শিমু হত্যার রহস্য উৎঘাটন ধর্ষক হাবিবুর ও তার বোন সাদ্দামের স্ত্রী শারমিন গ্রেফতার

0
921

ফুলবাড়ীগেট প্রতিনিধিঃ কুয়েট ক্যাম্পাসস্থ উন্মেষ সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী যোগিপোল ৭ নং ওয়ার্ডের জব্বারের বাড়ীর ভাড়াটিয়া ট্রাক ড্রাইভার হালিম হাওলাদারের কন্যা সাদিয়া আক্তার শিমু(৮)কে ধর্ষণ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ধর্ষনের পর শিমুর অবস্থার অবনতি হওয়ায় এবং ঘটনা জানাজনির ভয়ে তাকে হত্যা পরিকল্পনা করে হাবিবুর ও তার বোন শারমিন। ঘটনা ভিন্ন দিকে প্রভাবিত করতে পরিকল্পিত হত্যাকে অপমৃত্যু বলে চালিয়ে দিয়ে সাজানো হয় পানিতে ডুবে মৃত্যুর নাটক। শনিবার ঘটনার সাথে জড়িত সাদ্দামের শালা মোঃ হাবিবুর রহমান(২০)কে কোটালীপাড়া থেকে এবং তার বোন সাদ্দামের স্ত্রী শারমিন(২৮)কে মহেশ^রপাশা থেকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশকে এমন তথ্য দিয়েছেন বলে পুলিশ জানান। গতকাল রবিবার দুপুরে প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে তাদেরকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি সম্পন্ন শেষে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এই ঘটনায় নিহত সানজিদা আক্তার শিমুর নানা তোতা মিয়া বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় ধর্ষণ করে হত্যার অভিযোগ এনে সাদ্দামের শালা মোঃ হাবিবুর রহমান(২০) এবং মহেশ^ারপাশা সাহেবপাড়ার সাদ্দামের স্ত্রী শারমিনকে আসামী করে মামলা দায়ের করে মামলা নং ১০, তাং ৬/১০/১৮।
মামলার বিবরণে জানাগেছে, গত ১/১০/১৮ তাং সন্ধ্যায় সাদিয়া আত্তার শিমু এবং শিমুর মামা শিশু মাহফুজ(৬)কে শিমুর মামার বন্ধু সাদ্দাম ও তার স্ত্রী শারমিন মহেশ^রপাশা সাহেবপাড়াস্থ তাদের বাড়ীতে বেড়াতে নিয়ে যায়। ঐদিন রাত ১০টায় শিমুর মা আখি তাকে আনতে গেলে তারা শিমুকে না দিয়ে পরের দিন দুপুরের পর দিয়ে আসবো বলে জোর পুর্বক তাকে রেখে দেয়। পরের দিন ২/১০/১৮ তাং সকালে সাদ্দাম এবং তার স্ত্রী শারমিন কাজে বাহিরে চলে গেলে বাসা ফাঁকা পেয়ে সাদ্দামের শালা হাবিবুর কৌশলে সাদ্দামের মেয়ে অথৈই(ভাগ্নী) এবং মাহফুজকে বাড়ীর বাইরে পাঠিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরবর্তিতে শিমুর শারিরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় এবং ঘটনা বাড়ীতে বলে দেওয়ার কথা বলায় শিমুকে সাদ্দামের শালা হাবিবুর এবং তার স্ত্রী হাবিবুরের বোন শারমিন পানিতে ডুবিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। বিষয়টি ভিন্নদিকে নিতে তারা পানিতে ডুবে শিমুর মৃত্যু হয়েছে বলে চালিয়ে দেয়। পরে নিজেরা তাড়াহুড়ো করে লাশের গোসল দিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করে। সাঁতার জানা শিমু পানিতে ডুবে মৃত্যুর বিষয়টি মানতে না পেরে এবং মৃত্যুর বেশ কিছু আলামতের কথা শুনে শিমুর নানা তোতা শেখ খানজাহান আলী থানা পুলিশ এবং দৌলতপুর থানা পুলিশের সহযোগিতায় শিমুর লাশ ময়না তদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ময়না তদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসতে থাকে।
মামলার বাদী শিমুর নানা তোতা শেখ বলেন, নাতনী শিমুকে ধর্ষণ করে নির্মমভাবে হত্যা করে অভিযুক্তরা তাড়া হুড়ো করে লাশ দাফন করার চেষ্টা চালায়। বিষয়টি বুঝতে পেরে আমি লাশের ময়না তদন্ত করার ব্যবস্থা করি। তিনি বলেন আমি আমার ফুটফুটে শিশু মাছুম নাতনীকে যারা ধর্ষণ করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে সেই সাদ্দামের শালা মোঃ হাবিবুর রহমান(২০) এবং সাদ্দামের স্ত্রী শারমিন(২৮)কে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
এদিকে শিশু শিমুকে হত্যার অভিযোগে তার নানা বাদী হয়ে সাদ্দামের শালা মোঃ হাবিবুর রহমান(২০) এবং সাদ্দামের স্ত্রী শারমিন(২৮) কে আসামী করে ধর্ষণ করে হত্যার অপরাধ সহায়তা এবং গোপন করায় অরাধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন২০০০(সং/০৩) এর ৯(২)/৩০ ধারায় মামলা দায়ের করেছে(মামলা নং ১০, ৬/১০/১৮)। মামলা দায়ের পরই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) সৈয়দ মোশারেফ হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে মামলার ১নং আসামী মোঃ হাবিবুরকে টুঙ্গিপাড়ার কোটালীপাড়া থেকে এবং ২নং আসামীকে মহেশ^রপাশা থেকে গ্রেফতার করে। গতকাল রবিবার আসামীদের খুলনার প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির শেষে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি(তদন্ত) সৈয়দ মোশারফ হোসেন জানান, অভিযুক্ত হাবিবুর ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে ধর্ষণ করে হত্যার কথা স্বিকার করেছে। হত্যার সাথে কেকে জড়িত এ ব্যাপারে তিনি বলেন জবানবন্দির কাগজ পেলে বিস্তারিত বলা যাবে। তবে আসামীরা বেশ কিছু গুরুত্বপুর্ণ তথ্য দিয়েছে যা তদন্তের স্বার্থে বলা যাবে না। এলাকাবাসী ধর্ষক এবং এই নির্মম হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলখ শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য নগরীর খানজাহান আলী থানাধীন যোগিপোল ৭ নং ওয়ার্ডের জব্বারের বাড়ীর ভাড়াটিয়া ট্রাক ড্রাইভার হালিম হাওলাদারের মেয়ে কুয়েট উন্মেষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর মেধাবী ছাত্রী সাদিয়া আক্তার শিমু(৮) দৌলতপুর থানাধীন রেলিগেট সাহেবপাড়া এলাকায় সাদিয়ার মামার বন্ধু সাদ্দামের বাসায় বেড়াতে গিয়ে ২ অক্টোবর ধর্ষণ করে নির্মম ভাবে হত্যা করে। পরে প্রভাবশালী একটি মহলের যোগসাজসে শিমুর মৃত্যুকে পানিতে ডুবে অপমৃত্যু বলে চালিয়ে দিয়ে থানায় অপমৃত্যু মামলা করা হয়।