রুম্পার মৃত্যুতে সিদ্ধেশ্বরীতে মানববন্ধন

0
420

খুলনাটাইমস: ঢাকার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পা ‘হত্যার’ বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার দুপুরে সিদ্ধেশ্বরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাসের ফটক থেকে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আধা ঘণ্টার এই কর্মসূচিতে অংশ নেয় বলে রমনা থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) মাহফুজুল হক ভূঁইয়া জানান। শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে যান। সেখানে তারা মানববন্ধন করে রুম্পা ‘হত্যার’ সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন। বুধবার রাতে সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডে দুই ভবনের মাঝখানের এক গলি থেকে রুম্পার লাশ উদ্ধার করা হয়। আশপাশের কোনো ভবন থেকে পড়ে ওই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করলেও সে সময় তার পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ। পরে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বজনরা মর্গে গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করেন। রুম্পা ঢাকার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষে পড়তেন। মালিবাগের শান্তিবাগে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। তার বাবা রোকনউদ্দিন হবিগঞ্জ জেলা পুলিশে কর্মরত। রুম্পার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন ওই থানার এসআই আবুল খায়ের। তিনি বলেন, বুধবার সন্ধ্যার পর রুম্পা বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন। সঙ্গে নিজের মোবাইল ফোনও নেননি তিনি। উঁচু থেকে পড়ে শরীরের যে ধরনের জখম হয়, রুম্পার শরীরে সে ধরনের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা খায়ের। ময়নাতদন্ত শেষে গত বৃহস্পতিবার রাতেই রুম্পার লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে তার মৃত্যুর বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। এজন্য ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছে তারা। রমনা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, তার মৃত্যু কীভাবে হয়েছে এবং সেখানে কীভাবে তার লাশ পড়ে থাকল, সে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। রুবাইয়াত শারমিন রুম্পা (২১) পুলিশ পরিদর্শক রোকন উদ্দিনের মেয়ে। এদিকে, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শেখ মোহাম্মদ শামীম গতকাল শুক্রবার জানিয়েছেন, রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর সার্কুলার রোডের আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের পেছনের একটি বাড়ির ছাদ থেকে তাঁকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। শেখ মোহাম্মদ শামীম বলেন, অপমৃত্যুর মামলা না করে রমনা থানার এসআই খায়ের বাদী হয়ে এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আমরাও ধারণা করছি, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় কে বা কারা জড়িত, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। রমনা মডেল থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলে তিনটি ভবন আছে। আমরা ধারণা করছি, যেকোনো একটি ভবন থেকে তাঁকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আমরা কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি। হত্যা মামলাও হয়েছে আসামিকে অজ্ঞাত করে। ঘটনাস্থলের পাশের যে ভবনগুলো আছে, ওই ভবনের দায়িত্বে থাকা লোকদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছি। দ্রুতই একটি ফল পাব বলে মনে হয়। মনিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার রাতেই হবিগঞ্জ জেলার পুলিশ পরিদর্শক রোকন উদ্দিনকে এ ঘটনা জানানো হয়। পরে তিনি ঢাকায় আসেন। এর আগে তাঁর পরিবার লাশ শনাক্ত করে। মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সব ধরনের রিপোর্ট চেয়েছি। হত্যার আগে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে কি না, সেটাও আমরা জানতে চেয়েছি। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে শারমিন রুম্পার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বলেন, রুম্পাকে হত্যা করে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। প্রথম যখন আমি লাশটি দেখি, তখন লাশের দুই পা ও হাত ভাঙা দেখেছি। মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। চোখে-মুখে রক্ত লেগে ছিল। ওপর থেকে পড়লে যেমন হওয়ার কথা, আমরা তেমন লাশই পেয়েছি। তবে হত্যার আগে ওই তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা আলামত সংগ্রহ করেছি। আলামত পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে আসল ঘটনা জানা যাবে। এদিকে পুলিশ পরিদর্শক রোকন উদ্দিনের ভাই নজরুল ইসলাম বলেন, হত্যার পর তাকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে, এটা নিশ্চিত। তদন্ত চলছে, দেখা যাক কী হয়। আমার ভাতিজির সঙ্গে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। তাদের ভেতরে ঝামেলা চলছিল বলে আমরা শুনেছি। তবে এই হত্যাকা-ের সঙ্গে ওই ছেলের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা আমরা জানি না। আজ আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছি। কর্তৃপক্ষ ওই ছেলেকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। নজরুল ইসলাম বলেন, তবে এ ঘটনা নিয়ে আমার ভেতরে একটি প্রশ্ন আছে। আমার ভাতিজি পাশের একটি বাড়িতে টিউশনি করতে গিয়েছিল। সেখান থেকে সন্ধ্যার দিকে নিজ বাসার নিচে যায় রুম্পা। এরপর রুম্পা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া তার এক চাচাতো ভাইকে ফোন করে বাসার নিচে ‘স্যান্ডেল আনতে’ বলে। পরে সে স্যান্ডেল নিয়ে এলে পায়ের হিল খুলে স্যান্ডেল পরে রুম্পা। এরপর ওই চাচাতো ভাইয়ের কাছে রুম্পা কানের দুল, মোবাইল, ঘড়ি, হিল (জুতা) ও টাকাসহ ব্যাগ দিয়ে দেয়। সেগুলো ওপরে নিয়ে যেতে বলে তাকে। একই সঙ্গে মাকে বলতে বলে, তার ‘আসতে দেরি হবে’। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কেন সে এগুলো রেখে যাবে? আত্মহত্যার পরিকল্পনা? তাই হলে তো বাড়ির ছাদ আছে। ওখানে যাবে কেন? নাকি কোনো ঝামেলা ছিল, তাই এগুলো রেখে গিয়েছিল? এসব ভালো করে তদন্ত করতে হবে। শারমিন রুম্পার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। পরিবারসহ রাজধানীর মালিবাগের শান্তিবাগের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের একটি ভবনে থাকেন তাঁরা। রুম্পা পড়তেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগে। গতকাল শুক্রবার সকালে রুম্পাকে ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানার নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়।