মেহেরপুরে গৃহবধূকে গরম পানিতে ঝলসে হত্যার অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে

0
165

টাইমস ডেস্ক:
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামন্দিতে গরম পানি দিয়ে ঝলসে রুবিনা খাতুন (২০) নামের এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। তবে পরে এটি আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেন অভিযুক্ত স্বামী মিলন হোসেন। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বামন্দি পশ্চিমপাড়ায় ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে। গৃহবধূর মনিকা নামে ২ বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। তার স্বামী মিলন হোসেন বেসরকারি এনজিও সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের মাঠ কর্মকর্তা হিসেবে ওই এলাকায় কর্মরত রয়েছেন। অভিযুক্ত মিলন মেহেরপুর সদর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের হাতেম আলীর ছেলে। নিহত রুবিনা একই উপজেলার ট্যাঙ্গারমাঠ গ্রামের মৃত রবগুল হোসেন মেয়ে। চার বছর আগে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। এদিকে এ ঘটনার পর গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে স্বামী মিলন হোসেন, শাশুড়ি সিফারা খাতুনসহ পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে রয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, উভয়ের মধ্যে পারিবারিক অশান্তি ছিল। মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন বিষয় গ-গোল হতো। একপর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। এরপর পরই স্থানীয় প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হুদা ক্লিনিকে নিয়ে যান। হুদা ক্লিনিক থেকে তাদের মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রুবিনাকে মৃত ঘোষণা করেন। বামন্দির হুদা ক্লিনিকের মালিক নুরুল হুদা জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পরে রুবিনাকে দগ্ধ অবস্থায় তার স্বামী ও প্রতিবেশীরা নিয়ে আসলে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। পরে আমরা তাকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠাই। তবে আসল ঘটনা কী তা তদন্ত করলে স্পষ্ট হবে। তিনি আরো জানান, তিনিসহ স্থানীয় প্রতিবেশীদের সামনে রুবিনা স্বীকারোক্তি দেন যে, ঝগড়ার একপর্যায়ে তিনি নিজেই শরীরে আগুন লাগিয়ে ছিলেন। এদিকে, খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলসহ মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে অভিযান চালায়। সেখানে পৌঁছানোর আগেই মিলনসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে যান। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সৈয়দ কবির জন জানান, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। তবে তার শরীরে কেরোসিন বা পেট্রোলের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গরম পানিতে শরীরের পুরো অংশ ঝলসে যাওয়ায় মৃত্যু হয়েছে। রুবিনার মামা আবদুল জাব্বার অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন সময় মিলন যৌতুক দাবি করতো মেয়ের কাছে। মেয়ের বাবা-মা কেউ নেই। নানির বাড়ি থেকে মানুষ। মামারা বিভিন্ন যায়গায় থেকে টাকা জোগাড় করে ৪৯ হাজার টাকা যৌতকু দেন। কয়েকদিন আগে স্বামী আবার টাকা চান জমি কেনার কথা বলে। এই কথা রুবিনা তার নানিকে এসে বলেন। নানি বলেছিলেন, গরীব মানুষ টাকা কোথায় পাব! পরে জোগাড় করে দেবো। তারপরে আজ (গতকাল শুক্রবার) সকালে শুনে হাসপাতালে এসে দেখি মেয়েকে গরম পানি ঢেলে পুড়িয়ে মেরে ফেলেছে মিলন। আমরা এ হত্যাকা-ের উপযুক্ত বিচার চাই। রুবিনার নানি হালিমা খাতুন জানান, রুবিনা ছোট থাকতেই তার বাবা-মা দুজনই মারা যান। তারপর থেকে তাকে আমি বড় করি। বছর চারেক আগে সদর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের হাতেম আলীর ছেলে মিলন হোসেনের সাথে বিয়ে দেই। বিয়ের পর থেকে মিলনের মা সিফারা খাতুনের কথাশুনে মিলন বিভিন্ন সময় আমাদের সাথে টাকা দাবি করত। অশান্তির একপর্যায়ে তারা বামন্দিতে বাসা ভাড়া নিয়ে চলে যায়। সেখানে প্রতি সপ্তাহে মিলনের মা গিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে। মিলনকে ফুঁসলিয়ে শুধু টাকা দাবি করে রুবিনার কাছে। তবে অভিযুক্ত মিলন হোসেন আত্মগোপনে থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। মেহেরপুর সদর থানার ওসি (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম জানান, এসপি মহোদয়ের নির্দেশে প্রাথমিক তদন্ত করি। আমরা চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি গরম পানি দিয়ে ঝলসে যাওয়ার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে আসল রহস্য জানা যাবে।