যেকোনো মূল্যে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে

0
183

জার্মানিভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) ২০২০ সালের দুর্নীতির ধারণাসূচকে দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে অধঃক্রম অনুযায়ী (খারাপ থেকে ভালো) বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম; ২০১৯ সালে যা ছিল ১৪তম। বক্তৃতা-বিবৃতি-ভাষণে আমরা যতই বাগাড়ম্বর করি না কেন, দেশে যে দুর্নীতি বেড়েছে-এ সূচক তারই প্রমাণ। বিশেষ করে করোনাকালে স্বাস্থ্যখাতসহ বিভিন্ন জরুরি সেবায় যেভাবে দুর্নীতি হয়েছে, এবারের সূচকে তার প্রতিফলন রয়েছে, এ কথা বলাই বাহুল্য। উদ্বেগজনক হলো, দেশে এক ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করে দুর্নীতিবাজদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হচ্ছে। এর বড় নজির হচ্ছে, কখনো কখনো দুর্নীতির কোনো ঘটনা ঘটলে সরকারের তরফ থেকে তা এড়িয়ে যাওয়া হয় অথবা অস্বীকার করা হয়। এমনকি দুর্নীতি সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমকর্মীদের নাজেহাল হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এতে দুর্নীতিবাজরা উৎসাহিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অর্থ ও মানব পাচারের মামলায় কুয়েতের আদালতে ল²ীপুরের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের অর্থদÐসহ চার বছর জেল হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা যেতে পারে। সর্বোচ্চ রাজনৈতিক প্রতিশ্রæতির পরও কেন দেশে দুর্নীতির বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না, এ নিয়ে ভাবা জরুরি।
বাংলাদেশ জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। কাজেই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করে নাগরিকদের জন্য স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সরকার দায়বদ্ধ। বলার অপেক্ষা রাখে না, দুর্নীতির সুবিধাভোগীরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে আগামী বছরগুলোয় সূচকে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল প্রতিবছর সারা বিশ্বের দেশগুলোর দুর্নীতি পরিস্থিতি নিয়ে একটি ধারণাসূচক প্রকাশ করে থাকে। সংস্থাটির দাবি অনুসারে, এ সূচক প্রামাণ্য কোনো বিষয় না হলেও এতে দেশে দেশে দুর্নীতির বিস্তার সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়। টিআইর সূচক অনুযায়ী ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ছিল সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। ২০০৬ সালে তৃতীয়, ২০০৭ সালে সপ্তম, ২০০৮ সালে দশম ও ২০০৯ সালে ত্রয়োদশ অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। এরপর ২০১০ সালে দ্বাদশে চলে গেলেও ২০১১ সালে ত্রয়োদশ অবস্থানে ফিরে আসে। দুর্নীতিবিরোধী নির্বাচনি অঙ্গীকারের পরিপ্রেক্ষিতে বিগত বছরগুলোয় কিছুকিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক উদ্যোগ থাকলেও কার্যকরভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের দৃষ্টান্ত স্থাপনে সরকারের সদিচ্ছার যথেষ্ট ঘাটতি ছিল-তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
বস্তুত বিশাল আকারের দুর্নীতির ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে সরকারের মধ্যে এক ধরনের ‘লুকোচুরি’র প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছে, যা মোটেই কাম্য নয়। দুর্নীতি-অনিয়মের ব্যাপক বিস্তার ও জবাবদিহিতার ঘাটতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের দরিদ্র জনগণ। দুর্নীতি হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অগ্রগতি ও দারিদ্র্য বিমোচনের প্রধান অন্তরায়-এ বাস্তবতা অনুধাবন করে দুদককে স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানরূপে গড়ে তোলার পাশাপাশি দেশকে দুর্নীতির অভিশাপ থেকে মুক্ত করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ প্রেক্ষাপটে এমন আইন প্রণয়ন করা উচিত, যাতে দুর্নীতিবাজরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে। পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তোলার বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে হলে যেকোনো মূল্যে দুর্নীক বন্ধ করতে হবে।