মোরেলগঞ্জে আওয়ামীলীগের দুই নেতা হত্যার ৪ দিন পর মামলা দায়ের

0
761

মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধি : বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞহাটী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা শুকুর শেখ হত্যার ৪ দিন পর দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। একটি শুকুর শেখ হত্যা মামলা অপরটি অস্ত্র মামলা। তবে এখনো পর্যন্ত দৈবজ্ঞহাটী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী দিহিদার হত্যা মামলা দায়ের হয়নি।
বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার দিকে নিহত শুকুর শেখের বড় ভাই শেখ ফারুক আহম্মেদ বাদি হয়ে দৈবজ্ঞহাটী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ফকির কে প্রধান করে ৩১ জনের বিরুদ্ধে মোরেলগঞ্জ থানায় এ মামলা দায়ের করেন । থানা অফিসার ইন চার্জ (তদন্ত)ঠাকুরদাস মন্ডল বাদি হয়ে অস্ত্র আইনে চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ফকির সহ ৫ জনকে আসামী করে অপর মামলাটি দায়ের করেন । এ মামলার প্রধান আসামী শহিদুল ইসলাম ফকির সহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্য আটককৃতরা হল, দফাদার আবুয়াল হোসেন ফকির, চৌকিদার আবুল হোসেন, জুনায়েদ ডাকুয়া ও কালাম হোসেন।
সোমবার বিকেলে চেয়ারম্যান শহিদুল ফকিরের নেতৃত্বে তার লোকজন দৈবজ্ঞহাটী বাজার থেকে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে যুবলীগ নেতা শুকুর শেখ (৪৫) ও তাঁতীলীগ নেতা বাবুল শেখ (৩৫) কে ধরে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে নিয়ে বোরকা পরিয়ে প্রথমে গুলি করে। পরে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে। একাধিক গুলি ও মারপিটে ঘটনাস্থলে শুকুর শেখ মারা যায়। বাবুল শেখ কে গুরুতর আহত অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বাবুল শেখ এখন আশঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে। নিহত শুকুর শেখ জোকা গ্রামের মোসলেম শেখের ছেলে ও প্রয়াত আওয়ামীলীগের এমপি আব্দুল লতিফ খানের খালাতো ভাই।
এ ঘটনার পরপরই চেয়ারম্যান শহিদুল ফকিরের ক্যাডার বাহিনী ইউনিয়ন পরিষদ সন্নিকটে দৈবজ্ঞহাটী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী দিহিদারের বাড়িতে সশস্ত্র হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীদের ভয়ে স্ত্রী মঞ্জু বেগম আনছার আলী বাড়ির পাটাতনে উঠিয়ে ঝাঁপ তালা লাগিয়ে। এদিকে সন্ত্রাসীরা সেমি পাকা ঘরের ক্লোকসাবেল ঘেট ভঙ্গতে ব্যর্থ হয়ে পাশর্^বর্তী জানালার গ্রীল ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে স্ত্রী মঞ্জু বেগমের দু’পা ভেঙ্গে দেয় এবং পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। সšা¿সীরা মারপিট মঞ্জু বেগমের কাছে আনছার আলী কোথায় আছে জানতে চায়। এক পর্যায়ে জানতে পেরে সন্ত্রাসীরা পাটতনের ঝাঁপ ভাঙ্গতে ব্যর্থ হয়ে উপরের টিনের চাল ভেঙ্গে প্রবেশ করে আনছার আলীকে মারপিট ও কুপিয়ে আহত করে ইউনিয়ন পরিষদের চর্টার সেলে নিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে, পায়ের রক কেঁটে গুরুতর আহত করে। আহত দিহিদার আনছার আলীকে ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর হলে পথিমধ্যে মারা যায়। নিহত শুকুর আলী দৈবজ্ঞহাটী ডিগ্রী কলেজের করনিকের দায়িত্বে ছিলেন। নিহত আনছার আলী দৈবজ্ঞহাটী এলাকার দিহিদার আবির আলী ছেলে। নিহতের স্ত্রী গুরুতর আহত মঞ্জু বেগম ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার অবস্থা আঙ্কাজনক।
এদিকে আওয়ামীলীগ নেতা দিহিদার আনছার আলী ও যুবলীগ নেতা শুকুর শেখ হত্যা ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে দৈবজ্ঞহাটী বাজার সহ এলাকায় চরম উত্তেজনা ও আতঙ্কের সৃষ্টি সৃষ্টি হয়। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। পুলিশ এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ফকির , তার সহযোগী চৌকিদার আবুয়াল হোসনে ফকির সহ ৬ জনকে আটক করা হয়। পুলিশ জব্দ করে চেয়ারম্যানের লাইসেন্সকৃত শার্ট গান ও গুলি। আর চেয়ারম্যানের আয়ত্বে থাকা অবৈধ ওয়ান শুটার গান ১টি, দেশী তৈরী পিস্তল ১টি , রিভলবারের ২ রাউন্ড গুলি , ৬ রাউন্ড কার্তুজ ও রক্তমাখা কুড়াল জব্দ করে। অপরদিকে পরের দুই নেতার জানাযা অশান্ত পরিবেশে শেষ হয়। স্থানীয় এমপি জনরোষে জানাযা না দিয়ে চলে যেতে বাধ্য হন।
থানা অফিসার ইন চার্জ কেএম আজিজুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর সহ নিহত দিহিদার আনছার আলীর বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। হত্যা মামলার অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে শুকুর শেখ হত্যা মামলা ও একটি অস্ত্র মামলা দায়ের হয়েছে। দিহিদার আনছার আলী হত্যা মামলার অভিযোগ এখনো দায়ের হয়নি।