মোড়েলগঞ্জে জেলে পল্লীর দুর্বিসহ জীবন ভাঙ্গনের মুখে বিলীন কয়েক শ’পরিবার

0
682

এম.পলাশ শরীফ, মোড়েলগঞ্জ থেকে :
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের জেলে পল্লীর পরিবারগুলো দুর্বিসহ জীবনযাপন। পানগুছি নদীর গর্ভে ভাঙ্গনের মুখে বিলীন হয়েছে গাবতলা গ্রামের ৩শ’ বিঘা ফসলি জমি। দেড় শতাধিক জেলে পরিবার। নদীগর্ভে সবস্ব হারিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা ও পাশ্ববর্তী ভারতে চলে গেছে শতাধিক পবিরাব।
পরিবারগুলোর জীবনযাত্রার মানউন্নয়নে সরকারের সহায়তা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন জেলে পল্লীর কয়েক হাজার জেলে পরিবার। রোববার সরেজমিনে ঘুরে জানাগেছে, উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে ২০টি জেলে পল্লী রয়েছে। এ পল্লীতে বসবাসকৃত জেলে পরিবারগুলো গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণ করে জীবন জীবিকা নির্ভর করে।
এ পল্লীগুলো হলো মোড়েলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গাবতলা, উত্তর বারইখালীর কাশমির, খাউলিয়ার কুমারখালী, ফাসিয়াতলা, মধ্য বরিশাল, সন্ন্যাসী, চিংড়াখালীর চন্ডিপুর, পূর্ব চন্ডিপুর, বলইবুনিয়ার শ্রেনীখালী, হোগলাবুনিয়ার পাঠামারা, বদনীভাঙ্গা, বনগ্রামের বিষখালী, পুটিখালীর সোনাখালী, বহরবুনিয়ার ফুলহাতা, পঞ্চকরনের দেবরাজ, খারইখালী, নিশানবাড়িয়ার আমুরবুনিয়া ও তেলীগাতি ইউনিয়নের হেড়মা, মিস্ত্রীডাঙ্গা। এ ২০টি জেলে পল্লীতে প্রায় ১৮ হাজার জেলে পরিবার রয়েছে। এদের জীবনযাত্রার মানউন্নোয়নে মৌলিক চাহিদা পূরনে রয়েছে প্রতিবন্ধকতা। প্রতিনিয়ত সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মৎস্যজীবি এ পরিবারগুলোর। রয়েছে খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানসহ ৫টি মৌলিক চাহিদা পূরনের অভাবনিয় অভাব। কোনমতে মাথা গোঁজার ঠাই বসত ভিটায় দিনাতিপাত করছে ছেলে মেয়ে ও পরিবার পরিজন নিয়ে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানাগেছে, এ উপজেলায় নিবন্ধনকৃত জেলে পরিবার রয়েছে ৯ হাজার ৮শ’ ৩৩ জন। এর মধ্যে জাটকা রক্ষা কর্মসূচির আওতায় ২১শ’ ৯৫ জন। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত প্রতিটি পরিবার সরকারিভাবে ৪০ কেজি করে চাল পেয়ে থাকেন। এছাড়াও মা ইলিশ রক্ষায় ১৯শ’ ৬৫ পরিবার নিশেধাজ্ঞার ২২দিনে ২০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন।
এদিকে পানগুছি নদীর তীরবর্তী গাবতলা গ্রামের জেলে পল্লীতে কথা হয় ডালিম শেখ, গিয়াস উদ্দিন তালুকদার, সোহেল তালুকদার, গফফার তালুকদার, সেলিম তালুকদার, শহিদুল শেখ ও মজনু তালুকদারসহ সাগরে ইলিশ ধরা জেলেদের সাথে তারা জানান, এ গ্রাম থেকে প্রতিবছর ১০টি ট্রলার গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। প্রতিটি ট্রলারে ১০ থেকে ১৫জন জেলে শ্রমীক কাজ করে। অথচ গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণকালে প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাদের দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। ঝড়ের কবলে প্রাণহানি ঘটেছে অনেক জেলের। তাদের নেই কোন লাইফ জ্যাকেট। অভিযোগ রয়েছে সরকারিভাবে প্রকৃত জেলেরা পাচ্ছেনা লাইফ জ্যাকেট। পাশাপাশি সরকারের প্রতি দাবী তুলেছেন তারা। মা ইলিশ রক্ষায় ২২দিনের নিশেধাজ্ঞা সরকারের সহায়তা দ্বিগুন করার। জেলেদের ইন্সুরেন্সের মাধ্যমে লোন দিয়ে মৎস্যজীবিদের সহায়তা করা । ঝাটকা রক্ষা কর্মসূচির আওতায় সহায়তায় নিবন্ধনকৃত জেলেদের বৃদ্ধি করা ও বছরের শুধু ৪ মাস নয় ১২মাসেই এ সব পরিবার সহায়তা পেতে পারে তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি জোর দাবি জানান।
উপজেলা মৎস্যজীবি লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আল আমীন শেখ বলেন, মৎস্যজীবিদের জীবনমান উন্নোয়নে (বেহেন্দী জাল) জেলে পরিবারকে পুর্নবাসন করে ছোট মাছ আহরণ বন্ধ করতে পারলে মৎস্য সম্পদের আরো উন্নয়ন ঘটবে।
এ ব্যাপারে মোড়েলগঞ্জ সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার বিশ্বাস বলেন, এ উপজেলায় জেলেরা এখন অনেক সচেতন, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় নিশেধাজ্ঞার ২২দিনে পানগুছি, বলেশ্বরসহ কোন নদীতেই জেলেরা মাছ ধরছে না। তারা বিশ্রম নিচ্ছেন জাল নৌকা মেরামত করছে। ইতোমধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য জেলেদের মধ্যে বাপক প্রচারণা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, মৎষ্য অধিদপ্তর, কোষ্টগার্ড ও পুলিশের সহযোগিতায় এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ সময় জেলেরা সরকারিভাবে সহায়তাও পাচ্ছেন।