মিয়ানমারে অভ্যুত্থান: নিরাপত্তা পরিষদের নিন্দা আটকাল চীন

0
164

টাইমস বিদেশ : মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতি দেওয়ার চেষ্টা ঠেকিয়ে দিয়েছে চীন। সোমবার দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে অং সান সু চিসহ দেশটির কয়েকশ রাজনীতিককে আটক করে। অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা এরপর একটি সুপ্রিম কাউন্সিলও গঠন করেছেন যা মন্ত্রিসভার ওপর ছড়ি ঘোরাতে পারবে। মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গনে এরইমধ্যে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং আইন অমান্যের লক্ষণ বাড়ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বসলেও চীনের সমর্থন না থাকায় অভ্যুত্থানের নিন্দা করে কোনো বিবৃতি দিতে পারেনি। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্যের অন্যতম হওয়ায় যে কোনো যৌথ বিবৃতির ক্ষেত্রে চীনের সমর্থনের প্রয়োজন হয়। এই বৈঠকের আগে জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিনা শানার, দেশটিতে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের তীব্র নিন্দা জানান। নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি নিরঙ্কুশ জয় পেলেও জালিয়াতির অভিযোগ তুলে সামরিক বাহিনী তা প্রত্যাখ্যান করে। এ নিয়ে মিয়ানমারের বেসামরিক সরকার ও প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর মধ্যে কয়েকদিন ধরে দ্ব›দ্ব ও উত্তেজনার পর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করার পর সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণ ‘অনিবার্য হয়ে উঠেছিল’ বলে মন্তব্য করেছেন অভ্যুত্থানের পর দেশটির কর্তৃত্ব গ্রহণ করা সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিং অং হ্লাইং। অপরদিকে নির্বাচনে সু চির দল নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে, এটি পরিষ্কার বলে মন্তব্য করেছেন শানার। সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মিয়ানমার বিশেষজ্ঞ এলিয়ট প্রাস-ফ্রিম্যান বিবিসিকে বলেছেন, “চীনের কার্যকলাপে মনে হচ্ছে মিয়ানমার যা ঘটেছে তা কেবলি তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, যেন আমরা মন্ত্রিসভার রদবদল দেখছি, চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এমনটাই বোঝাচ্ছে।” তার মতে, জাতিসংঘের বিবৃতি তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি বদলে দিতে না পারলেও সুসঙ্গত আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে এর গুরুত্ব থাকতো। “তেমন কিছু হচ্ছে না বলেই মনে হচ্ছে,” বলেছেন এলিয়ট। অভ্যুত্থানের পর নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আগ পর্যন্ত চীন বলছিল, আন্তর্জাতিক চাপ কিংবা নিষেধাজ্ঞা মিয়ানমারের পরিস্থিতির কেবল অবনতিই ঘটাতে পারে। লেখক ও দ্য ডিপ্ল্যোম্যাটের দক্ষিণ এশিয়া সম্পাদক সেবাস্টিয়ান স্ট্রাঞ্জিওর ধারণা, নিরাপত্তা পরিষদের নিন্দা আটকে দিলেও মিয়ানমারে অভ্যুত্থানে চীনও খুব একটা খুশি নয়। “বেইজিংয়ের অবস্থান আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে তাদের সামগ্রিক সংশয়েরই ধারাবাহিকতা। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতা চীনকে কৌশলগতভাবে সুবিধা দিলেও এর অর্থ এই নয় যে, বেইজিং অভ্যুত্থানে খুশি। “তারা এনএলডির সঙ্গে চমৎকার বোঝাপড়া দাঁড় করিয়েছিল, সু চির সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে বিপুল বিনিয়োগ করেছিল। সেনাবাহিনীর ফিরে আসার মানে হচ্ছে চীনকে এখন মিয়ানমারের সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে হবে, যারা বেইজিংয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে ঐতিহাসিকভাবেই বেশ সন্দেহপ্রবণ,” বলেছেন তিনি। পশ্চিমা বেশিরভাগ দেশই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদ জানিয়েছে। কেউ কেউ দেশটির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও হুমকিও দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়েছে; ওয়াশিংটন মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলকে ‘অভ্যুত্থান’ হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দিয়েছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি মিয়ানমার সরকারকে কোনো ধরনের সহায়তা দিতে পারবে না; যদিও মিয়ানমারে তাদের বেশিরভাগ সহায়তা বেসরকারি সংস্থাগুলোতেই যায়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ অসংখ্য দেশ মিয়ানমারে ক্ষমতার এ পটপরিবর্তনের নিন্দা জানিয়েছে। মিয়ানমার দীর্ঘদিন ধরেই সামরিক শাসনে ছিল। ২০১১ সালে নামমাত্র একটি বেসামরিক সরকার শপথ নিয়ে ওই অবস্থানে খানিকটা পরিবর্তন ঘটিয়েছিল।