‘মুর্শেদী’ ঝঁড় খুলনার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক শিবিরে

0
1018

আসাদুজ্জামান রিয়াজ:
এক সময়ের ফুটবল মাঠ কাঁপানো সালাম মুর্শেদী এবার খুলনার রাজনীতির মাঠে ঝঁড় তুলেছেন। তাও আবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে। যে দলের মনোনয়ন নামের সোনার হরিণের পেছনে ছুটছেন বাঘা বাঘা নেতারা। গত ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুলনার জনসভায় তারকা ফুটবলার সালাম মুর্শেদী ভোটযুদ্ধে অংশ নেয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছেন। যদিও কোন আসনের নৌকার মাঝি হবেন এই শিল্পপতি তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। তবে আসন্ন নির্বাচনে তিনি যে লড়বেন তা প্রায় নিশ্চিত। আর সেই থেকে ‘মুর্শেদী’ ঝঁড় বইছে খুলনার রাজনৈতিক অঙ্গনে।
একজন উচ্চ মানের খেলোয়ার থেকে সফল ব্যবসায়ী হিসেবে দেশের গন্ডি পেড়িয়ে আর্ন্তজাতিক পরিমন্ডলে যে ব্যক্তি আলো ছড়িয়ে আসছেন সে কিনা এবার রাজনৈতিক ময়দানে। সদালপি-সুদর্শন এবং একজন সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে সালম মুর্শেদী ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহলে নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। গত ৩ মার্চ খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানের ঐতিহাসিক জনসভায় বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সালাম মুশের্দীকে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচনী ভোটযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। সম্ভবত রাজনীতিতে এটি ছিলো প্রধানমন্ত্রীর একটি চমক। আর সেই থেকে খুলনার রাজনৈতিক শিবিরে হট কেক সালাম মুশের্দী। তবে ক্ষমতাসীন শিবিরে জোরে সরে বইছে মুশেদী ঝঁড়। এই ঝঁড়ে কার কপাল পুড়বে এমন জল্পনা-কল্পনা আর সরব আলোচনা চলছে দলীয় শিবিরে। যদিও এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের কেউই মুখ খুলতে চাইছেন না। তবে আওয়ামী শিবিরেই জনশ্রুতি রয়েছে খুলনা-২ অথবা খুলনা-৪ নির্বাচনী আসনে প্রার্থী হতে পারেন সালাম মুশের্দী।
সালাম মুশের্দী ৫১ বছর বয়সে একজন সফল মানুষ। ব্যবসায়ী শীর্ষ সংগঠন বিজিএমএর সাবেক সভাপতি, ফুটবল অঙ্গণের উজ্জল নক্ষত্র। সত্তর থেকে আশির দশকের অন্যতম সেরা ফুটবলার। সেই সময়ে তিনি মাঠে নামলে দর্শক হৃদয় উদ্বেলিত হতো। ১৯৮২ সালে ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিনের রেকর্ড ভেঙে ঢাকা লিগে তিনি করেন ২৭টি গোল। সে সময় তিনি ছিলেন মোহামেডানের খেলোয়াড়। ওই বছরই সালাম মুর্শেদী ভারতে আশিস জব্বার টুর্নামেন্টে হ্যাটট্রিকসহ সর্বোচ্চ ১০ গোল করে ঢাকা মোহামেডানকে চ্যাম্পিয়ন করেন। দেশের ও বিদেশের মাটিতে ওই দুটোই সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড, যা এখনো অক্ষুণ্ন আছে। এ জন্য ফুটবলে জাতীয় পুরস্কার এবং পোশাকশিল্পে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি পেযয়ছেন বহুবার।
খুলনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর সঙ্গী এবং সার্কিট হাউস ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি’র বক্তব্যের পর বক্তৃতা দেয়ায় আলোচনায় এসেছেন খেলোয়াড় থেকে সফল ব্যবসায়ী শিল্পপতি সালাম মুর্শেদী। জনসভায় সালাম মুর্শেদীকে ‘পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর’ মেয়র পদে নাকি সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি নির্বাচন করবেন, সেই বিষয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে। আগামী ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং বছরের মাঝামাঝি হবে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। তার আগে সালাম মুর্শেদীকে জনসভায় ‘পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর’ মেয়র পদে নাকি সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি নির্বাচন করবেন, সেই বিষয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে।
এই প্রতিবেদকের সাঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন শিল্পপতি সালাম মুর্শেদী। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি ফুটবল ছাড়া কিছুই বুঝতাম না। ফুটবলই ছিল আমার জীবন। জাতীয় পর্যায়ে খেলে সফলও হয়েছি। ‘এখন আমি মনে করি, রাজনীতি করে দেশের মানুষের জন্য আমার কিছু করার আছে। আমি খুলনা থেকে ঢাকায় এসে জাতীয় পর্যাযয়ে খেলেছি এবং সফলও হয়েছি। এরপর ব্যবসায়েও সর্বোচ্চ স্বীকৃতি পেয়েছি। রাজনীতি কঠিন বিষয় হলেও যেহেতু ছোটবেলা থেকে জীবন যুদ্ধে সফল হয়েছি। এখানেও সফল হব বলে আশা রাখি।’ সালম মুশের্দী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে খুলনা থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।’ কোন আসনে লড়বেন? ‘প্রধানমন্ত্রী আপনাকে কিছু বলেছে?’- এমন প্রশ্নে সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘এখানে আমার কোন চয়েজ নেই, দল আমাকে খুলনার যে আসন থেকে মননোয়ন দেবেন আমি সেই আসন থেকে নির্বাচন করব। খুলনায় নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজজ করব।’
আবদুস সালাম মুর্শেদী বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের একজন বড় তারকা। তবে এর চেয়েও বড় তারকা তিনি বাংলাদেশের ফুটবল জগতের। ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের স্ট্রাইকার ছিলেন মুর্শেদী। ১৯৬৩ সালে খুলনায় জন্ম, সেখানেই ফুটবলে হাতেখড়ি। স্থানীয় ইয়াং মুসলিম ক্লাবের মাধ্যমে প্রথম বিভাগে খেলার শুরু, এরপর ১৯৭৭ সালে আজাদ স্পোর্টিং-এ যোগ দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন।
আজাদে দুই বছর আর বিজেএমসি ক্লাবে এক বছর খেলে সুযোগ পান স্বপ্নের ক্লাব মোহামেডানে খেলার।
কাজী সালাউদ্দিনের রেকর্ড ভেঙ্গে ১৯৮২ সালে লীগে করেন ২৭ গোল, যে রেকর্ড এখনও কেউ ভাঙ্গতে পারেনি। খেলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলেও। টিনের একটি সুটকেস হাতে খুলনা থেকে একদিন ঢাকায় এসেছিলেন মুর্শেদী। আজ তিনি এনভয়ে গ্রুপ নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করেন প্রায় ২০,০০০ কর্মী।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের খুলনা বিভাগের দায়িতপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সাবে ছাত্রনেতা আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আমরা চাই সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সামিল হোক। এ জন্যই সালাম মুর্শেদীকে নেত্রী নৌকার হাল দিতে চেয়েছেন।’
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে খুলনা-২ আসনে বেশিরভাগ সময়েই পরাজিত হয়েছে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় জয়কারের মধ্যেও সেখানে পরাজিত হন নৌকার প্রার্থী আলহাজ্ব মিজানুর রহমান। যদিও পরাজয়ের ব্যাবধান ছিল মাত্র ১৬৭০ ভোট। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপির বর্জনের মুখে সেখানে সহজ জয় পান মিজানুর রহমান।
অন্যদিকে সালাম মোর্শেদীর বাড়ি খুলনা-৪ নির্বাচনী আসনে। এই আসনটি আওয়ামী লীগের অবস্থান শক্তিশালী। সাধারণ নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি। তার পরে সালাম মুর্শেদীকে বক্তব্য দিতে দেয়া মানেই তাকে অনন্য উচ্চতায় উঠিয়ে এনেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।