মাদক নির্মূলে খুলনায় ‘ক্র্যাশ’ অপারেশন শুরু

0
620

কামরুল হোসেন মনি : ‘জঙ্গীবাদ দমনের মতো মাদক নির্মূলেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে’- সম্প্রতি র‌্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী দরবারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণার পরই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নড়েচড়ে বসেছে। মাদক স্পট গুঁড়িয়ে দিতে ও ব্যবসায়ীকে ধরতে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বিশেষ অভিযান শুরু করেছে।

পক্ষকালব্যাপী এ অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ অপারেশন। অভিযানে প্রথম ও ২য় দিনে এ অভিযানে মদ, বিয়ার, গাঁজা ও মাদক সেবনের সরঞ্জামসহ ৮ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছেন। এর মধ্যে ৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা প্রদান করা হয়। সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খুলনার বিভিন্ন স্থানে এ অভিযান চালানো হচ্ছে।

জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, মাদক নির্মূলে গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ দিনব্যাপী বিশেষ অভিযান শুরু করেছেন। প্রথম ধাপে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর অভিযান চলবে। এরপর ১-২ দিন গ্যাপ দিয়ে আবারও সপ্তাহব্যাপী অভিযান চলবে। পক্ষক্যালব্যাপী এ অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ অপারেশন।

সূত্র মতে, সংস্থার উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে ‘ক’, ‘খ’ গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত বিশেষ টিম মাদক নির্মূলে দিনব্যাপী ১৫ দিনের বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিশেষ অভিযানের (ক্র্যাশ প্রোগ্রাম) প্রথম ধাপে এ অভিযানে রূপসা থানাধীন রিসোর্ট সেন্টারে অভিযান চালান। অভিযানে রিসোর্টের মালিক কামরুজ্জামান কামরুল ও ম্যানেজার মোঃ বাহার উল্লাহকে ৩১ বোতল হুইস্কি, বিদেশি বিয়ার ও সিসা খাওয়ার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। আটক মদ ও বিয়ারের মূল্য ৩৮ হাজার টাকা।

একই দিনে নগরীর টুটপাড়ায় অভিযানে ওই এলাকার বাসিন্দা মোঃ তুহিন হাওলাদারের পুত্র মোঃ তানভির হাওলাদারকে ইয়াবা খাওয়ার সরঞ্জামসহ আটক করেন। পরবর্তীতে জেলাপ্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মিজানুর রহমান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আটক তুহিনকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

২য় দিনে অভিযানে শুক্রবার দিনব্যাপী বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এই দিনে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানা ও খানজাহান আলী থানাধীন পৃথক এলাকায় দিন-রাত অভিযানে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাজা ও মাদক সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধারসহ ৫ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হচ্ছে সোনাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মোঃ নয়ন শেখের স্ত্রী বিথি (১৯), ছোট বয়রা মুক্তারুন নেছার ভাড়াটিয়া মোঃ আব্দুর রশিদ তালুকদারের পুত্র মোঃ শহিদুল ইসলাম রাজু (৪০), সাজ্জাদুর রহমানের স্ত্রী ইশরাত জাহান স্মৃতি (১৮), সুমন মুন্সী (৩৫) ও মোঃ আলাল (২১)।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এদের মধ্যে বিথিকে মাদক সেবনের দায়ে ৪ হাজার টাকা জরিমানা, ১০ পিস ইয়াবা পাওয়ায় ইশরাত জাহান স্মৃতিকে এক বছর বিনাশ্রম কারাদ- এবং সুমন ও আলালের কাছে ১০ গ্রাম গাঁজা ও মাদক সেবনের দায়ের দুইজনকে ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করা হয়। এছাড়া ৩ বোতল ফেনসিডিলসহ প্রাইভেট চালক মোঃ শহিদুল ইসলাম রাজু বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। জেলাপ্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মিজানুর রহমান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেল-জরিমানা প্রদান করেন।

 

 

 

সূত্র বলছে, অন্যান্য মাদকের চেয়ে ইয়াবার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। মাদক হিসেবে ইয়াবার পরের অবস্থান ফেনসিডিলের। মাঝখানে ফেনসিডিলের চাহিদা কমে গেলেও নতুন করে ফেনসিডিলের ব্যবহার বেড়েছে। ইয়াবা এবং ফেনসিডিল এই দুটি মাদকই আসে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার ও ভারত থেকে। মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসার একমাত্র রুট হলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার। আর ভারত থেকে ফেনসিডিল প্রবেশ করে যশোর, দিনাজপুর হিলি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফেনি, কুমিল্লা, ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্ত দিয়ে। এসব এলাকায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করতে পারলে মাদক ঢোকা অনেকটা কমে যাবে। মাদকের সরবরাহ কমে গেলে সেবনও কমে যাবে অনেকাংশে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মিজানুর রহমান শুক্রবার রাতে এ প্রতিবেদককে বলেন, মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের আটক করে জেল-জরিমানা দিয়েই বসে থাকলে হবে না। মাদকের কুফল সম্পর্কে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে তুলে ধরতে হবে। প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামজে খুতবার সময় মাদকের কুফল সম্পর্কে তুলে ধরে  সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এটা বুঝতে পারলেই অনেকেই এ পথ থেকে ফিরে আসতে শুরু করবে বলে তিনি আশাবাদী।

জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান এ প্রতিবেদককে বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ দিনব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পক্ষক্যালব্যাপী এ অভিযানে নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’। দিন-রাত বিভিন্ন স্থানে এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর একটানা অভিযান চলবে। শুক্রবারও অভিযানে চলেছে। তিনি বলেন, গত ২ দুই দিনে মদ, ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা ও মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধারসহ ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা ও কয়েকজনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হচ্ছে।

৩য় দিনের অভিযান : জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে গঠিত বিশেষ টিম মাদক নির্মূলে ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ অভিযানের ৩য় দিনে (২২ সেপ্টেম্বর) শনিবার নগরীর মিস্ত্রিপাড়া এলাকায় গোয়েন্দা পরিদর্শক পারভীন আক্তার অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় ইয়াবা সেবন করার সময় ওই এলাকার বাসিন্দা মান্নানের স্ত্রী আশা বেগম (৩০) ও নূর মোহাম্মদ গোমচার কন্যা খাদিজা আক্তার রিয়া (২১)কে হাতেনাতে আটক করেন। অপর অভিযানে দৌলতপুর থানাধীন এলাকায় আলম শেখকে ইয়াবা সেবন করার সময় আটক করে। আটককৃতদের কাছ থেকে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে আশা বেগম ও খাদিজা আক্তার রিয়া এবং আলম শেখকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ৬ মাসের কারাদ-। এছাড়া জালাল মোল্লাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এদের কাছ থেকে মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মিজানুর রহমান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মাদকদ্র্রব্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অভিযান অব্যাহত ছিলো।
জেলাপ্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযানে উপস্থিত ছিলেন জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ আবুল হোসেন, সহকারী পরিচালক শিরিন আক্তার, উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান, পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন, হাওলাদার সিরাজুল ইসলাম, গোয়েন্দা পরিদর্শক পারভিন আক্তার, উপ-পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন, কেএম হানিফ, পেশকার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন ও এপিবিএন এর সদস্যরা।

শনিবার রাত ৮টায় উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, এ পর্যন্ত ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মিজানুর রহমান ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে তিনজনকে ৬ মাস করে সাজা প্রদান এবং একজনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রয়েছে