মাধ্যমিকে বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না

0
177

টাইমস ডেস্ক:
মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পরবর্তী কাসে উন্নীত করতে এনসিটিবি নতুন করে একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করেছে। তার আলোকে শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাসাইনমেন্ট করতে দেয়া হবে। এটি মূল্যায়নের মাধ্যমে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী কাসে উন্নীত করা হবে। গতকাল বুধবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ তথ্য জানান।িি শক্ষামন্ত্রী বলেন, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) প্রণয়ন করা সিলেবাস থেকে চারটি অ্যাসাইনমেন্ট এক মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। এ সিলেবাসটি এনটিসিটির মাধ্যমে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে পাঠানো হবে। শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে তা পৌঁছে দেয়া হবে। শিক্ষার্থীরা অনলাইনে বা খাতায় লিখে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে পারবে। তিনি আরও বলেন, এর বাইরে শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের বাসার কাজ দেয়া যাবে না। চার সপ্তাহে শুধু চারটি অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে শিক্ষকদের কাছে শিক্ষার্থীরা পৌঁছে দেবে। ১ নভেম্বর থেকে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেয়ার কাজ শুরু হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে একটি করে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে শিক্ষার্থী বা তার অভিভাবক সশরীরে বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে দিতে পারবেন। কেউ চাইলে অনলাইনের মাধ্যমেও শিক্ষকদের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারবেন। যদি তা সম্ভব না হয় তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে একটি ই-মেইল ঠিকানা দেয়া থাকবে, সেখানে সাপ্তাহিক অ্যাসাইনমেন্ট পাঠাতে পারবেন। সব অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার পর ধারাবাহিকভাবে শিক্ষকরা মূল্যায়ন করবেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একজন শিক্ষার্থীর তার কাস থেকে পরবর্তী কাসে যেতে যতটুকু শিখনজ্ঞান প্রয়োজন তা বিশ্লেষণ করে ৩০ দিনের এ সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি মূল্যায়ন করে সবাইকে পরবর্তী কাসে উন্নীত করা হবে। যেসব শিক্ষার্থী ভার্চুয়াল বা টেলিভিশন কাস থেকে একেবারে বঞ্চিত রয়েছে, তাদের এগিয়ে নেয়ার জন্য শিক্ষকদের মাধ্যমে ছোট ছোট দল করে সেই শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নেয়া হবে। তিনি বলেন, এরপরও যদি কেউ বঞ্চিত থাকে, তার কারণ ও তাদের কীভাবে এগিয়ে নেয়া যায় তা বিবেচনা করা হবে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে সবাইকে নতুন কাসে উন্নীত করা হবে। তাদের মধ্যে কেউ পিছিয়ে থাকলে তাদের চিহ্নিত করে বাড়তি পরিচর্যা নেয়া হবে। করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য অনলাইন ও টেলিভিশনে কাস নেয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে এ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, ইবতেদায়ি সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) এবং উ”চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। টানা সাত মাস ধরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। অবশেষে করোনা পরিস্থিতিতে মাধ্যমিকে বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না বলে ঘোষণা দিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এদিকে প্রাথমিকে সরাসরি অটো প্রমোশন দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
নবম শ্রেণিতে পছন্দমতো বিভাগ নেয়া যাবে: শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চলতি বছর ৮ম শ্রেণির জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। সবাইকে অটো পাস দেয়া হবে। এসব শিক্ষার্থীরা নবম শ্রেণিতে তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিভাগ পরিবর্তন করতে পারবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সাধারণত শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলের ভিত্তিতে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগ পেয়ে থাকেন। চলতি বছর থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য প”থক সুবিধা রাখা হচ্ছেছ। অষ্টম শ্রেণি থেকে পাস করার পর একজন শিক্ষার্থী যেকোনো বিভাগ থেকে রেজিষ্ট্রেশন করলেও অন্য বিভাগ থেকে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পাবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া আছে। মন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে এবার যারা স্থানান্তরিত হয়েছে, তারা অনলাইনে যুক্ত হয়ে অথবা নিজ নিজ জায়গা থেকে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে পারবে। তিনি আরও বলেন করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক অভিভাবক স্থানান্তরিত হয়েছেন। অনেকে ঢাকার বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী থাকলেও গ্রামে চলে গেছেন। এসব শিক্ষার্থীদের ৩০ কার্যদিবসের পাঠদান এবং অ্যাসাইনমেন্ট প্রক্রিয়া কেমন হবে সেটা নিয়ে চিন্তায় আছেন। আমরা তাদের বিষয়ে ভেবে রেখেছি। এসব শিক্ষার্থী সুযোগ থাকলে মূল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে অনলাইনে যুক্ত হবেন। আর যদি অনলাইনে যুক্ত হওয়ার সুযোগ না থাকে তাহলে যে গ্রামে বা যে স্থানে অবস্থান করছে সেখানকার স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে তার অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে পারবে। দীপু মনি বলেন, কেউ যদি তার আগের প্রতিষ্ঠান কিংবা স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে জমা দিতে না পারে তাহলে তারা আমাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে ও তাদের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে পারবে। কারণ শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে একটি মেইল দেয়া থাকবে। সেখানে ওই প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়া যাবে।
কারিগরি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে হবে : মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা বাতিল করা হলেও কারিগরির পরীক্ষা হবে। এ শিক্ষা হাতে-কলমে শিখতে হয় বলে তাদের পরীক্ষা দিয়ে পরবর্তী কাসে উন্নীত করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সাধারণ বিষয়ে পরীক্ষা ছাড়া ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব হলেও কারিগরি শিক্ষায় তা সম্ভব নয়। কারিগরি শিক্ষার্থীদের লেখার চাইতে ব্যবহারিক পরীক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। সেটি না শিখলে তাকে পরবর্তী কাসে প্রমোশন দেয়া সম্ভব হবে না। এ কারণে বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে এ স্তরের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী কাসে প্রমোশন দেয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, কারিগরি স্তরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম হওয়ায় স্বাস্থবিধি মেনে তাদের পরীক্ষা নেয়া সম্ভব। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের পরীক্ষা নেয়া বলে জানান তিনি। গত আট মাস ধরে কারিগরি-ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে আছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, দ্রুততম সময়ের ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো নেয়া হবে। এরপর তাদের মৌখিক পরীক্ষা শেষ করে ফলাফল প্রকাশ হবে। তিনি বলেন, পরীক্ষা শেষ না হওয়ায় ডিপ্লোমাধারীরা কর্মস্থলে যোগদান করতে পারছে না। দীর্ঘসময় এ পরীক্ষা স্থগিত হয়ে থাকায় তারা বিপাকে পড়েছে। তাদের কথা বিবেচনা করে পরীক্ষা আয়োজনের কাজ শুরু করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কারিগরির সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। এদিকে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পরবর্তী কাসে উন্নীত করতে এনসিটিবি নতুন করে একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করেছে। তার আলোকে শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাসাইনমেন্ট করতে দেয়া হবে। এটি মূল্যায়নের মাধ্যমে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী কাসে উন্নীত করা হবে।
অনার্সে পরীক্ষা ছাড়া ডিগ্রি নয় : শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অনার্সের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়া ডিগ্রি দেয়া ঠিক হবে না। কারণ এই ডিগ্রি নিয়ে তারা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করবেন। এ ক্ষেত্রে তাদের কর্মক্ষেত্রেও অন্যভাবে দেখা হতে পারে। এ পরীক্ষা কীভাবে নেয়া হবে তা ভেবে দেখা হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অনার্সের শিক্ষার্থীরা জানান তাদের কিছু পরীক্ষা হয়ে গেছে। কিছু পরীক্ষা বাকি। তারা অটোপাসের দাবি জানান, সার্বিক বিবেচনায় অনার্সের শিক্ষার্থীদের অটোপাস দেয়া ঠিক হবে না। তাদের পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত করা হবে নাকি অন্য কোনো পদ্ধতিতে নেয়া হবে তা ভেবে দেখা হচ্ছে। এদিকে সাধারণ বিষয়ে পরীক্ষা ছাড়া ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব হলেও কারিগরি শিক্ষায় তা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। কারিগরি শিক্ষার্থীদের খাতা-কলমে লেখার চেয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। সেটি না শিখলে তাকে পরবর্তী কাসে প্রমোশন দেয়া সম্ভব হবে না। এ কারণে বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে এ স্তরের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী কাসে প্রমোশন দেয়া হবে। কারিগরি স্তরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের পরীক্ষা নেয়া সম্ভব। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের পরীক্ষা আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি। আট মাস ধরে কারিগরি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে আছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো নেয়া হবে। এরপর তাদের মৌখিক পরীক্ষা শেষ করে ফলাফল প্রকাশ হবে। তিনি বলেন, পরীক্ষা শেষ না হওয়ায় ডিপ্লোমাধারীরা কর্মস্থলে যোগদান করতে পারছে না। দীর্ঘ সময় এ পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় তারা বিপাকে পড়েছেন। তাদের কথা বিবেচনা করে পরীক্ষা আয়োজনের কাজ শুরু করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরির সব স্তরের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণ শুরু করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক গোলাম ফারুক চৌধুরী এবং শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।