মা-বাবার নামে হাসপাতাল গড়ার স্বপ্নের মানুষটি চিরতরে হারিয়ে গেলো

0
709

কামরুল হোসেন মনি :
মা-বাবার দুই সন্তান। তার মধ্যে ছোট রাজিন। চঞ্চল, মেধাবী তরুণ। আদরের সেই ছেলেটি মাতিয়ে রাখতে পুরো বাসা। স্কুলে ও বন্ধুদের মধ্যেও প্রিয়মুখ ছিলেন সে। লেখাপড়া শিখে মা-বাবার নামে হাসপাতাল গড়ার স্বপ্ন দেখতো। তার নাম ফাহমিদ তানভীর রাজিন। খুলনা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭ম শ্রেণির ছাত্র। খুলনা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র। শনিবার রাতে ওই কলেজের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও প্রাক্তন ছাত্রদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান চলাকালে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে রাজিনের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে মা-বাবার স্বপ্নকেও কেড়ে নিয়ে গেছে।
রোববার সকালে নিহত রাজিনের বাড়িতে গেলে তার আত্মীয়-স্বজনরা এ হত্যাকা-টি কোনভাবে মেনে নিতে পারছেন না। যার কোন শত্রু নেই, স্কুলে মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিতি, বাইরে আড্ডাও পর্যন্ত দিতো না কিন্তু কেন তাকে হত্যা করা হলে এই প্রশ্ন তাদের।
খুলনা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ লেঃ কর্নেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (এইসি) বলেন, নিহত রাজিন পড়াশুনায় খুই মেধাবী ছিলো। ৩য় শ্রেণি থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত সে ক্লাসের ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালনে ছিলো। ক্লাসেও বন্ধুদের মধ্যে প্রিয় মুখ ছিল। এভাবে তার মৃৃত্যুকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না।


খুলনা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ সূত্রে জানা যায়, চিলড্রেন ভয়েস স্কুল থেকে পড়াশুনা করে ২০১৩ সালে পাবলিক কলেজের ৩য় শ্রেণিতে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়। ভর্তির সময় তার বয়স ২০০৬ সালের ৩ অক্টোবর উল্লেখ করা হয়। প্রভাতী শাখায় সে ৩য় শ্রেণি থেকেই ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত ক্যাপ্টেনের দায়িত্বে ছিল। সব শ্রেণিতে পরীক্ষায় তার ১ থেকে ১০ এর মধ্যে স্থান থাকতো। খেলাধুলার মধ্যে ফুটবল ও ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক ছিল বেশি। কখনো ক্লাস কামাই দিতো না।
নিহত রাজিনের বড় ভাই শেখ ফারহান তানভির রাহিন আদরের ছোট ভাইকে হারিয়ে এখনো শোকে কাতর। নিহতের মামা শেখ আসলাম হোসেন বলেন, রাজিন খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। গত ৫ জানুয়ারি ক্যাডেট কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। ২শ’ মার্কের মধ্যে ১৯৭ মার্ক পাবে বলে সে জানায়। পড়াশুনা শিখে ডাক্তার হয়ে গ্রামে মা-বাবার দোয়া ক্লিনিক করার স্বপ্ন ছিল তার। তার বোন রেহানা পারভিন পুলিশ লাইনস স্কুলে সিনিয়র সহকারী শিক্ষিকা পদে চাকরিরত আছেন।
রাজিনের খালাতো ভাই আল মুকিত অন্তর বলেন, শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কলেজের দ্বিতীয় গেট থেকে রক্তাক্ত আহত রাজিনকে পুলিশকে বের করে আনতে দেখি। তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে বয়রা মোড়ে সে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। এলাকায় তার মতো ন¤্র ভদ্র ছেলে ছিল না। কোচিংয়ে পড়ে সরাসরি বাসায় চলে আসতো, কোন জায়াগায় আড্ডাও দিতো না। বড় হয়ে ডাক্তার হয়ে তার গ্রামের বাড়ি পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের বোয়ালখালী গ্রামে মা-বাবার দোয়া নামক একটি হাসপাতাল করার স্বপ্ন ছিল তার। ছোট ছেলে রাজিনের মৃত্যুতে মা রেহেনা খাতুন পাগলের মতো হয়ে গেছেন। শুধু চোখের পানি ও কান্নার আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।


স্থানীয় প্রতিবেশি শাহিদুর রহমান মিন্টু বলেন, খেলাধুলায় রাজিনের ফুটবল ও ক্রিকেটের ওপর আগ্রহ ছিল বেশি। তিনি বলেন, এই দুর্ঘটনার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না। তারা কেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে শরীর চেক করার জন্য স্ক্যানিং ব্যবহারের নির্দেশ দিলেন না কেন বা না থাকলেও তারা কেন ব্যবস্থা করেননি। যদি স্ক্যানিং মেশিনটি থাকতে তাহলে বহিরাগত কেউ ধারালো অস্ত্র বা ধাতব জিনিস নিয়ে প্রবেশ করতে পারতো না। এই ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার আশঙ্কার কম থাকতো।