ফকির শহিদুল ইসলামঃ
মাদক সম্রাট বিপ্লব খুলনা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের পাতানো নির্বাচন করে পুনরায় নির্বাচিত হতে মরিয়া হয়ে পড়েছে। আর এই নির্বাচন সম্পন্ন করতেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করা হয়েছে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে । এমনটাই দাবি করেছেন মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের নেতারা।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির তফসিলে বর্নিত তথ্য মতে খুলনা মটর শ্রমিক ইউনিয়ন ১১১৪ এর নির্বাচন সফল করতে গত ২৩ শে জুলাই ২০১৮ইং তারিখ সাধারন সভায় গঠিত হয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। কমিটির চেয়ারম্যান হলেন খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান এবং আলহাজ্ব মোড়ল আনিসুর রহমানকে সদস্য সচিব।
এ ছাড়াও কমিটির সদস্য করা হয় কাজী এনায়েত হোসেন, আবুল কালাম আজাদ,সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস ও ২৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলী আকবর টিপুকে। এ নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গত ২৬ আগস্ট খুলনা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রি-বার্ষিক সাধারন নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেন। তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৪ই সেপ্টেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনটি পেজের তফসিলে দেখা যায় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। প্রথম পেজের স্বাক্ষরের সাথে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পেজেরস্বাক্ষরের কোন মিল নেই ।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরে এমন অমিল এর বিষয় জানতে খোঁজ নিলে জানা যায়, তিনি ব্যক্তিগত কাজে ভারত অবস্থান করছেন। তবে তফসিলে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরে কোন তারিখ উল্লেখ না থাকলেও সদস্য সচিব আলহাজ্ব মোড়ল আনিসুর রহমানের স্বাক্ষর তারিখ উল্লেখ রয়েছে । এ ছাড়াও চার সদস্যদের মধ্যে শুধু তারিখ বিহীন স্বাক্ষন করেন কাজী এনায়েত হোসেন এবং সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস। বাকী দুই সদস্য আবুল কালাম আজাদ ও কাউন্সিলর আলী আকবর টিপুর কোন স্বাক্ষর তফসিলে নেই । এতে প্রতিয়মান হয় যে আগামি ১৪ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ইং তারিখ খুলনা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রি-বার্ষিক সাধারন নির্বাচনটি পাতানো নির্বাচন। এসব অভিযোগ করেন শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রি-বার্ষিক সাধারন নির্বাচনের সভাপতি প্রার্থী ইলিয়াছ হোসেন সোহেল ও সাধারন সম্পাদক প্রার্থী শেখ আলী আহমেদ ।
এই পাতানো নির্বাচন বাতিল পূর্বক পুনরায় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন ও খুলনার শীর্ষ মাদক সম্রাট জাকির হোসেন বিপ্লব ও সোনাডাঙ্গা বাসটার্মিনাল এলাকার চিহিৃত সন্ত্রাসী ক্রস ফায়ারে নিহত শীর্ষ সন্ত্রাসী হিরুর শ্যালক রাজুকে গ্রেফতারের দাবি জানায় এই নেতারা।
এ ছাড়াও ইলিয়াস হোসেন সোহেল জানান, আমরা শুধু নির্বাচন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি আমাদের নেতা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি সেন্টু হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও হত্যা মিশনের পরিকল্পনার সাথে সংশ্লিষ্ঠদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবী জানিয়ে আসছি । তিনি বলেন নিউ মার্কেট এলাকার রফিক ওরফে মুরগী রফিককে গ্রেফতার করলেই বেরিয়ে আসবে সেন্টু হত্যায় কার কি ভুমিকা ছিল? এছাড়া সেন্টু হত্যা মামলায় জড়িত আছে ভাইগ্না বাপ্পী, লজিন মাষ্টার, রানা, জালাল এর নাম শোনা যায়।
সেন্টু নিহত হলে তার মেয়ে পিতার পোস্টমোর্টাম করতে চাইলে সেন্টুর কন্যাকে তার মা মনিরা ও মনিরার প্রেমিকা খুলনার শীর্ষ মাদক সম্রাট জাকির হোসেন বিপ্লব বাঁধা দেন এবং তাকে নির্জনস্থানে নিয়ে প্রানে মেরে ফেলার হুমকি দেয় । সেন্টু হত্যার মোটিভ উদ্ধারে রফিক@মুরগী রফিককে আটক করা হলে শীর্ষ মাদক সম্রাট জাকির হোসেন বিপ্লবের অনেক লোমহর্ষক তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে তিনি জানান । মানব বন্ধনে বক্তব্য রাখেন ইলিয়াস হোসেন সোহেল, শেখ আলী আহম্মেদ, শরীফ আহমেদ মোল্লা, শেখ নাজমুল হাসান, মোল্ল্যা সাইদুর রহমানসহ নেতৃবৃন্দরা ।
একদিকে বিপ্লবের পাতানো নির্বাচন অন্যদিকে বিপ্লবের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মটর শ্রমিক ইউনিয়নের প্রয়াত সভাপতি সেন্টুর ভাই সুইট শেখ। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে ২০ আগস্ট আর্জি জমা দেন তিনি। আতংকিত সুইট জানায়, সেন্টু হত্যা মামলায় মূল অভিযুক্ত সেন্টুর স্ত্রী মনিরা ও বিপ্লব। নিজেদের অবৈধ সম্পর্ক ও সেন্টুর অঢেল সম্পত্তি হাতিয়ে নিতেই পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয় সেন্টুকে। জানা গেছে, ২০০৪ সাল থেকে খুলনা মাটরশ্রমিক ইউনিয়নরে সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করে আসছে এই বিপ্লব। রাজনৈতিক পরিচয়ে তিনি শ্রমিক দলের খুলনা মহানগর যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথেই ভোল পাল্টে যোগ দেন শ্রমিক লীগে, নগর কমিটির সদস্য হন। গোয়েন্দো তথ্যমতে, মাদক ব্যবসা ও বাস টার্মিনালের নিয়ন্ত্রন রাখতেই এই দলবদলের পালা বিপ্লবের। দিনপ্রতি লাখ টাকা চাঁদাবাজি করেন এই সেক্টর থেকে। নিজের ও পরিবারের নামে-বেনামে গড়েছেন প্রায় শত কাটি টাকার সম্পত্তি। আর এই শত কাটি টাকার সম্পত্তি ও নিজের অধিপত্ত বজায় রাখতেই অঢেল পরিমান টাকা খরচ করে আয়োজন করছে এ পাতানো নির্বাচন । যাতে করে তিনি সহজেই বাঁধাহীন ভাবে পুঃনরায় খুলনা মটরশ্রমিক ইউনিয়নরে সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন।
আরও জানা গেছে, বিপ্লব বাহিনীর প্রথম সাড়ির ক্যাডাররা হলেন, রফিকুল, জাহিদ, আলম, বাবা আলী, বাংলা রানা, চোপড়া ফারুক, বিল্লাল, আজিজ, আশরাফুল, ফানটু দুলাল অন্যতম। এসকল ক্যাডারদরে নিয়ন্ত্রন করছে বিপ্লব পুত্র ঐশি। বাস টার্মিনালকে কেন্দ্র করে গত একযুগ ধরে বিপ্লব মাদকের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সকল প্রশাসনসহ পুলিশের অসাধু কর্তারা তার এই ব্যবসায় মাসোয়ারা নিয়ে অব্যাহত সহযোগিতা চালিয়ে আসছে বলে জানা যায়।