যাত্রীবাহি ইজিবাইকে অদক্ষ চালক : প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা

0
363

কামরুল হোসেন মনি:
সুপর্ণা চক্রবর্তী (১৮)। গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু কলেজের ছাত্রী। রূপসা তেরখাদার আমতলা এলাকা থেকে তিনি খুলনার উদ্দেশ্যে ইজিবাইকে করে আসছিলেন। পথিমধ্যে আব্দুল্লাহের মোড়ে আসলে ইজিবাইক চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ওপর উল্টে পড়েন। এতে যাত্রী থাকা দুইজনই গুরুতর আহত হন। এর মধ্যে সুপর্ণা মাথা ও সারা মুখে মারাত্মক আহত হন। তাকে দ্রুত নগরীর সদর হাসপাতালে আনা হয়। রোববার দুপুর ১২টার দিকে ওই এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সুপর্ণার মতো অনেকই কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। ইজিবাইকের অদক্ষ চালকের কারণে এ সব যান প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে, কেউ আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন কেউ বা মারাও যাচ্ছেন। ইজিবাইক চলাচলে যথাযথ তদারকির অভাব ও যত্রতত্র পার্কিংয়ের কারণে বেড়েছে সড়কগুলোতে যানজট।
খুলনা কেএমপি’র (ট্রাফিক) বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন অনুমোদন ছাড়াই শহরের মধ্যে অতিরিক্ত মাত্রায় ইজিবাইক চলাচল করছে। যদি কেসিসি শহরের মধ্যে চলাচলরত ইজিবাইকের লাইসেন্স নির্ধারণ করে দিতেন তাহলে ওই ইজিবাইককে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা যেতো। এ বিষয়ে আমাদের থেকে একাধিকবার বৈঠকও হয়েছে। তিনি বলেন, কোন সাধারণ জনগণ যদি কোন যানবাহন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হন, তারা যদি সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ করেন তাহলে সেই ব্যক্তি আইনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ পাবেন। এছাড়া অবৈধভাবে চলাচলরত ইজিবাইক সিটি কর্পোরেশন নির্মূলের জন্য তাদের ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করেন সেক্ষেত্রে আমাদের পুলিশের ফোর্স সহযোগিতা করবে।
ইজিবাইক চালক ও যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকেই নগরীতে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলাচল শুরু হয়। ওই সময় একাধিক প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে এর আমদানি শুরু করে। অল্প বয়সী বেকার যুবক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও নি¤œ আয়ের মানুষ ইজিবাইক কিনে বা ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছে। এদের ৯০ শতাংশের গাড়ি চালানোর ন্যূনতম ধারণা নেই। ফলে প্রায়ই কোন না কোন জায়গায় ঘটছে দুর্ঘটনা ও সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের।
বিআরটিএর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিন) মোঃ সাদেকুল ইসলাম বলেন, নগরীতে ইজিবাইক চলাচলে বিআরটিএ কোনো অনুমতি কোনদিনও দেয়নি। চালকদের কোন লাইসেন্সও (চলাচলের অনুমতি) দেয়নি। বিআরটিএ সেন্ট্রাল থেকে ইজিবাইক পরীক্ষার জন্য বুয়েটে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে পরীক্ষা করে দেখা গেছে এর সঠিক ওজন নেই। এটি কোন যানবাহনের আওতায় না পড়ার কারণে এ বিষয়ে আমাদের সংস্থা থেকে কোন ব্যবস্থাও নিতে পারছি না। ভবিষ্যতে বিআরটিএ সেন্ট্রাল থেকে এ বিষয়ে পর্যালোচনা হলে তখন বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা পেশ করবো।
গল্লামারী এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক হামিদ আলী বলেন, দিনে দিনে রিকশা ভাড়া বাড়ায় নগরবাসীর যাতায়াতের প্রধান ভরসা হয়ে ওঠে ইজিবাইক। কিন্তু এই যানবাহন চালানোর ক্ষেত্রে অধিকাংশই ন্যূনতম ধারণা নেই। যেখানে সেখানে হুটহাট করে পার্কিং। ছোট ছোট বাচ্চারা অনেক সময় স্কুলে আসার পথে ইজিবাইকের ধাক্কায় পড়ে গিয়ে আহত হচ্ছে। তিনি বলেন, ইজিবাইকের বিষয়টি এখন থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলাচল ও দক্ষ চালক দ্বারা না চালানোর কারণে প্রতিদিনই কোন না কোন স্থানে দুর্ঘটনার খবর শুনতে পাই। এরকম পরিস্থিতিতে ছেলে-মেয়েরা বাইরে গেলে ঘরে ফিরে না আসা পর্যন্ত দুশ্চিন্তায় থাকা লাগে।
কেসিসি’র লাইসেন্স অফিসার (যানবাহন) খান হাবিবুর রহমান বলেন, তৎকালীন মেয়র আলহাজ তালুকদার আব্দুল খালেক এর সময় নগরীতে ১ হাজার ৯৬৩টি ইজিবাইক চলাচলের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর আর কোন অনুমোদন দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি আরও ৩ হাজার ইজিবাইক লাইসেন্স দেওয়ার জন্য স্থানীয় এমপি ও কেসিসি’র সমন্বয়ে একটি বৈঠক হয়। বিষয়টি এখন কোন পর্যায়ে আছে তা আমার জানা নেই।
জানা গেছে, গত ২০১০-১১ অর্থবছরে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র এক হাজার ৯৬৭টি ইজিবাইকের লাইসেন্স দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সে লাইসেন্স মাত্র একবার নবায়ন হয়। ২০১৪ সালে ইজিবাইক চলাচলের ওপর হাইকোর্ট একটি রুল জারীর প্রেক্ষিতে একই বছরে ৯ ও ১০ নভেম্বর এ দু’দিন চালকরা ধর্মঘট পালন করেছিল। পরে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান এমপির উদ্যোগে নগর আ’লীগ সভাপতি ও সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এবং সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি ও কেএমপি কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি আলোচনা করে পূর্বের এক হাজার ৯৬৭টিসহ মহানগরীতে মোট পাঁচ হাজার ইজিবাইক চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্প্রতি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এবং প্রশাসনের মৌখিক অনুমতির সূত্রে ৫ হাজার ইজিবাইক মহানগরীতে চলাচলের জন্য অনুমতির কথা থাকলে বাস্তবে চলছে ২০-২৫ হাজারেরও বেশি।