মামলা মোকদ্দমায় ভয়, জানা থাকলে আর নয়

0
421

মোঃ জাকারিয়া হোসেন:
আমরা সমাজে যারা বসবাস করি, কোন না কোন ভাবে মামলা-মোকদ্দমার সাথে আমাদের সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। আমাদের ইচ্ছা না থাকলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে মামলা আমাদেরকে জড়িয়ে ফেলে। কি শিক্ষিত, কি অশিক্ষিত, কি ধনী, কি গরীব মামলা-মোকদ্দমা কাউকে চেনে না। আমরা শিক্ষিত সমাজও কোর্ট, পুলিশ, উকিল, মোক্তার, মামলা মোকদ্দমা-কে যমের মত ভয় করি। ফৌজদারী (যেমন- মারামারি, খুন) মামলা হইলে এক রকম। দেওয়ানী (যেমন-জমিজমা, চাকুরী) মামলা হইলে তো রেহায় নেই। উকিল, মোক্তার, মহুরী, পেশকার পিয়নের চাঁদা দিতে দিতে জীবন শেষ। তবে মামলা মোকদ্দমা সম্পর্কে জানা থাকলে সবটুকু না হইলেও কিছুটা রেহায় পাওয়া যায়। আসুন মামলা-মোকদ্দমা সম্পর্কে একটু জানা যাক। ফৌজদারী মামলার স্তরঃ মামলা ফাইলিং/তদন্ত এবং জামিন/চার্জ শুনানী/সাক্ষ্যগ্রহন/আসামীর পরীক্ষা/যুক্তিতর্ক/রায় /রায় বলবৎকরণ। আসুন বিস্তারিত জানিঃ
মামলা ফাইলিংঃ ফৌজদারী মামলাকে ইংরেজিতে ঈৎরসরহধষ ঈধংব বলে। এই জাতীয় মামলাতে বাদী বা আসামী হইলে আমাদের কি করণীয় কি? আসুন সহজ ভাবে জানি। ফৌজদারী মামলার মধ্যে মারামারি, চাঁদাবাজি, হুমকী, প্রতারনা, চুরি, ডাকাতি, হত্যা, জাল জালিয়াতি অন্যতম। আমরা যদি কেউ এজাতীয় সমস্যার সম্মুখীন হই। তাহলে প্রথমে নিকটতম থানাতে গিয়ে আমাদেরকে এজাহার দায়ের করতে হয়। এজাহারকে কেউ অভিযোগ আবার ঋওজ বা ঋরৎংঃ ওহভড়ৎসধঃরড়হ জবঢ়ড়ৎঃ বলে। অভিযোগের বর্ণনা দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর যে দরখাস্ত পেশ করা হয় তাকে এজাহার বলে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যদি এজাহার বা অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে (যেটা বাংলাদেশে হর-হামেশা দেখা যায়), তাহলে আপনাকে বা আমাকে কোর্টে নালিশী দরখাস্ত দিয়ে মামলা করতে হবে। কোর্টের একজন আইনজীবীর সহযোগিতা নিলে বেশী ভাল হয়। তবে কোর্টে নিজের মামলা নিজেই করা যায় বা লড়া যায়। আইনজীবীর সহযোগিতা না হলেও চলে। আপনার এলাকার সংশ্লিষ্ট এখতিয়ার স¤পন্ন কোর্টে নালিশী মামলা দায়ের করতে হয়। কোর্টে মামলা করলে তাকে নালিশী মামলা বা কোর্ট মামলা বলে। তদন্ত এবং জামিনঃ থানায় মামলা হলে আপনার বা আমার কষ্টটা কম হয়। পুলিশ তদন্ত করে। সাক্ষ্য প্রমাণ অনুসন্ধান করে। আপনার বা আপনার সাক্ষীদের জবানবন্দী পুলিশ গ্রহন করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জবানবন্দী নিতে পারে অথবা আপনার বা আপনার সাক্ষীদেরকে থানায় ডেকে এনে থানায় বসে সাক্ষ্য নিতে পারেন। মনে রাখবেন, এরজন্য আপনার কোন খরচা নাই। পুলিশের তদন্তের জন্য সরকার খরচা দেয়। থানাতে মামলা হওয়ার সাথে সাথে পুলিশ মামলার নথি ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে প্রেরণ করেন। পুলিশ আসামীকে গ্রেফতার করেন বা গ্রেফতারের চেষ্টা করেন। এখানেও আপনার কোন খরচা নেই। এখন আপনি বা আমি যদি মামলার আসামী হন বা হই তাহলে আপনাকে বা আমাকে আদালত থেকে জামিন নিতে হবে। ফৌজদারী মামলা জামিনযোগ্য এবং জামিন অযোগ্য হয়। জামিনযোগ্য মামলায় জামিন পাওয়াটা আপনার হক বা অধিকার। তবে জামিনঅযোগ্য মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট জামিন দিয়ে থাকেন। জামিন হলেই মামলা শেষ হয় না। ফৌজদারী মামলায় জামিন অযোগ্য হইলেও শিশু, বৃদ্ধ এবং মহিলাকে জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনের নির্দেশনা আছে। পুলিশ সাধারন মামলার তদন্তের জন্য ১২০দিন সময় পায়। ফৌজদারী মামলায় পুলিশ তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র বা ঈযধৎমব ঝযববঃ (ঈঝ) দাখিল করেন যদি অপরাধটি তদন্তে প্রমাণিত হয়। আবার তদন্তে মামলাটি প্রমাণিত না হইলে পুলিশ চুড়ান্ত রিপোর্ট বা ঋরহধষ জবঢ়ড়ৎঃ দাখিল করেন। পুলিশ তদন্ত শেষে রিপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে প্রেরণ করেন। পুলিশ যদি তদন্ত শেষে ঋরহধষ জবঢ়ড়ৎঃ বা চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন তাহলে আপনি বা আমি যদি এজাহারকারী বা বাদী হই, তাহলে পুলিশ রিপোর্টে সন্তুষ্ট না হলে কোর্টে আমরা নারাজী (চৎড়ঃবংঃ ঢ়বঃরঃরড়হ) দরখাস্ত দাখিল করতে পারি। আদালত যদি বিশ্বাস করে আপনার বা আমার কথাটি সত্য বা তথ্য প্রমাণে সত্য হলে পুলিশ চূড়ান্ত রিপোর্ট দিলেও নারাজী দরখাস্তের ভিত্তিতে অপরাধ কোর্ট আমলে নিতে পারবেন বা মামলা নিতে পারবেন।
বিচারের জন্য প্রস্তুতঃ পুলিশ রিপোর্ট এবং আসামী জামিন নিলে মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হয় কিন্তু আসামী যদি পলাতক হয়, তাহলে আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা, সম্পত্তি ক্রোক এবং সর্বশেষ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তার অনুপস্থিতিতে বিচারের জন্য প্রস্তুত করা হয়। নালিশী মামলার আদালত নালিশ গ্রহন করতে পারেন। আসামীর প্রতি সমন বা গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু করেন। আবার নালিশ যদি বিশ্বাসযোগ্য না হয় তাহলে আদালত নালিশের বিষয় সংশি¬ষ্ট থানাকে বা দায়িত্বশীল যে কোন ব্যক্তিকে কোর্ট তদন্তের নির্দেশ দেয় এবং মামলার সত্য, অসত্য নির্ণয় করেন। তারপর অপরাধ আমলে নিয়ে আসামীর প্রতি সমন বা গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু করতে পারেন। আসামী জামিন নিলে মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়।
চার্জ শুনানীঃ বিচারের প্রথম ধাপ হলে অভিযোগ শুনানী বা ঈযধৎমব যবধৎরহম। ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি ফৌজদারী মামলা থানার মাধ্যমে বা কোর্টের মাধ্যমে দাখিল হয়। থানার মাধ্যমে যে মামলা হয় তাহা পুলিশ কেস বা থানা কেস বা জি. আর (এবহবৎধষ জবংরংঃবৎবফ) কেস বা রাষ্ট্র বাদী কেস বলে। কোর্টে নালিশী দাখিলের মাধ্যমে মামলা দায়ের করলে তাকে কোর্ট কেস বলে। কোর্ট মামলায় বাদীকে সব দিনই হাজিরা দিতে হয় তবে সরকারী কর্মকর্তা হলে হাজিরা থেকে মাফ পাওয়া যায় যদি তাহা সরকারী ঈধঢ়ধপরঃু তে করা হয়। চার্জ বা অভিযোগ শুনানীর সময় বাদীকে উপস্থিত থাকতে হবে কিন্তু মামলাটি থানায় হলে বা পুলিশ বাদী হলে বাদী বা এজাহারকারীকে আদালতে উúস্থিত থাকতে হবে না। রাষ্ট্র পক্ষে পি.পি (চঁনষরপ চৎড়ংবপঁঃড়ৎ )বা এ.পি.পি (অংংরংঃধহঃ চঁনষরপ চৎড়ংবপঁঃড়ৎ) বা সরকারী উকিল চার্জ শুনানীতে অংশ নেয়। অপরদিকে আসামীপক্ষ ডিসচার্জ (অব্যাহতি) এর জন্য আবেদন করতে পারেন। উভয় পদের শুনানী শেষ হইলে আদালত চার্জ বা অভিযোগ গঠন করেন। আবার আদালত আসামীকে ডিসচার্জ বা অব্যাহতি প্রদান করতে পারেন যদি আদালতের দৃষ্টিতে এৎড়ঁহফষবংং বা ভিত্তিহীন হয়।
সাক্ষ্য গ্রহনঃ কোর্ট কেস হলে বাদীকেই সাক্ষী আদালতে হাজির করতে হয় কিন্তু পুলিশ বাদী বা থানায় মামলা হলে পুলিশ সাক্ষীকে হাজির করেন। সাক্ষী যদি স্বেচ্ছায় না আসে তাহলে আদালত সাক্ষীর প্রতি প্রথমে সমন, পরে সমনে না আসলে ডড বা ডরঃহবংং ডধৎৎধহঃ বা সাক্ষীর ওয়ারেন্ট জারীর মাধ্যমে সাক্ষী হাজিরা নিশ্চিত করতে হবে। এরপরও সাক্ষী হাজির না হলে সাক্ষীর প্রতি ঘইডড ইস্যু করে সাক্ষীর হাজিরা নিশ্চিত করতে পারে। ঘইডড হলো ঘড়হ-নধরষধনষব রিঃহবংং ধিৎৎধহঃ। এর আরো একটি অর্থ হলো সাক্ষীকে পুলিশ ধরে এনে আদালতে সাক্ষী দিতে বাধ্য করবে। কোর্ট মামলা হলে বাদীকে নিজ উদ্যেগে সাক্ষীকে আদালতে হাজির করবেন।
আসামী পরীক্ষা ঃ সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষ হওয়ার পর আসামীকে আদালত পরীক্ষা করে এবং তাকে আদালত দোষী না নির্দোষ মর্মে পুনরায় জিজ্ঞেস করে এবং সে যদি নিজেকে নির্দোষ দাবী করলে তাকে সাফাই সাক্ষী দিবে কিনা মর্মে আদালত প্রশ্ন করে। সাফাই সাক্ষী মানে আসামী নিজেকে রক্ষা বা ংধভব করার জন্য যে সাক্ষী দেয় তাকে বুঝায়।
যুক্তিতর্কঃ আসামী পরীক্ষা শেষ হইলে আসামীপক্ষের সাফাই সাক্ষী দিলে তাহা সমাপ্ত হওয়ার পর উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে যদি কোর্ট কেস হয় যুক্তিতর্ক আদালত শ্রবন করেন। পুলিশ কেস হলে আসামীপক্ষের আইনজীবি যুক্তিতর্ক শুনানী করে এবং রাষ্ট্রপক্ষে পিপি বা এপিপি সাহেব শুনানী করে।
রায়ঃ যুক্তিতর্ক শ্রবন শেষে আদালত উন§ুক্ত আদালতে রায় ঘোষনা করে। এক্ষেত্রে আইনজীবী বা বাদীপক্ষের প্রয়োজন হয় না। আসামীপক্ষের উপস্থিতিতে রায় প্রচার করা হয়। বাদী থাকলে দোষের কিছু নাই। জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট এর ভূমিকা এখানে গুরুত্ব¡পূর্ণ। আদালত সব কিছু পর্যালোচনা করে রায় ঘোষনা করে।
রায় কার্যকরঃ রায় ঘোষনার সময় আসামী যদি অনুপস্থিত থাকলে আসামীর হাজিরা নিশ্চিত করার জন্য এবং রায় কার্যকর করার জন্য আদালত গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করে। আসামীকে ধরে এনে সাজা পরোয়ানার মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে সাজা ভোগ নিশ্চিত করেন।
এবার আসি দেওয়ানী মামলার বিচারের বিষয়-দেওয়ানী মামলার স্তর গুলো হলোঃ মামলা ফাইলিং বা আরজি দাখিল/সমন জারী/জবাব দাখিল (ডঝ বা ডৎরঃঃবহ ঝঃধঃবসবহঃ)/বিকল্প পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তি করন বা অউজ বা অষঃবৎহধঃরাব উরংঢ়ঁঃব জবংড়ষঁঃরড়হ)/ বিচার্য বিষয় গঠন/৩০ ধারার তদ্বীর/এস/ডি বা ঝবঃঃষরহম উধঃব/ চ.ঐ বা চবৎবসঢ়ঃড়ৎু যবধৎরহম বা চুড়ান্ত শুনানী/ ঋ.চ.ঐ বা ঋঁৎঃযবৎ চবৎবসঢ়ঃড়ৎু ঐবধৎরহম বা পুনঃ চুড়ান্ত শুনানী/যুক্তিতর্ক/রায়/ডিক্রী/ডিক্রী কার্যকর করণ।
মামলা ফাইলিং বা আরজি দাখিলঃ দেওয়ানী মামলার মধ্যে জমিজমা, চাকুরী সংক্রান্ত, অধিকার বলবৎ করা মামলা অন্যতম। জমিজমার মামলা খুবই কঠিন। আপনি বা আমি সুনির্দিষ্ট জমি থেকে বেদখল হলে বা বেদখলের হুমকির সম্মুখীন হলে প্রথমে আমাদের উচিৎ ভালো জমিজমার মামলা বোঝে এমন একজন আইনজীবীর সাথে সাক্ষাৎ করা। কারন জমিজমার মামলার ক্ষেত্র সিএস/এসএ/ আরএস খতিয়ান/দলিল ভালভাবে বুঝতে হয়। এগুলো পর্যালোচনা করে আরজী লিখতে হয়। আরজী লিখিত হইলে সেটি সঠিক এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতের সেরেস্তাদারের নিকট দাখিল দিতে হয়। তবে এক্ষত্রে কোর্ট ফি দেওয়ার বিধান আছে। আরজীর সাথে সাথে বিবাদীর প্রতি সমন দেওয়ার নিমিত্তে সমন দাখিল করতে হয়। প্রত্যেকটি সমনের সাথে এক কপি করে আরজী দাখিল করতে হবে। আরজী দাখিলের সময় বাদী তার মামলার সমর্থনে মুল কাগজপত্র দাখিল করতে হবে।
সমন জারীঃ সমন সহ আরজী দাখিল করিলে বিবাদীর প্রতি সমন জারী করা হয়। আদালত তার প্রসেস সার্ভার দ্বারা সমন বিবাদীর প্রতি জারী করেন। প্রসেস সার্ভার বলতে জারী কারককে বুঝায়। বর্তমানে আদালত বিবাদীর প্রতি সমন জারী করার জন্য আধুনিক মাধ্যম ইমেইল/ফ্যাক্স/কুরিয়ার সার্ভিস/পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের ব্যবহার করার নির্দেশনা দিচ্ছেন। সমন জারী হওয়ায় পর জারী কারক সংশ্লিষ্ট আদালতে সমন জারী রিপোর্ট দেন।
জবাব দাখিলঃ সমনের মাধ্যমে বিবাদী যখন জানতে পারবেন তার নামে মামলা হয়েছে। সে আদালতে হাজির হয়ে তার বক্তব্য তিনি জবাবের মাধ্যমে দাখিল করেন। লিখিত জবাবকে ইংরেজীতে ডৎরঃঃবহ ংঃধঃবসবহঃ বলে। জবাব দাখিলের সময় বিবাদী তার বক্তব্যের সমর্থনে তার দলিল বা দলিল সমূহ বা তার সামগ্রিক কাগজপত্র দাখিল করবেন।
অউজ বা (অষঃবৎহধঃরাব উরংঢ়ঁঃব জবংড়ষঁঃরড়হ) বা বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তিকরণঃ বিবাদী জবাব দাখিলের পর আদালত একটি নির্দিষ্ট তারিখ ধার্য করে বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা করেন। এই স্তরে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আদালত, আইনজীবী এবং পক্ষগণের ভূমিকা থাকে। মামলার হার-জিত যাই হোক, শত্রুতা বন্ধ হয় নাই কিন্তু মামলাটি আপোষ হলে পক্ষগণের শত্রুতা বন্ধ হতে পারে। সমাজে শান্তি বিরাজ করতে পারে। যাদের সাথে আমাদের মামলা হয়, তারা আমাদের কোন না কোন ভাবে নিকট আত্মীয়, তাহলে আপোষ ইহলে সমস্যা কোথায়? তবে আপনাদের অবগতির জন্য বলি আইনজীবীরা অউজ এ উৎসাহ দেখায় না বা পক্ষকে উৎসাহিত করে না। তাদের মধ্যে ’মামলা শেষ হয়ে যাবে’’- এই ভীতি বা খারাপ চিন্তা কাজ করে।
বিচার্য বিষয় গঠন বা ইস্যু ফ্রেমিংঃ অউজ ব্যর্থ হলে আদালত আরজী এবং জবাব পর্যালোচা করে বিচার্য বিষয় গঠন করেন। এই স্তরে বাদীপক্ষের আইনজীবী এবং বিবাদীপক্ষের আইনজীবী নির্দিষ্টভাবে ইস্যু গঠন করে। আদালত আইনজীবীদের বিচার্য বিষয় গ্রহন করে বা আরজী বা জবাব পর্যালোচনা করে বিচার্য বিষয় গঠন করতে পারেন।
দেওয়ানী কার্যবিধির ৩০ ধারার তদ্বীরঃ এই স্তরে পক্ষগণ তাদের মামলা প্রমাণে কোন কিছু বাকী থাকলে সেগুলি উপস্থাপন করতে পারে। কোন জাল দলিল দাখিল করলে ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ তাহা বা বাজেয়াপ্ত করার আদেশ চাইতে পারেন। এই স্তরে কোন প্রশ্নাবলী, জবাবদান, দলিলের স্বীকৃতি, সাক্ষ্য হিসাবে পেশযোগ্য দলিল আবিস্কার, উদঘাটন, পরিদর্শন, দাখিল বা দলিলের অন্তরীন বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ন বিষয়াবলী সম্পর্কিত আদেশ আদালত নিজে থেকে বা যে কোন পক্ষের দরখাস্তের প্রেক্ষিতে আদেশ দিতে পারেন।
এস/ডি (ঝবঃঃষরহম উধঃব)ঃএই স্তরে মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহনের তালিকা প্রদান করা হয়। বাদী বা বিবাদী কোন কোন সাক্ষী দিবেন, তার তালিকা পক্ষগণ আদালতে জমা দিয়ে থাকেন। তবে এই স্তরে সাধারনত আদালত চুড়ান্ত শুনানীর জন্য তারিখ নির্ধারন করে। মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মামলা আদালত চুড়ান্ত শুনানীর জন্য নির্ধারন করে। ১০০ থেকে ১২৫ টা মামলার সাক্ষ্য স্তরে আদালত নিয়ে থাকেন। বাকী মামলা এস/ডি স্তরে আদালত রাখেন। অনেকে এই স্তরে মামলা বিচারের জন্য বা ডধরঃরহম ংঃধমব বা অপেক্ষমান স্তর বলা হয়।
চ/ঐ- চবৎবসঢ়ঃড়ৎু ঐবধৎরহম বা চুড়ান্ত শুনানীঃ এই স্তরে বাদীপক্ষ তার মনোনিত সাক্ষীদের সাক্ষ্য আদালতে উপস্থাপন করেন। সাক্ষ্য দুই রকম হয়। মৌখিক এবং দালিলিক সাক্ষ্য। মৌখিক সাক্ষ্যর সাথে সাথে দালিলিক সাক্ষা আদালত গ্রহন করে। দেওয়ানী মামলায় মৌখিক সাক্ষ্যের তুলনায় দালিলিক সাক্ষ্যের গুরুত্ব বেশী। আদালত দালিলিক সাক্ষ্য গুলি প্রদর্শনী হিসাবে আদালত গ্রহন করে। প্রদর্শনী হিসাবে আদালত না দিলে সেটিকে রায়ের সময় পর্যালোচনা করতে পারে না। সাক্ষ্য দেওয়ার সময় জবানবন্দি বা জেরা আদালত গ্রহন করে।
ঋ/চ/ঐ- ঋঁৎঃযবৎ চবৎবসঢ়ঃড়ৎু ঐবধৎরহম বা পুনঃ চুড়ান্ত শুনানীঃ এই স্তরে বিবাদীপক্ষ তার মনোনিত সাক্ষীদের সাক্ষ্য আদালতে উপস্থাপন করেন। বিবাদীর মৌখিক সাক্ষ্যর সাথে আদালত দালিলিক সাক্ষ্য গ্রহন করে। এই স্তরে বাদীপক্ষের ন্যায় সাক্ষ্য গ্রহন সমাপ্ত হয়। বিবাদীপক্ষের সাক্ষীকে বাদীপক্ষ একই রূপ ভাবে জেরা করেন। দালিলিক সাক্ষ্য আদালত প্রদর্শনী আকারে গ্রহন করেন। দালিলিক সাক্ষ্য সব সময় মুলকপি বা নকল কপি আদালতে জমা দিতে হয়। আদালত ফটোকপি কাগজপত্রের মূল্য দেয় না।
যুক্তিতর্ক শুনানীঃ সাক্ষ্য গ্রহন সমাপ্ত হলে উভয় পক্ষের আইনজীবী যুক্তিতর্ক বা সওয়াল জবাবে অংশগ্রহন করে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব ঘটনা বা সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে আদালতে আইনজীবীরা বক্তব্য দেন এই স্তরে। আইনের নির্দেশনা আদালতকে ভালভাবে বুঝায়। দেওয়ানী মামলার যুক্তিতর্কের সময় আইনজীবীরা বিজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। আইনজীবীরা তাদের মক্কেলদের বক্তব্যকে আদালতকে বুঝানোর চেষ্টা করেন।
রায় প্রচারঃ যুক্তিতর্ক শ্রবন করার পর আদালত ৭ দিনের মধ্যে রায় প্রচার করেন। আদালত হয় মামলাটি খারিজ দেয় বা মামলাটিতে ডিক্রী প্রদান করেন।
ডিক্রীঃ ডিক্রী বলতে বাদীপক্ষের রায় দেওয়াকে বুঝায়।একে আদালতের চুড়ান্ত নির্দেশনা সম্বলিত আদেশকে বুঝায়। রায় প্রচারের ৭ দিনের মধ্যে আদালত ডিক্রী লেখেন।
ডিক্রী কার্যকরকরণঃ বাদীপক্ষ যদি জমি থেকে বেদখল হওয়ার পর রায় পায়, তাহলে বাদী আদালতের মাধ্যমে উক্ত জমিতে প্রবেশ করতে পারে। বিবাদীকে দখল ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা আদালত দিলেও অনেক সময় বিবাদী স্বেচ্ছায় উক্ত জমি থেকে সরে যেতে চায় না। আদালত তাকে পুলিশের মাধ্যমে বেদখল করে বাদীকে দখল ফেরত দেন। এই ভাবে মামলার ডিক্রী কার্যকর করে আদালত।

লেখকঃ মোঃ জাকারিয়া হোসেন, ভিজিটিংস ফ্যাকাল্টি, নর্থ ওয়েস্টার্ণ ইউনিভারসিটি, সিটি ’ল কলেজ এবং বৃট্রিশ কলেজ অফ ’ল, খুলনা।