবে পৌষের শেষের দিকে শৈত্যপ্রবাহ আর ঘনকুয়াশায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। রাজশাহীতে তীব্র শীতে গত কয়েকদিনে মারা গেছে চার শিশু। নওগাঁয় এক বৃদ্ধের মারা যাওয়ার খবর এসেছে গণমাধ্যমে। তীব্র শীতে ভাসমান, ছিন্নমূল ও শ্রমজীবী মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতেও বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। এ অবস্থায় শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

গত সোমবার সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নীলফামারীর সৈয়দপুরের তাপমাত্রা ছিল ২ দশমিক ৯ ও ডিমলায় ৩ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি শৈত্যপ্রবাহ আর ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা গরম কাপড় কিনতে না পেরে খরকুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ষড়ঋতুর এই দেশে একেকটি ঋতু একেক রূপ রঙ নিজে হাজির হয়। অভ্যন্ত মানুষজন প্রকৃতির এই পালাবদলের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে নানা প্রচেষ্টা চালায়।

‘তীব্র শীতে দরিদ্র ও অসহায় মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেজন্য গরম কাপড় সরবরাহ করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু সরকার নয় সমাজের বিত্তবানরা এ জন্য এগিয়ে আসতে পারেন। অনেক সংগঠনই এ সময় পুরাতন কাপড় সংগ্রহ করে শীতার্তদের মধ্যে বিতরণ করে। এই মানবিক কর্মে যুক্ত হতে পারেন।’

শীত এলে অনিবার্যভাবেই প্রকৃতিতে ঘটে কিছু পরিবর্তন। হেমন্তের ফসল কাটা শেষ হয়। নবান্নের সঙ্গে পিঠাপায়েসের আয়োজন চলে গ্রামাঞ্চলে। এই নগরেও এখন মৌসুমী পিঠা বিক্রেতারা তাদের পসরা সাজিয়ে বসেছে। শীত একদিকে যেমন উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে। অন্যদিকে তীব্র শীত জীবনযাত্রা বিপন্ন করে তোলে মানুষজনের। বিশেষ করে দরিদ্ররা শীতের কাপড়ের অভাবে কষ্ট পায়। এই সময় শীতজনিত নানা রোগব্যাধিও দেখা দেয়।

শীত মৌসুমে শিশুদের ঠান্ডাজনিত নানা রকম রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। ডায়রিয়া, জ্বর, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয় শিশুরা। উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইতোমধ্যেই জেঁকে বসেছে শীত। কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে চারদিক। কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে আসে। দূরপাল্লার গাড়ি চলাচলও বিঘ্নিত হয়। এ জন্য বাস চলাচলে সতর্কবার্তা জারি করা উচিত। এ সময় শৈত্যপ্রবাহেরও আশঙ্কা থাকে।

প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে ঋতুর পরিবর্তন হবে। এটাই স্বাভাবিক। এ জন্য প্রতিটি ঋতুই যেন উপভোগ করা যায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকা অত্যন্ত জরুরি। শীতজনিত রোগব্যাধি থেকে মানুষজনকে রক্ষার করার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। তীব্র শীতে দরিদ্র ও অসহায় মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেজন্য গরম কাপড় সরবরাহ করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু সরকার নয় সমাজের বিত্তবানরা এ জন্য এগিয়ে আসতে পারেন। অনেক সংগঠনই এ সময় পুরাতন কাপড় সংগ্রহ করে শীতার্তদের মধ্যে বিতরণ করে। এই মানবিক কর্মে যুক্ত হতে পারেন। দিতে পারেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে। কবি সুকান্ত যেমন করে সূর্যের কাছে উত্তাপ চেয়েছিলেন ‘রাস্তার ধারের উলঙ্গ ছেলেটির জন্য’ তেমনিভাবে আমাদের মধ্যে এই শীতে মানবিকতার উন্মেষ ঘটাতে হবে। আর তখনই শীত কষ্টের ঋতু না হয়ে উৎসবের ঋতু হয়ে উঠবে।