শিক্ষকদের দীর্ঘ কষ্টের অবসান

0
363

নতুন অর্থবছরে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে। তীর্থের কাকের মতো দীর্ঘ কষ্টের অপেক্ষার একদিন হয়তো অবসান হবে, এ আসায় ছিলেন শিক্ষকরা। অবশেষে শিক্ষকদের সে আশা ও বাসনার সু-অবসান হলো। গত বুধবার গণভবনে নতুন এমপিও হওয়া ২ হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। এমপিওভুক্তির এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে গত জুলাই থেকে। তবে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার মান ধরে রাখতে না পারলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রাধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইতোপূর্বে ২০১৩ সনে একই সাথে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করে হাজার হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজকে সরকারি চাকুরি প্রদান করা হয়। এরপর ২০১০ সালে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে আন্দোলন, সংগ্রাম, সভা-সমাবেশ আর আমরণ অনশন পালন শেষে দীর্ঘ ৯ বছরের প্রতীক্ষার অবসান হলো ২ হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির মাধ্যমে।
এমপিওভুক্তির নতুন নীতিমালা বাতিল করে পুরোনো নিয়মে স্বীকৃতি পাওয়া সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির দাবিতে গত মঙ্গলবারও আন্দোলনে ছিলেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের বৈঠকের পর কর্মসূচি স্থগিত করেন তারা। মন্ত্রীর বাসায় এই বৈঠক হয়। পরে তাদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান মন্ত্রী। এদিকে, এমপিওভুক্তির ঘোষণা আসলেও দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রতিষ্ঠানই এ তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। এমপিও নীতিমালা ২০১৮-র অসঙ্গতির কারণে এসব প্রতিষ্ঠান বাদ পড়েছে বলে জানা যায়। বাদ পড়া প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী, বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। শিক্ষকেরা না বাঁচলে দেশ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা শিক্ষা, কোনোটিই রক্ষা করা যাবে না। শিক্ষকসমাজকে পিছনে রেখে রাষ্ট্র কখনোই এগিয়ে যেতে পারবে না। যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার ক্ষেত্রে যোগ্যতাকে বড় মাপকাঠি ধরা হয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করি, বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে যোগ্যতা শিথিল করারও দরকার রয়েছে। যেমন- দুর্গম অঞ্চল, হাওর অঞ্চল, পাহাড়ি অঞ্চল, চরাঞ্চলসহ কম জনবসতিপূর্ণ এলাকা ও বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নীতিমালা শিথিল করা জরুরি।
নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীন স্কুল ও কলেজ রয়েছে ১ হাজার ৬৫১টি। এ ছাড়া কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের অধীন মাদরাসা রয়েছে ৫৫৭টি। এর মধ্যে দাখিল স্তরের ৩৫৮, আলিমে ১২৮, ফাজিলে ৪২ ও কামিল স্তরের ২৯টি মাদরাসা রয়েছে। পাশাপাশি নতুন এমপিওভুক্ত হয়েছে ৫২২টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে কৃষিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ৬২টি, ভোকেশনাল (স্বতন্ত্র) ৪৮টি, সংযুক্ত ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠান ১২৯টি, বিএম স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান ১৭৫টি এবং বিএম সংযুক্ত প্রতিষ্ঠান ১০৮টি।
শিক্ষার্থীরা স্কুলপর্যায় থেকেই কারিগরি শিক্ষা বা ভোকেশনাল ট্রেনিং যাতে নিতে পারে সেদিকে সরকারকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা জরুরি বলে আমরা মনে করি। কারণ, দেশে-বিদেশে যেখানেই হোক কর্মসংস্থানের প্রয়োজনে কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে।