যাত্রীদের দুর্ভোগ অবসান : সোনডাঙ্গা বাসটার্মিনাল থেকে বাগেরহাট রুটে গাড়ি চলাচল শুরু 

0
494

কামরুল হোসেন মনি : জান-মালের নিরাপত্তাহীনতার কারণে সোনাডাঙ্গা বাসটার্মিনাল  থেকে ছেড়ে আসা খুলনা-বাগেরহাটসহ ৪টি রূটে সব গাড়িগুলো এখান থেকে না ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাগেরহাট বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ওই স্ট্যান্ডে থাকা বাগেরহাটে গাড়ি (খুলনা-মেট্রো-জ-০৫০০১১) এর ব্যাটারি চুরি হওয়ার বিষয়টি চালক মোঃ মিন্টু খুলনা মটর শ্রমিক ইউনিয়নে অভিযোগ দেয়ায় তার ওপর হামলা চালানো হয়। এরই জের ধরে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানায়। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা দিকে খুলনা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে বাগেরহাট বাস মালিক সমিতি ও মটর শ্রমিক ইউনিয়ন এক বৈঠকের পর পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে সোনডাঙ্গা বাসটার্মিনাল থেকে বাগেরহাট রুটে গাড়ি ছাড়া শুরু হয়। এর ফলে সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগের অবসান ঘটে।
এর আগে বুধবার (৩ অক্টোবর) সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে খুলনা-বাগেরহাট রূটে সকাল থেকে বন্ধ করে দেন বাগেরহাট বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ। এর ফলে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়েন। যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ওই দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে শুধুমাত্র রূপসা বাস স্ট্যান্ড থেকে ওই সব রুটে বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়।
বাগেরহাট বাস মালিক সমিতির সভাপতি শেখ নজরুল ইসলাম মন্টু বুহস্পতিবার এ প্রতিবেদককে বলেন, খুলনা মটরশ্রমিক ইউনিয়নে সেক্রেটারি জাকির হোসেন বিপ্লব এর সাথে আমাদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বাগেরহাট মটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক হওয়ার পর পুনরায় দুপুর ১২টা থেকে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে পুনরায় বাগেরহাট রুটে গাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে আমাদের সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে গাড়ির ও শ্রমিকের নিরাপত্তা  আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া যে গাড়ির ব্যাটারি চুরি হয়েগেছিলো ওটা কিনার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
খুলনা-বাগেরহাট রূটে চালক মোঃ মিন্টু এ প্রতিবেদককে জানান, রূটের টিপ শেষ করে গত ২৯ সেপ্টেম্বর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে আমার (খুলনা-মেট্রো-জ-০৫০০১১) গাড়ি রেখে এশার নামাজ পড়তে যাই। নামাজ পরে এসে দেখি আমার গাড়ির ব্যাটারি চুরি হয়ে গেছে। বিষয়টি পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় মটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি, সেক্রেটারি ও কোষাধ্যক্ষকে অবহিত করি। তারা আমার অভিযোগ শুনে বাইরে বেরিয়া যান। অভিযোগ দেওয়ায় ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাস স্ট্যান্ডে পরিবহন কাউন্টারে দোতলায় আমাকে ও গাড়ির সুপারভাইজার মিজানকে ৫-৬ জন ছেলেরা আমাদের দুইজনকে মারধর করে। এতে আমার হাতে প্রচন্ড আঘাত পাই। বিষয়টি আমি বাগেরহাট শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাস মালিকদের অভিযোগ দেই। চালক মিন্টু বলেন, এর আগেও প্রায়ই বিভিন্ন বাসের থেকে ব্যাটারি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনা ঘটেছে। বাস স্ট্যান্ডে রাখলেই বাসের মধ্যে স্থানীয় শ্রমিকরা মাদকসেবন করে। এর প্রতিবাদ করতে গেলে হামলা শিকার হতে হয়।
বাগেরহাট মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মাছুম মোল্লা ওরফে ছোট বাবু বৃহস্পতিবার রাতে (৪অক্টোবর) এ প্রতিবেদককে বলেন, খুলনা মটরশ্রমিক ইউনিয়নের সাথে বাগেরহাট বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও আমাদের মটরশ্রমিক ইউনিয়নদের সাথে বৈঠক হয়। বৈঠকে মালধরের শিকরা গাড়ির চালক মিন্টুর তার চুরি হওয়া ব্যাটারি কিনে দেয়ার সিদ্ধান্তসহ সকল জাল মালের নিরাপত্তার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে পুনরায় এ বাস টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়া সিদ্ধান্তে পৌছায়। তিনি বলেন,  খুলনা-বাগেরহাট, খুলনা-বরিশাল, খুলনা-রায়েন্দা ও খুলা পিরোজপুর রূটে ৭০-৮০ টি গাড়ি খুলনা বাস টার্মিনাল থেকে ওই সব রূটে গাড়ি ছাড়া হয়। তিনি বলেন, সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে রাতের বেলায় গাড়ি রেখে দিলেই বিভিন্ন সময় ব্যাটারি চুরি, গাড়ির যন্ত্রাংশ চুরি ঘটেই যাতো। এছাড়া গাড়ির মধ্যে স্থাণীয় শ্রমিকরা ইয়াবা, মদ-গাজা সেবন করেন। এর কোন প্রতিবাদ করলেই আমাদের শ্রমিকদের ওপর হামলা হয়।
এ ব্যাপারে মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব এ প্রতিবেদককে বলেন, বাগেরহাচে একটি গাড়ির ব্যাটারি চুরি হওয়ারকে কেন্দ্র করে এক স্ট্যাটাস ওই ড্রাইভারকে মারধর করে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বুধবার সকাল ১১টার দিকে বাগেরহাট বাস মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সাথে বসার কথা ছিলো। কিন্তু তারা এখানে না এসে বাগেরহাট রুটে সব গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছেন।
একটি সূত্র জানায়, দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেও এই বাস স্ট্যান্ডের মধ্যে গাজা, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক বিকিকিনি বন্ধ হয়নি। এদিকে হঠাৎ করে বাগেরহাট রূটে বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগের সীমা ছিলো না। ঝিনাইদহ থেকে খুলনা বাস স্ট্যান্ডে আসা মোঃ মিজানুর রহমান সকাল ১১টা ১০ মিনিকে এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনি ঝিনাইদহ থেকে স্ত্রীসহ ছোট ছোট দুই ছেলেকে নিয়ে খুলনায় আসেন। এখান থেকে তিনি বাগেরহাট পিরোজপুরে যাবেন। এসে দেখেন বাগেরহাটরুচে বাস চলাচল বন্ধ। তার মতো অনেক বয়স্ক লোকেরা তাদের গন্তব্য স্থানে পৌছানোর জন্য বাস বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।